Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
World Environment Day 2019

সব ডিম এক বারে চাই, তাই হাঁস মারলে ক্ষতি কী!

পরিবেশ দিবসে তাই প্রাথমিক প্রশ্ন যেটি মানুষের মনে বেজে ওঠা উচিত, ‘পৃথিবী কি একা মানুষের?’

পরিবেশ থেকে বেহিসেবি লুঠ করলে হবে না।

পরিবেশ থেকে বেহিসেবি লুঠ করলে হবে না।

বিভাস রায়চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৯ ০০:০৭
Share: Save:

পরিবেশ দিবস প্রতি বছর যেই আসে, একটা ধুমধাম শুরু হয়ে যায় চার দিকে। কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকারের তরফে প্রচারিত হয় নানা বিজ্ঞাপন। দফতরে দফতরে সেমিনার। সরকারি কর্তাব্যক্তিদের ভাল ভাল ভাষণ, যা আসলে লিখে দিয়েছে রুটিনমাফিক অন্য কেউ। রাজনৈতিক দলের নেটওয়ার্কে থাকা শত শত সংঘ শামিল হয় পরিবেশ বিষয়ক নানা অনুষ্ঠানে।

সব‌ই একটা পালনের অভ্যাস মাত্র। অর্থাৎ সারা বছর ধরে যে যে দিবস পালনের জন্য ঘোষিত, তা পালন করা শুধুই এক ধরনের অনুষ্ঠান। কিন্তু মানব জীবনে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিবেশ। এই জগতের অন্য প্রাণীদের জীবনে‌ও। অন্য প্রাণীরা এই পৃথিবীকে জোর করে বদলানোর চেষ্টা করেনি কোনও দিন। মানুষ নিজস্ব সভ্যতা নির্মাণ করেছে। এই পৃথিবীর মধ্যে সে তৈরি করেছে মানুষ দ্বারা পরিচালিত একটা আলাদা পৃথিবী। এবং তা করতে গিয়ে অহরহ তাকে নিধন করতে হয়েছে প্রকৃতিকে। অর্থাৎ মানব সভ্যতা কখনওই প্রকৃতিকে মেনে চলেনি, প্রকৃতির ইঙ্গিত বুঝতে চায়নি সে। সব সময় প্রকৃতিকে বশ করে নিজের মুঠোর মধ্যে নিতে চেয়েছে।

মানব সভ্যতা আধুনিক পর্বে এসে এত বিস্তীর্ণ এবং জটিল হয়ে গিয়েছে যে, প্রকৃতির সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে দ্বন্দ্ব চলছে। মানব-অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যে পরিবেশ জরুরি, মানুষের সর্বগ্রাসী মানসিকতায় সেই পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে প্রায়। বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট ভাবেই জানাচ্ছেন যে, এই ভাবে চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে।

চলছে নির্বিচারে গাছ কাটা।

আরও পড়ুন: কা থাকা মহিলাদের খুঁজে বার করে খুন, কালনার সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে কী বলছেন মনোবিদরা?

কিন্তু মানুষের কি কোনও হুঁশ ফিরছে? ফিরছে না। তার কারণ অতীতে যে মানুষেরা প্রকৃতির সন্তান হিসেবে বেঁচে থাকত, প্রকৃতির নানা রহস্যে অভিভূত থাকত এবং প্রকৃতির মধ্যে পরম শক্তিশালী এক শক্তিকে অনুভব করতে পেরে গাছ নদী ইত্যাদিকে ঈশ্বরজ্ঞানে পূজা করত, সেই মানুষ আজ নিজেকে পৃথিবীর মালিক মনে করে। দৃষ্টিটাই পালটে গিয়েছে। মানবসভ্যতা বর্তমানে জটিল। ভোগবাদী সমাজের বাইরের চটক বা সুখানুভূতি ক্রমশ গ্রাস করেছে প্রায় সর্বস্তরের মানুষকে। কোনও না কোনও ভাবে ভোগবাদী সমাজের সমর্থক হয়ে গিয়েছে প্রায় সকলেই। একাংশের হাতে সব সম্পদ, বাকিরা ক্রীতদাস, কিন্তু ভোগবাদের মোহে গোলামেরাও আচ্ছন্ন। সবাই ভোগের দৃষ্টিতে পৃথিবীকে দেখছে। বদলে গিয়েছে তার অতীতের বিস্ময়-দৃষ্টি, ভালবাসার দৃষ্টি। চারপাশের অন্যান্য প্রাণী, যারা প্রকৃতির অংশ, তাদেরকে শেষ করে দিতে পিছপা হচ্ছে না মানুষ। বিদ্যুতের জন্য শোষিত হচ্ছে সারা পৃথিবীর নদী। বাসস্থান-পথঘাটের জন্য কাটা পড়ছে কোটি কোটি গাছ। জনসংখ্যার কারণে আবাসন সমস্যায় জর্জরিত মানুষ বুজিয়ে ফেলছে সব জলাশয়। এই পৃথিবীকে মানুষ সম্পত্তি বলে মনে করছে।

মানুষ বুজিয়ে ফেলছে সব জলাশয়।

পরিবেশ দিবসে তাই প্রাথমিক প্রশ্ন যেটি মানুষের মনে বেজে ওঠা উচিত, ‘পৃথিবী কি একা মানুষের?’ ছিল আগুনের লাভা, ছিল ঝড় বাতাস, ছিল জল। জলের মধ্যে জন্মাল প্রথম প্রাণ এককোষী উদ্ভিদ। অনেক সময় পর এককোষী প্রাণীর উদ্ভব। এককোষী প্রাণী থেকে অজস্র প্রাণের রূপান্তরের মধ্য দিয়ে আজকের মানুষ। উদ্ভিদ প্রথম প্রাণ— এই চোখেই দেখা উচিত সমস্ত বৃক্ষকে। ভালবাসার চোখে, কৃতজ্ঞতার চোখে দেখা দরকার। প্রয়োজনীয় স্বার্থের চোখে দেখলেও মানুষের বোঝা উচিত গাছ অক্সিজেন দেয় বলেই মানুষ বেঁচে থাকতে পারে, গাছ মানুষের অস্তিত্বের বন্ধু। রাস্তা বা উড়ালপুল অন্য দিকে করা যায়, কিন্তু কোনও মূল্যেই খুন করতে নেই শতবর্ষী হাজার বৃক্ষকে। বারংবার ভেবে দেখা দরকার। মানুষের খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য উদ্ভিদ জগৎ, প্রাণীজগৎ প্রাণ বিসর্জন দেয়, তাই কৃতজ্ঞতার চোখেই তাদের দিকে তাকাতে হবে, বেহিসেবি লুঠ করলে হবে না। এই পৃথিবী যে সবার।

ইকো-সিস্টেম তো আসলে পারস্পরিক ভালবাসার, দেওয়া-নেওয়ার এক খেলা। অন্য কোনও প্রাণী নয়, ইকো-সিস্টেম ধ্বংস করেছে কেবল মানুষ। এখন বাতাসে বিষ, জলে আর্সেনিক, খাদ্যে বিষ, সমুদ্রে প্লাস্টিক। মানুষ বিপন্ন। ব্যবসায়ী মাফিয়াদের ভোগবাদী লোভ এবং তাৎক্ষণিক লাভ লুঠে নিচ্ছে পাহাড় থেকে পাতাল, অরণ্য থেকে সুন্দরী ঝরনা। রাষ্ট্র উদাসীন। দেশ জুড়ে এত বড় নির্বাচনে কত রকমের খাই-খাই রব উঠল, এক বার‌ও কি কেউ পরিবেশ-বিপন্নতা, প্রকৃতি লুঠ নিয়ে কথা বলল? মনটাই যে আসল। রবীন্দ্রনাথের মন চায়— ‘ধরণীর তলে গগনের গায়/ সাগরের জলে, অরণ্য-ছায়/ আরেকটুখানি নবীন আভায়/ রঙিন করিয়া দিব।’

এখন বাতাসে বিষ, জলে আর্সেনিক, খাদ্যে বিষ, সমুদ্রে প্লাস্টিক।

আরও পড়ুন: এই সব খাবার খেলে মৃত্যুও হতে পারে?​

আর আমরা কী চাই? পৃথিবীকে সুন্দরতর করা নয়, আমরা চাইছি পেট চিরে সব ডিম একবারে বার করে নেওয়ার মূর্খ অভিলাষে হাঁসটিকে মেরে ফেলতে। হায় রে মানুষ!

অন্য বিষয়গুলি:

World Environment Day 2019 Nature Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy