Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Summer Care

তীব্র তাপে ছোটদের সুস্থ রাখতে চাই সতর্কতা

এই গরম থেকে পড়ুয়াদের রক্ষা করতে স্কুলগুলি কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তীব্র গরমে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে বহু শিশু জ্বর-সর্দি-কাশি এবং পেটখারাপের সমস্যায় ভুগছে।

আড়াল: স্কুল ছুটির পরে শহরের গরম থেকে শিশুদের বাঁচাতে অভিভাবকের ভরসা টুপি।

আড়াল: স্কুল ছুটির পরে শহরের গরম থেকে শিশুদের বাঁচাতে অভিভাবকের ভরসা টুপি। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:১৪
Share: Save:

চৈত্রের শেষেই তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা শহরের। তাপের ছোবল থেকে ছোটদের বাঁচিয়ে রাখতে অভিভাবকদের বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, এই গরম থেকে পড়ুয়াদের রক্ষা করতে স্কুলগুলি কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তীব্র গরমে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে বহু শিশু জ্বর-সর্দি-কাশি এবং পেটখারাপের সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যেই আবার বাড়াবাড়ি শুরু করেছে কিছু ভাইরাস। যেমন, ইতিমধ্যেই অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বেশ কিছু শিশু।

শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘তাপপ্রবাহ থেকে খুব সাবধানে রাখতে হবে শিশুদের। পোশাক, খাওয়াদাওয়া ও জল খাওয়ানোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’’ তিনি জানান, গরমে বার বার স্নান করলে ঠান্ডা লেগে যাবে, এই ধারণা দূর করতে হবে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে স্কুল থেকে ফেরার পরেই বাচ্চাদের স্নান করিয়ে দিতে হবে। তাতে শরীরে বসে থাকা ঘাম ধুয়ে যাবে। শিশুর ওজন অনুযায়ী জল বা তরল খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। হিসাবটা হল, প্রতি কেজিতে ১০০ মিলিলিটার। পাশাপাশি, স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতি তাঁর পরামর্শ, খোলা জায়গায় রোদের মধ্যে প্রার্থনা না করিয়ে, যেখানে ছায়া রয়েছে, তেমন জায়গায় প্রার্থনার ব্যবস্থা করতে হবে।

ছবি: রণজিৎ নন্দী।

গরমের কারণে বাচ্চাদের অনেকেই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বলেও জানাচ্ছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সমস্ত শিশুর ক্ষেত্রে তিন দিন পরে রক্ত পরীক্ষা করালেও কোনও সংক্রমণ মিলছে না। তাই বোঝা যাচ্ছে, অতিরিক্ত গরমের কারণেই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে তারা।’’ আবার জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, এই সময়ে অতিরিক্ত তাপের জেরে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়, তা থেকে হিট স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। শিশু বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরও বেশি। তাই চড়া রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। বেলা ১২টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত বাড়ির বাইরে না বেরোনোই শ্রেয়। তেষ্টা না পেলেও বার বার অল্প অল্প জল পান করতে হবে।

—নিজস্ব চিত্র।

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি ঘরে পাখা রয়েছে।’’ বাঙুরের নারায়ণদাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়ার কথায়, ‘‘স্কুলে পরিস্রুত পানীয় জল তো আছেই, সেই সঙ্গে ফ্রিজে পর্যাপ্ত ওআরএস-ও রাখা হচ্ছে। পড়ুয়াদের বলা হয়েছে, অতিরিক্ত গেঞ্জি ও তোয়ালে সঙ্গে রাখতে।’’

তবে, শহরের স্কুলগুলিতে পরিকাঠামো থাকলেও শহরতলির বহু স্কুলেই কিন্তু সব সময়ে তা থাকে না। পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তথা দক্ষিণ চাতরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, ‘‘সরকারি স্কুলগুলির যা আর্থিক সঙ্গতি, তাতে পরিস্রুত পানীয় জলের যন্ত্র কেনার সামর্থ্য থাকে না। অনেক ক্লাসে একটির বেশি পাখাও নেই। পুকুর থেকে কচুরিপানা তুলে এনে ছাদে বিছিয়ে দিলে ছাদ কিছুটা ঠান্ডা থাকে। গরমে পড়ুয়াদের কষ্ট তো হয়ই। স্কুলের পুজোর ছুটি কমিয়ে গরমের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব আমরা শিক্ষা দফতরকে দিয়েছি। প্রয়োজনে ভোরের স্কুলের সংখ্যা বাড়ানো হোক। গরমের ছুটি পরিকল্পনাহীন ভাবে বেড়ে গেলে শিক্ষা দিবসের সংখ্যা কমবে। আখেরে ক্ষতি হবে পড়ুয়াদেরই।’’

গরমে ছোটদের ভাল রাখতে

রোদে বেরোনো যতটা সম্ভব এড়াতে হবে

ঠান্ডা ও ছাউনিযুক্ত জায়গায় থাকতে হবে

গায়ে ঘাম বসতে দেওয়া যাবে না

গরম থেকে ঘুরে এসে স্নান করা ভাল

পর্যাপ্ত জল ও ফল খেতে হবে

ফাস্ট ফুড এড়াতে হবে

সুতির ও হালকা রঙের জামাকাপড় পরতে হবে

সঙ্গে অতিরিক্ত গেঞ্জি বা জামা রাখা ভাল

ভিজে কাপড়ে চোখ-মুখ মুছতে হবে মাঝে মাঝেই

অন্য বিষয়গুলি:

Summer Care heat waves Child Health Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE