ক্যানসারের মতো মারাত্মক অসুখকে বশ করতে অত্যন্ত কার্যকর কেমোথেরাপি। ছবি: শাটারস্টক।
‘আমি পারি, আমি পারব।’
ভাবছেন, কী পারব? ক্যানসারকে দূরে সরিয়ে রাখতে আর আক্রমণ করলে চোখে চোখ রেখে পাল্টা আক্রমণ করতে। আজ ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবসে এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা। সত্যি কথা বলতে কি, ক্যানসার মানেই যে মৃত্যুর দিন স্থির হয়ে যাওয়া তা কিন্তু নয়। কোনও সমস্যা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে রোগটাকে প্রথম দিকেই নির্মূল করে দেওয়া যায়।
ক্যানসারের মূলত তিন ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। স্টেজ ১-এ রোগ ধরা পড়লে সার্জারি করে ক্যানসার সমূলে বিনাশ করা যায়। কিন্তু অসুখ ছড়িয়ে পড়লে কেমোথেরাপি, সার্জারি ও রেডিওথেরাপির সাহায্য নেওয়া দরকার হয়।
কেমোথেরাপিতে ক্যানসারের কোষ ধ্বংসকারী ওষুধ রক্তের মাধ্যেমে শরীরে প্রবেশ করে। এই ওষুধ দ্রুত বেড়ে ওঠা ক্যানসার কোষকে বিনষ্ট করার পাশাপাশি রক্তের শ্বেত কণিকাকেও বিনষ্ট করে দেয়। শ্বেত রক্তকণিকা কমে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ছাড়া আরও কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। তাই কেমো নেওয়ার পর নানা শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। তবে এই কেমোর অনেক ভাল দিক ও প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। ভাল-র পাল্লাই ভারী।
আরও পড়ুন: বিশ্ব ক্যানসার দিবস: প্রতি দিনের অভ্যাসে এ সব পরিবর্তন আনুন, ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই সহজ হবে
দিনে কেমোথেরাপি
ব্লাড ক্যানসার-সহ বেশির ভাগ ক্যানসার কোষ বিনষ্ট করতে কেমোথেরাপির সাহায্য নেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইন্টারভেনাস কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওরাল কেমোথেরাপির সাহায্যও নেওয়া হয়। দিনের বেলা রোগীকে ভর্তি করে এই চিকিৎসা করা হয়। অ্যাকিউট লিউকিমিয়া ও অন্যান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে অনেক সময় দরকার হলে রোগীকে কয়েক দিন ভর্তি থাকতে হতে পারে। নির্দিষ্ট ওষুধের সাহায্যে ক্যানসার কোষের পরিমাণ একেবারে কমিয়ে ফেলা হয়। এর পর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাকি ক্যানসার কোষগুলিকে মেরে ফেলে। ক্যানসার আটকে দেওয়ার পাশাপাশি সুস্থ থাকার মেয়াদ বাড়াতে এবং প্যালিয়েশন অর্থাৎ অসুখের কষ্ট কমাতেও কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।
কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কেমোথেরাপির পর অনেক সময় বমি বা বমিবমি ভাব থাকতে পারে। খাবারে রুচি চলে যায়। সাময়িক ভাবে স্বাদ-গন্ধের বোধ চলে যায় বলে খেতে ইচ্ছে করে না। সংক্রমণ ও জ্বরের প্রবণতা বাড়ে, মুখে ঘা হতে পারে। কখনও মুখ শুকিয়ে যায়। ফলে কথা বলা ও খাওয়াদাওয়ার সমস্যা হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ‘জেরোস্টোমিয়া’। মুখের অভ্যন্তরের লালাগ্রন্থির কাজ কিছুটা ব্যহত হয় বলে মুখের লালা নিঃসরণ কমে যায়। তাই খাবার গিলতে কষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জল পানের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি শরবত, টাটকা ফলের রস বার বার খেতে হবে। বমি কমাতে বমির ওষুধ, খাবারে রুচি ফিরিয়ে আনতে অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার খাওয়া দরকার। মুখে ঘা হলে অ্যান্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করে সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অতিরিক্ত গরম চা, কফি, ঝাল ও মশলাদার খাবার এই সময় না খাওয়াই ভাল। কেমোথেরাপি চলাকালীন চুল ঝরে যায়। পরে অবশ্য পুনরায় চুল গজায়। এই সময় মন খারাপ হলে কৃত্রিম চুল লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দূর করতে নিকট জনদের রোগীর পাশে থাকা একান্ত দরকার।
আরও পড়ুন: ককটেল ইঞ্জেকশন নিয়ে চলছে গবেষণা, করোনাভাইরাস ঠেকাতে মেনে চলুন এ সব
টার্গেটেড থেরাপি
ইদানীং টার্গেটেড থেরাপির সাহায্যে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট ওষুধ শুধুমাত্র ক্যানসার কোষগুলিকে ধ্বংস করে। তাই এই থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলক ভাবে খুবই কম। আবার ইমিউনোথেরাপির সাহায্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যানসার কোষ আটকে দেওয়ার প্রচেষ্টাও যথেষ্ট সফল। এই চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে অনেক ধরণের ক্যানসারই প্রতিরোধ করা যায়। সিগারেট, বিড়ি-সহ যে কোনও ভাবে তামাকজাত নেশা বন্ধ করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে, রোজকার ডায়েটে টাটকা শাকসব্জি, ফল, গ্রিন টি, রসুন, টাটকা মাছ খেয়ে ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়। কোনও রকম সন্দেহ হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রাথমিক স্তরেই ক্যানসার নির্ণয় করা গেলে সহজেই রোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি মেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy