Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

কোভিড-১৯ আক্রান্ত বা লক্ষ্মণযুক্ত মায়ের নবজাতক শিশুর যত্ন নেবেন কী ভাবে

হাসপাতালে থাকার সময় যেন এক-দু’জন বিশেষ ব্যক্তি ছাড়া শিশুটিকে অন্য কেউ স্পর্শ না করে।

ছবি সৌজন্য শাটারস্টক।

ছবি সৌজন্য শাটারস্টক।

নিশান্তদেব ঘটক
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৩৭
Share: Save:

পৃথিবী জুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গেই করোনার ছোবল থেকে রক্ষা নেই সন্তানসম্ভবা মায়েদেরও। সন্তান হওয়ার ঠিক আগেই মা যদি আক্রান্ত হয়ে পড়েন কোভিড-১৯-এ, হিসাব যেন বদলে যায় খুব দ্রুত। নয় মাস ধরে তিলে তিলে লালন করা স্বপ্নগুলো যেন ভেঙে যায় এক মুহূর্তে। শিশুটির পরিচর্যার বিষয়ে তখন ডাক্তারবাবুদের দেখানো পথ ছাড়া একচুলও বাইরে যাওয়ার উপায় থাকে না। কারণ সবসময়েই তো সেই ভীতি তাড়া করে বেড়ায় যে শিশুটির শরীরে এই ভাইরাস মায়ের শরীর থেকে চলে যাবে না তো ? চিনের এক গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এক বছরের নীচে আক্রান্ত হয়েছে ১১.৮ শতাংশ শিশু। কিন্তু কারও মৃত্যুর খবর নেই। তবে এদের ইমিউনিটি বড় বাচ্চাদের তুলনায় কম থাকার কারণে রোগের তীব্রতা বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে মাত্র দু’দিনের মাথায় এক সদ্যোজাতের শরীরে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে।

কী কী সাবধানতা নেবেন নবাগতের পরিচর্যায়?

মা যখন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত বা লক্ষণ আছে, কিন্তু টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি, অথবা শুধুই এই রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তখন এই সাবধানতাগুলি নিতে পারলে মায়ের শরীর থেকে বাচ্চার শরীরে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই কম হতে পারে।

• শিশুটিকে জন্মের ঠিক কিছুটা পরে, পরিস্থিতি যখন স্থিতিশীল তখন হাল্কা হাত সওয়া গরম জলে চান করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে স্পর্শের মাধ্যমে যদি মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে এই ভাইরাস গিয়েও থাকে তা পরিষ্কার হয়ে যায়।

• জন্মের ঠিক পরেই মায়ের থেকে সদ্যোজাতকে একটু আলাদা রাখাই ভাল। আর পাঁচটা ডেলিভারির সময় যেখানে শিশুটিকে মায়ের পাশেই দিয়ে দেওয়া হয়।

• যদি মা চান যে তাঁর শিশুটি তাঁর সঙ্গেই থাকুক অথবা মা ও শিশুকে আলাদা ভাবে পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি না থাকে তবে সে ক্ষেত্রে দু’জনকেই এক ঘরে রাখা যেতে পারে। কিন্তু দু’জনের মধ্যে অন্তত ছয় ফুটের ব্যবধান যেন অবশ্যই থাকে, মা ও শিশুর মাঝে মোটা পর্দা থাকলে ভাল হয়।

• সদ্যোজাত শিশুটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলায় মায়ের দুধের বিশেষ ভূমিকা আছে। তাই এমন এক পরিস্থিতিতে ‘হু’, সিডিসি— সবাই‌ সওয়াল করেছেন মায়ের দুধের পক্ষেই। তাই এক্সপ্রেস করে অন্য কেউ শিশুটিকে এই দুধ খাইয়ে দিতে পারেন। কিন্তু তার আগে মায়ের হাত আর স্তন যেন খুব ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়া হয়। দুধ এক্সপ্রেস করার কাজে ব্রেস্ট পাম্প প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে। সরাসরি শিশুটিকেও মাতৃস্তন পান করানো যেতে পারে যদি মা ঠিক ভাবে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে, মুখে মাস্ক পরে, গাউন গায়ে দিয়ে খাওয়ানোর মতো অবস্থায় থাকেন। আর সরাসরি সন্তানকে স্পর্শ না করে কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ করাই শ্রে়য়। মায়ের থেকে বাচ্চার শরীরে সংক্রমণ এল কিনা দেখার জন্য প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নাক ও মুখ থেকে লালারসের নমুনা পাঠাতে হয় পরীক্ষার জন্য। আর দ্বিতীয়টা পাঠাতে হয় ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে। এ ছাড়াও উপযুক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে মলদ্বার থেকে নমুনাও পাঠানো যেতে পারে।

ছবি: শাটারস্টক

আরও পড়ুন: হৃদরোগীদের করোনা-হানার ভয় কতটা? সুস্থ থাকতে কী কী করবেন?

আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্কে ভুগছেন? মন শান্ত রাখুন এ সব উপায়ে

• হাসপাতালে থাকার সময় যেন এক-দু’জন বিশেষ ব্যক্তি ছাড়া শিশুটিকে অন্য কেউ স্পর্শ না করে। হাসপাতালে বা বাড়িতে ষাটোর্ধ্ব কোনও ব্যক্তিকে শিশুটির দেখভালের দায়িত্ব না দেওয়াই ভাল।বাড়িতে ফেরার পরও খুব সতর্ক থাকতে হবে। হাত না ধুয়ে বা বাইরের জামাকাপড়ে শিশুটিকে কেউ যেন স্পর্শ না করে। মুখমণ্ডলের খুব কাছে কেউ মুখ নিয়ে যেন না যান। মুখমণ্ডলে চুমু না খাওয়াই ভাল। শিশুটিকে দেখার জন্য আত্মীয়পরিজন বা প্রতিবেশীদের ভিড় এড়িয়ে চলাই ভাল।সদ্যোজাতদের চোখ অনেক সময়েই সকালবেলা জুড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে সরাসরি হাত না লাগিয়ে কিছু তুলোর টুকরো গরম জলে ফুটিয়ে পরিষ্কার করতে সেগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে।

• শিশুটির শরীরে ভাইরাসের অস্তিত্ব যদি না পাওয়া যায় তবে আর পাঁচটা শিশুর মতো তাকেও ভিটামিন-ডি ও মাল্টিভিটামিন ড্রপ দিতে হবে।

• মা কখন শিশুটির যত্ন নিজে নিতে পারবেন সে প্রশ্নে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স খুব পরিষ্কার পরামর্শ দিয়েছেন। যদি মায়ের শরীরে গত ৭২ ঘণ্টা (জ্বরের ওষুধ ছাড়াই) জ্বর না আসে। যদি মায়ের শরীরে প্রথম লক্ষণ দেখা দেওয়ার সময়সীমা সাত দিন পেরিয়ে যায়। আর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে হওয়া দু’টি পিসিআর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তা হলে মাকে মোটামুটি রোগমুক্ত ধরা হয়। তখন তিনি শিশুটির কাজগুলি করতে পারবেন।

কোনও কারণে শিশুটিকে যদি আইসিইউ-তে রাখার প্রয়োজন হয় তা হলে তার পরিচর্যা হবে একটু অন্য ভাবে।

(লেখক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ)

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy