Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Genetical Disease

জিনগত সমস্যা ও সমাধান

জিনের সমস্যার কারণে হতে পারে নানা বিরল রোগ। আগে থেকে রোগ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসাপদ্ধতি অবলম্বন করলে এর প্রতিরোধ বা নিরাময় সম্ভব।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ড. বিশ্বরূপ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২১ ০৮:৩৮
Share: Save:

গোটা বিশ্বে আনুমানিক ৭০০০ রকমের বিরল রোগ রয়েছে এবং প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই সব রোগে ভোগেন। সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর মোট যত জন শিশু জন্মাচ্ছে তার মধ্যে প্রায় ছ’শতাংশ এই ধরনের বিরল রোগ নিয়ে জন্মায়। এদের মধ্যে ৩০ শতাংশের পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মৃত্যু ঘটে। যদিও এটাও সত্যি যে, সব জিনগত রোগ প্রাণঘাতী নয়।

জিন কী?

প্রজননের সময়ে বাবা-মায়ের কাছ থেকে এই জিন ছেলেমেয়েদের মধ্যে চলে আসে। জিন থাকে ক্রোমোজ়োম-এ, একের পর এক সাজানো। মানুষের এক একটা ক্রোমোজ়োমে প্রায় ২০,০০০ জিন রয়েছে। শুধু মানুষ নয়, জিন রয়েছে সব জীবন্ত প্রাণীর শরীরেই। এই জিন-ই নির্ধারণ করে কোনও প্রাণীকে কী রকম দেখতে হবে, তার স্বভাব কেমন হবে, কী ভাবে জীবনধারণ করবে ইত্যাদি।

জিনগত রোগ কেন হয়?

কোনও কারণে এক বা একাধিক জিনের মিউটেশনের ফলে বিরল জিনঘটিত রোগ হতে পারে। রোগটি ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে কতখানি দেখা যাবে, তা অনেকখানি নির্ভর করে বাবা-মায়ের মধ্যে কোন জিনটি রয়েছে— ডমিন্যান্ট না রিসিসিভ। এ ক্ষেত্রে রোগগুলি হয় প্রাণঘাতী। রোগী যদি বেঁচেও যায়, কোনও শারীরিক অক্ষমতায় ভুগতে থাকে। জন্ম থেকেই এই ধরনের রোগের লক্ষণ দেখা যায়, তাই এদের বলে কনজেনিটাল ডিসঅর্ডার।

এখনও পর্যন্ত যত ধরনের জেনেটিক ডিসঅর্ডার পাওয়া গিয়েছে, তা তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়— সিঙ্গল জিন ডিসঅর্ডার, ক্রোমোজ়োমাল ডিসঅর্ডার এবং মাল্টি-জিন ডিসঅর্ডার। একটি জিনের গন্ডগোলের কারণে হয় সিঙ্গল জিন ডিসঅর্ডার। একাধিক ভাবে এই রোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে চলে আসতে পারে।
অটোসোমাল ডমিন্যান্ট: এখানে একটি মিউটেটেড জিনের কপির কারণে বাবা-মায়ের মধ্যে একজন রোগে আক্রান্ত হন। ফলে সন্তানের মধ্যে সেই রোগ আসার সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ। এই ধরনের রোগের উদাহরণ হল হান্টিংটন’স ডিজ়িজ়, মারফান সিনড্রোম, টিউবেরাউস স্ক্লেরোসিস ইত্যাদি।
অটোসোমাল রিসিসিভ: এ ক্ষেত্রে বাবা ও মা দু’জনেই মিউটেটেড জিনের একটি করে কপি জিন বহন করেন। কিন্তু এর কারণে যে সব রোগ হয়, এঁদের কেউই তাতে আক্রান্ত হন না। সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ২৫ শতাংশ। এ ধরনের জিনের জন্য অ্যালবিনিজ়ম, রবার্টস সিনড্রোম, সিকল সেল ডিজ়িজ়, সিসটিক ফাইব্রোসিস এবং নিইম্যান পিক ডিজ়িজ় ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
এক্স লিঙ্কড ডমিন্যান্ট: এক্স ক্রোমোজ়োমের জিনের মিউটেশনের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। খুবই বিরল ধরনের জিনের রোগ, বিশেষত পুরুষদের মধ্যেই দেখা যায়। কয়েকটি উদাহরণ, রেট সিনড্রোম, আইকারডি সিনড্রোম ইত্যাদি।
এক্স লিঙ্কড রিসিসিভ: এক্স ক্রোমোজ়োম জিনের মিউটেশনের সঙ্গে এরও যোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই বেশি আক্রান্ত হন। যে সব মহিলার এক্স লিঙ্কড রিসিসিভ ক্রোমোজ়োম থাকে, তাঁদের পুত্র-সন্তানদের ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে এই জিনগত রোগে আক্রান্ত হওয়ার। কিন্তু কন্যা-সন্তানদের ৫০ শতাংশ এই মিউটেটেড জিনের একটি কপির বাহক হয়ে থাকে। টাক পড়া, বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া এ এবং লেস-নাইহান সিনড্রোম এক্স-লিঙ্কড রিসিসিভ জিনের মিউটেশনের কারণে হয়ে থাকে।
ওয়াই লিঙ্কড: ওয়াই ক্রোমোজ়োম-এর মিউটেশনের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। একে হোলান্ড্রিক ডিসঅর্ডারও বলা হয়।
মাইটোকন্ড্রিয়াল: মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-তে মিউটেশনের জন্য এই ধরনের ডিসঅর্ডার হয়ে থাকে।
ক্রোমোজ়োমাল ডিসঅর্ডার:

মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজ়োম থাকে। কিন্তু মোট ক্রোমোজ়োমের একটি বা একাংশ যদি না থাকে বা বদলে যায়, তা হলে নানা ধরনের অসুখ দেখা দেয়। যেমন, ডাউন সিনড্রোম, টার্নার সিনড্রোম, উইলিয়াম সিনড্রোম ইত্যাদি। যদি কারও একটা ক্রোমোজ়োম না থাকে, তাকে বলে মোনোসমি। আবার কখনও মানুষ একটা বাড়তি ক্রোমোজ়োম নিয়ে জন্মায়। একে বলে ট্রাইসমি। ডাউন সিনড্রোমের ক্ষেত্রে ক্রোমোজ়োম ২১-এ একটি বাড়তি কপি থাকে, যার ফলে একে ট্রাইসমি ২১-ও বলা হয়। এই রোগে ব্যক্তির মুখের রেখচিত্র স্বাভাবিক ভাবে তৈরি হয় না, দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিও হয় না ঠিকমতো।

মাল্টিজিন ডিসঅর্ডার: একাধিক জিনের প্রভাবের পাশাপাশি পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার ধরনের কারণে এই রোগ হতে পারে। এর কয়েকটি উদাহরণ হল হাঁপানি, কার্ডিয়োভাস্কুলার ডিজ়িজ়, হাইপারটেনশন, ক্যান্সার, ডায়াবিটিস, পেটের সমস্যা ইত্যাদি।

রোগ নিরাময়

প্রত্যেকেরই জেনে রাখা উচিত জিনঘটিত রোগের কোনও ইতিহাস পরিবারে রয়েছে কি না। সন্তান জন্মের আগে জেনেটিক টেস্টিং এবং পরে সদ্যোজাত শিশুর পরীক্ষা এই রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যত আগে এই রোগ ধরা পড়বে, তত তাড়াতাড়ি এর চিকিৎসা হবে এবং নিরাময় হতে সুবিধে হবে। যেমন, ট্রিপল মার্কার ব্লাড টেস্ট-এর মতো রক্ত পরীক্ষা গর্ভস্থ ভ্রূণের মধ্যে কোনও জিনগত অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না, তা নির্ণয় করে।

জিনগত রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা চলে সারা জীবন। কয়েকটি বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ধরনের চিকিৎসায় রোগটিকে বাড়তে না দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই চিকিৎসার কিছু বিশেষ পদ্ধতি আছে যেমন, শরীরে টক্সিনের মাত্রা কমানো, ফাংশনাল প্রোটিনের হার বাড়ানো, খামতি যা রয়েছে তা পূরণ করা ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে, জিন থেরাপি জিনগত রোগ নিরাময়ের স্থায়ী সমাধান, কিন্তু সেটা তাত্ত্বিক ভাবে। জিনগত রোগের জন্য এফডিএ-অনুমোদিত জিন থেরাপি হল লুক্সটার্না, যেটি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রেটিনা রোগের প্রথম এবং একমাত্র ফার্মাকোলজিক চিকিৎসা (আইআরডি) এবং আমেরিকায় অনুমোদিত প্রথম অ্যাডেনো-অ্যাসোসিয়েটেড ভাইরাস (এএভি) ভেক্টর জিন থেরাপি। বিভিন্ন জিনগত রোগের জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়ালে কম বেশি বেনিফিট পাওয়া গেলেও কোনও জিন থেরাপিরই এখনও ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদন মেলেনি। বহু দেশে এখনও বিরল জেনেটিক রোগকে ফার্মাকোলিক্যাল এবং জিন থেরাপি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরাময় করার বিষয়ে গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। কয়েকটি চিকিৎসাপদ্ধতির কথা আলোচনা করা যাক:

টক্সিনের মাত্রা কমানো: ফেনাইলালানাইন হাইড্রক্সাইলেজ়-এ অভাবের কারণে মস্তিষ্কে ফেনাইলালানাইন বেড়ে গেলে তা সব বয়সেই মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। একে বলা হয় ফেনাইলকেটোনুরিয়া (পিকেইউ)। শুধু তাই নয়, এর কারণে শিশুদের ব্রেন ডেভেলপমেন্ট ঠিকমতো হয় না। এমনকি মহিলাদের মধ্যে পিকেইউ থাকলে গর্ভধারণে সমস্যা হয়। যে সব খাবারে ফেনাইলালানাইন বেশি রয়েছে, সে সব খাবার কম খেলে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। বিশেষ ধরনের মেডিক্যাল খাবার, যাতে অন্যান্য অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ক্যালরি রয়েছে, এর চিকিৎসায় সাফল্য আনতে পারে।

শরীরে ফাংশনাল প্রোটিন বাড়ানো: শরীরে ফাংশনাল প্রোটিন পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ালে, তা রোগ নিরাময় বা রোগের বৃদ্ধিকে প্রতিরোধে করতে সাহায্য করে। ভিটামিন কোফ্যাক্টর ডোজ় বাড়িয়ে এটা করা যেতে পারে। যেমন, যে সব মানুষ ফেনাইলকেটোনুরিয়ায় ভোগেন, তাঁদের টেট্রাহাইড্রোবায়োপটেরিন দিলে তা শরীরে ফেনাইলালানাইন হাইড্রক্সাইলেজ়-এর কাজ বাড়ায়। শরীরে ততটা ফেনাইলালানাইন তৈরি হয়, যতটা শরীর নিতে পারে।

এনজ়াইম রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিও বেশ আশাব্যঞ্জক ফল দিচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে। লাইসোসোমাল এনজ়াইম গ্লুকোসেরিব্রোসাইডেজ়-এর অভাবের কারণে গউশর ডিজ়িজ় টাইপ ১ হতে পারে। এর ফলে বোন ম্যারো, লিভার এবং স্প্লিন-এ ক্ষতিকর ফ্যাট জমতে থাকে। দ্বিসাপ্তাহিক ভাবে রিকম্বিন্যান্ট প্রোটিন দিয়ে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অন্যান্য আরও কিছু রোগের ক্ষেত্রেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে এনজ়াইম থেরাপি।

যে কোনও পরিস্থিতিতেই অনেক সময়েই প্রতিস্থাপনের পরে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। সে সব দিক মাথায় রেখেই কিছু কিছু ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া। যেমন, হেমাটোপোয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন শুধু হেমাটোলজিক জেনেটিক ডিসঅর্ডার-এর (যেমন থ্যালাসেমিয়া, সিকল সেল অ্যানিমিয়া) ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় না, মস্তিষ্কে এনজ়াইম পাঠানোর ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা নেয়।

খামতি পূরণ: কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তৈরি হওয়া বা পুনর্ব্যবহার না হওয়ার ফলে কিছু ডিসঅর্ডার হতে পারে। যেমন, এসেনশিয়াল ভিটামিন বায়োটিন শরীরে পুনর্ব্যবহার করার ক্ষমতা বিকল হলে বায়োটিনাইডেজ় ডেফিশিয়েন্সি হয়। এর ফলে জন্মের পরে এই ভিটামিনের অভাব দেখা যায় এবং তা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ক্ষতি করে। তবে সদ্যোজাতদের স্ক্রিনিং টেস্টেই অভাব ধরা পড়ে। প্রথম থেকেই বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট চালু করলে এই রোগের প্রকোপ থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

রোগ বাড়তে না দেওয়া: মারফান সিনড্রোমের সবচেয়ে গুরুতর বহিঃপ্রকাশ হল অ্যাওরটিক অ্যানিউসিমস। পেট, থোর‌্যাক্স বা শরীরের অন্য কোথাও অ্যাওরটা-র সমস্যা হতে পারে। এতে ওই অ্যাওরটা ফুলে ওঠে এবং বিশেষ অবস্থায় তাতে ফাটল ধরে। এবং সেই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। ফিবরিলিন-এর জিনে মিউটেশনের ফলে এই মারফান সিনড্রোম হয়। আগে বিটা ব্লকার ব্যবহার করে অ্যাওরটা-র উপরে স্ট্রেস কমানোর ব্যবস্থা করা হত। এখন এর আরও ভাল ওষুধ বেরিয়ে গিয়েছে।

জিন এডিটিং এবং ভবিষ্যৎ

একগুচ্ছ প্রযুক্তির সাহায্যে কোনও প্রাণীর ডিএনএ পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে বলে ‘জিন এডিটিং’। এই পদ্ধতির সাহায্যে জেনোমের একাধিক জায়গায় জিনেটিক উপাদান যোগ, বিয়োগ এমনকি পরিবর্তন-ও করা যায়। এখন জিন এডিটিংয়ের একাধিক পদ্ধতি বেরিয়ে গিয়েছে, যাদের মধ্যে সাম্প্রতিকতম হল সিআরআইএসপিআর-সিএএস৯।। বিজ্ঞান মহলে এই পদ্ধতি খুবই আলোচিত, কারণ এই পদ্ধতিটি অন্যগুলির চেয়ে নিখুঁত ও তাড়াতাড়ি কাজ করে।

জেনেটিক ডিসঅর্ডার সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা ও রোধের ক্ষেত্রেও জিন এডিটিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও বোঝার চেষ্টা করছেন এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর। সিসটিক ফাইব্রোসিস, হিমোফিলিয়া, সিকল সেল ডিসঅর্ডার-এর মতো সিঙ্গল জিন ডিসঅর্ডার থেকে শুরু করে ক্যানসার, হার্টের সমস্যা, এইচআইভি-র মতো জটিল রোগের ক্ষেত্রেও এখন এই পদ্ধতির ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে। যদিও একদল বিজ্ঞানীর মতে, নৈতিক ভাবে এই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত নয়। ফলে বির্তক থেকেই যাচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া-র সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর

অনুলিখন: সৌরজিৎ দাস

অন্য বিষয়গুলি:

Genetical Disease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy