উদ্বেগ কমাতে ডার্ক চকোলেট, কাঠাবাদাম, চিজ খান পরিমাণ মতো। ছবি: শাটারস্টক থেকে নেওয়া
কোভিড হবে কি না, হলে কী হবে? চাকরি থাকবে কিনা, ব্যবসা চলবে কি না, প্রিয় জন সুরক্ষিত কি না, ইত্যাদি চিন্তায় উড়ে গেছে রাতের ঘুম৷ চিন্তা করে সমাধান মিলবে না জানার পরও উদ্বেগ কমছে না৷ চিকিৎসকরা যোগাভ্যাস, মেডিটেশন করতে বলছেন৷ উদ্বেগ নিয়ে বসে থাকলে মাস ছয়েকের মধ্যে জিএডি বা জেনারেলাইজ়ড অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার হতে পারে এমনও বলছেন অনেকেই, তখন তাকে সারাতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে, কিন্তু উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে আগের মতোই। বরং ভয় বাড়ছে, আবার জিএডি হবে না তো!
উদ্বেগের বিপদ এটাই, মানুষ দিনে দিনে এত নেতিবাচক হয়ে পড়েন যে বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তাঁর যা হবে, সব খারাপই হবে৷ ‘ভাল’-র মধ্যেও ‘খারাপ’ খুঁজে বের করেন৷ চেনা ছকের বাইরে কিছু এলে সামলাতে পারেন না৷ শান্তিতে থাকতে পারেন না৷ ভুল সিদ্ধান্ত নেন৷ খিটখিট করেন, খুঁতখুঁত করেন৷ পরের পর্যায়ে গ্রাস করে চরম অস্থিরতা, অমনোযোগ, দুঃখ, আতঙ্ক, অনিদ্রা৷ ফলে এক সময় আর স্বাভাবিক ভাবে মস্তিষ্ক কাজ করে না৷ এ সময় কিছু শারীরিক উপসর্গও হয়৷ যেমন, গা-বমি, মাথা ব্যথা, হাত-পা কাঁপা, বুক ধড়ফড়, বুকে যন্ত্রণা৷ জীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায়৷ তাঁর সঙ্গে পরিবারের অন্যদেরও৷ কাজেই নিজের বা অন্য কারও মধ্যে বাড়াবাড়ি উদ্বেগ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিন৷” এমনই জানান মনোচিকিৎসক শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায়৷
আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, খিটখিটে মেজাজ? কী করবেন ?
উদ্বেগ কমাতে
ডিজঅর্ডারের পর্যায়ে পৌঁছে গেলে সাইকো থেরাপি, বিশেষ করে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি, ওষুধ জরুরি৷ জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হয়৷ শিখতে হয় রিল্যাক্স করা ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার নিয়ম৷
গোড়াতে সতর্ক হলে সমস্যা হয় না৷ সচেতন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলে ও যোগা-মেডিটেশন-ব্যায়াম ইত্যাদি করতে পারলে মন হালকা হয়৷ উদ্বেগ কমাতে কিছু খাবারেরও ভূমিকা আছে৷
উদ্বেগ কমান খেয়ে
ভিটামিন ই-র অভাব হলে উদ্বেগ ও মন খারাপ বাড়তে পারে৷ সে অভাব মেটাতে নিয়মিত বাদাম খান৷ বিশেষ করে ব্রাজিল নাট ও অ্যামন্ড৷ ব্রাজিল নাটে আছে সেলেনিয়াম নামের খনিজ৷ লাগাতার উদ্বেগে শরীরে যে প্রদাহ বাড়ে তা কমাতে পারে৷ তবে দিনে ৩-৪টের বেশি নয়৷
গবেষণায় দেখা গেছে যাঁরা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কম খান, তাঁদের মুড ডিজঅর্ডার বেশি হয়৷ কাজেই সপ্তাহে অন্তত দু-বার তৈলাক্ত মাছ খেতে হবে৷ সয়াবিন, আখরোট, তিসির বীজ, শিয়া বীজ, কড লিভার অয়েলও খেতে পারেন৷
ভিটামিন ই-র অভাব হলে উদ্বেগ ও মন খারাপ বাড়তে পারে। ছবি: শাটারস্টক থেকে নেওয়া
জার্নাল অফ আফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ভিটামিন ডি-র অভাব হলে অবসাদের আশঙ্কা বাড়ে৷ কাজেই দিনে ২০-৩০ মিনিট গায়ে রোদ লাগানো জরুরি৷ তার পাশাপাশি খান তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, কড লিভার অয়েল৷ প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট খেতে হতে পারে৷
আরও পড়ুন: হাই ব্লাড প্রেসারে ভয়াবহ হতে পারে কোভিড সংক্রমণ
ট্রিপ্টোফানের উপস্থিতিতে শরীরে সেরেটোনিন হরমোন অতিরিক্ত ক্ষরণ হয়।এটি মন ভাল করার হরমোন। ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে উদ্বেগ, অনিদ্রা কমাতে সে সিদ্ধহস্ত ৷ কাজেই ডিম, চিকেন, চিজ, মাছ, চিনেবাদাম, কুমড়ো বীজ, তিল, দুধ, কলা ইত্যাদি খান মাত্রা রেখে৷
কুমড়োর বীজে পটাশিয়াম ও জিঙ্ক আছে৷ দুই-ই মুড ডিজঅর্ডারের মহৌষধ৷ এ ছাড়াও কলার পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রিল্যাক্স করতে সহায়তা করে৷ দিনে ৪০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেলে ফ্ল্যাভেনয়েড, ট্রিপ্টোফান, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদির প্রভাবে মন ভাল থাকে৷ তবে তাতে কোকোর পরিমাণ যেন ৭০ শতাংশের বেশি থাকে৷ হলুদের কারকিউমিন প্রদাহের প্রবণতা কমায়৷ তার হাত ধরে মনও শান্ত হয়৷ উপরি পাওনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়া, যা এই মুহূর্তে খুবই দরকার৷ চ্যামোলিন চা মন হালকা করে৷ এর জীবাণুনাশক গুণ আছে৷ আছে প্রদাহ কম রাখার ক্ষমতা৷ করোনা ঠেকাতেও এর ভূমিকা আছে৷ এই চায়ের স্বাদ-গন্ধ ভাল না লাগলে গ্রিন টি-ও খেতে পারেন৷ কাজ একই হবে৷ ঘরোয়া টক দই বা দোকানের ইয়োগার্টে আছে উপকারি জীবাণু, ল্যাক্টোব্যাসিলাস ও বাইফিডোব্যাকটেরিয়া৷ এরা পেট যেমন ভাল রাখে, মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতেও ভূমিকা রয়েছে এদের৷ প্রদাহ কমায় বলে মনও ভাল থাকে৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy