মধ্যবয়স্ক অরুণবাবুর চোখের কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু হঠাৎ করে শুরু হল নতুন বিপত্তি! একটা জিনিসকে তিনি দুটো করে দেখছিলেন। কখনও জল খেতে গিয়ে টেবিলে রাখা একটা গ্লাসকে দুটো, কখনও আবার সামনে থেকে আসা গাড়ির ঘাড়ে আর একটা গাড়ি চেপে বসল বা চোখের সামনে কেউ হাত নাড়লে পাঁচটার জায়গায় দশটা আঙুল! এতে তাঁর নাজেহাল অবস্থা, বিশেষ করে রাস্তা পার হওয়ার সময়ে বা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে হোঁচট খাচ্ছিলেন। দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অরুণবাবু জানতে পারেন, তাঁর এই সমস্যাটির নাম ডিপলোপিয়া।
চোখের পেশি বা মাসল প্যারালিসিস হয়ে ডিপলোপিয়া বা ডাবল ভিশন সমস্যা হয়। এতে একটা জিনিসকে দুটো দেখি। সহজ করে বললে, আমরা যখন কোনও জিনিস দেখি, তখন তা চোখের কর্নিয়া, লেন্স, রেটিনা ভেদ করে স্নায়ুর সাহায্যে সোজা মস্তিকে চলে যায়। দু’টি চোখের দেখা আলাদা ছবিকে মস্তিষ্ক মিলিয়ে দিয়ে ফের বার্তা পাঠায়। ফলে দু’চোখ দিয়ে আমরা একটি বস্তুই দেখি। এই পুরো ব্যাপারটিকে বলে বাইনোকুলার ভিশন। আমরা সাধারণত উপরে নীচে, ডাইনে বাঁয়ে বা আড়াআড়ি ভাবে দেখি। চোখের এই মুভমেন্ট পরিচালনা করে চোখের মাসল বা পেশি। কোনও কারণে চোখের পেশি দুর্বল হয়ে পড়লে বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে, বাইনোকুলার ভিশন বিগড়ে গিয়ে চোখ একই বস্তুর দু’টি প্রতিচ্ছবি দেখে। চোখে একাধিক পেশি আছে, তার মধ্যে কোনও একটা অকেজো হয়ে গেলেই কিন্তু এই সমস্যা হতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করে চোখের পেশি অক্ষম হবে কেন? উত্তরে চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. সুমিত চৌধুরী বললেন, ‘‘সাধারণত ডিপলোপিয়া হয় ডায়াবিটিস এবং হাইপারটেনশনের মতো রোগের সমস্যা থাকলে। এই কো-মর্বিডিটির বাইরে মস্তিষ্কে সমস্যা হলে, বিশেষ করে টিউমর বা দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত লাগলে ব্রেন হেমারেজের মতো সমস্যা থেকেও ডাবল ভিশন হতে পারে।’’
একটা জিনিসকে দুটো দেখা ছাড়া ডিপলোপিয়ার অন্য লক্ষণ নেই। চোখের অন্যান্য সমস্যার মতো এ ক্ষেত্রে ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি ইত্যাদি হয় না। তবে কোনও কারণে চোখের পিছনে ইনফেকশন থেকে ইনফ্ল্যামেশন হলে, তখন কিন্তু চোখের পেশি অকেজো হয়ে ডাবল ভিশন হয়। এ ক্ষেত্রে চোখে ব্যথা হয়। যদিও এই সমস্যা হয় খুব কম জনেরই।
অনেকের মধ্যেই ডিপলোপিয়া নিয়ে একটা ভয় কাজ করে। তাঁরা মনে করেন, এই সমস্যা অন্ধত্বের জন্ম দেয়। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। চিকিৎসা করালে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ডিপলোপিয়া হলে তো জীবন থেমে থাকবে না, তাই চিকিৎসা চলার পাশাপাশি কাজ করতে যাতে অসুবিধে না হয়, তার জন্য সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রথমে মেশিনে দেখে নেওয়া হয় কোন চোখে সমস্যা বেশি, তার পর সেই চোখ বন্ধ করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। যাতে একটা চোখ দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে ডা. চৌধুরী বললেন, ‘‘সমস্যা সমাধানের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের মাসলের এক্সারসাইজ় করতে হবে। ঠিক যেমন শরীরের কোনও অংশে প্যারালিসিস হলে ফিজ়িয়োথেরাপি করানো হয়, এটি তেমনই। পাশাপাশি ডায়েট চার্টও করে দেওয়া হয়, কো-মর্বিডিটির সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। নিয়ম মেনে চললে তিন মাসের মধ্যে দৃষ্টি একেবারে স্বাভাবিক হয়ে যায়। খুব কম জনই আছেন, যাঁদের সমস্যা চিকিৎসার এই পদ্ধতিতে সাড়া দেয় না। সে ক্ষেত্রে অপারেশন করে পেশি মেরামত করলেই সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি। অনেক সময়ে দুর্ঘটনার ফলে চোখের অরবিটের হাড় ভেঙে পেশি ওই গর্তে ঢুকে যায়। তখনও কিন্তু ডাবল ভিশন হয়। এ ক্ষেত্রে অপারেশন করে ভাঙা হাড় ও মাসল ঠিক করে ফেলা যায়।’’
ডায়াবিটিস ও হাইপারটেনশনের পাশাপাশি থাইরয়েডের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদেরও ডাবল ভিশন হতে পারে। সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত থাইরয়েডের জন্য ফ্যাট জমে চোখের পিছনের পেশি মোটা হয়ে যায়। ফলে চোখ সামনের দিকে ঠেলে বেরিয়ে আসে। সে সময়ে মাসল ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ডিপলোপিয়া দু’টি চোখে না হয়ে একটি চোখেও হতে পারে, এ ক্ষেত্রে অন্য চোখটি ভাল থাকায় সমস্যা চট করে বোঝা যায় না। সাধারণত ছানি পড়া, চোখে জল জমা থেকে এক চোখে এই সমস্যা হয়। ডিপলোপিয়া মধ্যবয়স্কদেরই বেশি হয়। বাচ্চাদের মধ্যে এ সমস্যা বিরল।
ডিপলোপিয়া হঠাৎ করেই হয় এবং চিকিৎসায় ঠিকও হয়ে যায়। এটা মনে করা উচিত নয়, যাঁদের ছোট থেকে চোখে বেশি পাওয়ার বা মায়োপিয়া আছে, তাঁদের ভবিষ্যতে এই সমস্যা হতে পারে। তবে ডাবল ভিশন সমস্যা হলে ফেলে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ দ্রুত নেওয়া জরুরি। রোগের উৎস কো-মর্বিডিটি না মস্তিষ্কজনিত, সেটা কিন্তু জানা বিশেষ প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy