আমাদের কর্নিয়ার আকার প্রায় গোলাকার। সেটি যখন শঙ্কু আকৃতির হয়ে যায়, তাকেই বলে কেরাটোকোনাস। এটি এক ধরনের এক্ট্যাটিক কর্নিয়াল ডিজ়িজ়। এই অসুখ ধরা পড়ে সাধারণত কিশোর বয়সে। কর্নিয়াল স্ট্রোমা যখন তার রিজিডিটি নষ্ট করে ফেলে, দুর্বল বা পাতলা হয়ে যায়, তখনই সমস্যার শুরু। এর কারণ মূলত জেনেটিক ডিজ়র্ডার। অন্য কারণও থাকতে পারে, যেমন চোখ বার বার ঘষা। কখনও ল্যাসিক সার্জারির মতো অস্ত্রোপচারের পরে কর্নিয়া দুর্বল হয়ে তার আকার পাল্টে ফেলতে পারে। কর্নিয়াল স্ট্রোমার কোলাজেনগুলির মধ্যকার বাঁধুনি আলগা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে কনিক্যাল বা শঙ্কু আকৃতি ধারণ করে কর্নিয়া।
কী করে বুঝবেন
কিশোর বয়সে বারবার, খুব কম সময়ের ব্যবধানে চোখের পাওয়ার পাল্টাতে থাকলে সতর্ক হতে হবে। সাধারণত আঠেরো থেকে কুড়ি বছর বয়সের মধ্যে চোখের পাওয়ার স্থির হয়ে যায়। সেটা যদি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে, তা হলে সেটি কেরাটোকোনাসের প্রাথমিক পর্ব হতেও পারে। হাই সিলিন্ড্রিক্যাল কিংবা মাইনাস পাওয়ার থাকে যে সব ব্যক্তির, তাঁদের কেরাটোকোনাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
রোগের পর্যায়
কর্নিয়াল সার্জন ডা. তুহিন চৌধুরী জানালেন, কেরাটোকোনাস যদি প্রাথমিক বা সাব-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে ধরা পড়ে, তা হলে প্রথমে চশমা দিয়ে দেখা হয়। ‘‘আমাদের কর্নিয়া স্ফিয়ার বা গোলক আকৃতির হয়। কেরাটোকোনাসের প্রাথমিক স্টেজে সেই শেপ নিপলের আকারের হয়। অসুখের মাত্রা আরও বাড়লে তা ওভাল শেপ নেয়। একেবারে শেষে তা ফুলে গ্লোবের মতো আকৃতি ধারণ করে। সে ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ ধরনের কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের পরামর্শ দিই। তারও পরবর্তী পর্যায়ে সার্জারির কথা ভাবা হয়,’’ বললেন ডা. চৌধুরী। সাব-ক্লিনিক্যাল লেভেলে বিভিন্ন ধরনের পেন্টাক্যামে, কিংবা কর্নিয়াল টোপোগ্রাফি বা ম্যাপিং করে কেরাটোকোনাসের মাত্রা ধরতে পারেন চক্ষু চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসা
ডা. চৌধুরী জানালেন, কেরাটোকোনাস একটি প্রোগ্রেসিভ ডিজ়িজ়। অর্থাৎ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অসুখের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে চশমা কিংবা সফ্ট লেন্স দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তার পরে কর্নিয়ার রিজিডিটি বাড়ানোর জন্য কোলাজেন ক্রসলিঙ্কিং করা যেতে পারে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে কর্নিয়ার কিছু অংশ রিজিড করে দেওয়া হয়। তাহলে অনেক সময়ে কেরাটোকোনাস আর বাড়তে পারে না। তারও পরে যদি অসুবিধে হয়, তখন রিজিড গ্যাস পারমিয়েবল কনট্যাক্ট লেন্স দিয়ে দেখা হয়। এই ধরনের হার্ড লেন্সের মধ্য দিয়ে বাতাসের অক্সিজেন পেনিট্রেট করতে বাধা পায়। এরও পরে স্ক্লেরাল লেন্স দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কেরাটোকোনাসের শেষ পর্যায়ের চিকিৎসা হল সার্জারি। পেনিট্রেটিং কেরাটোপ্লাস্টির মাধ্যমে ডোনার আই-এর সাহায্যে কর্নিয়া রিপ্লেস করে এই অসুখের চিকিৎসা সম্ভব। কখনও অবস্থা বুঝে আংশিক রিপ্লেসমেন্টও করা হয়ে থাকে। ল্যামেলার কেরাটোপ্লাস্টিও করা হয় প্রয়োজন অনুযায়ী। সব কেরাটোকোনাস রোগীরই যে সার্জারির প্রয়োজন হবে, এমন নয়। রোগ অত্যন্ত বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলেই সার্জারির কথা ভাবা হয়। ইন্ট্রা-কর্নিয়াল রিং সেগমেন্টের (আইসিআরএস) মাধ্যমে কর্নিয়াকে ঠিকঠাক শেপেও আনার চেষ্টা করা হয় অনেক ক্ষেত্রে। সাধারণত প্রথম থেকে চিকিৎসা শুরু করলে কেরাটোকোনাসের রোগীর ভিশন ৯৫-৯৮ শতাংশ পর্যন্ত স্পষ্ট হতে পারে। আবার অনেক কিশোর বয়সি কেরাটোকোনাসের রোগীরই ২৪-২৫ বছর বয়সের পরে স্টেডিনেস চলে আসে। পাওয়ার-ও আর বাড়ে না।
অবহেলা নয়
কেরাটোকোনাস রোগীদের বেশি ডিজিটাল স্ট্রেস না নেওয়াই ভাল। বিশেষ করে মাইনাস বা সিলিন্ড্রিক্যাল পাওয়ার আছে, এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ কথা বেশি করে প্রযোজ্য। সঙ্গে লুব্রিকেটিং আই ড্রপ বা আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ব্যবহারকরতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। সমস্যার সূত্রপাতেই সতর্ক হলে এই রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy