অল্পবয়সিদের মধ্যে হৃদ্রোগের আশঙ্কা বাড়ছে কেন? ছবি: সংগৃহীত
হালে সিদ্ধার্থ শুক্লার মৃত্যু বহু মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। অভিনেতার মৃত্যু ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। এত সুস্থ, এত প্রাণবন্ত একটি মানুষ কী করে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হতে পারেন? এত কম বয়সে কি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে? তা হলে কি অতিরিক্ত শরীর চর্চার ফলেই হার্ট অ্যাটাক? এমন নানাবিধ প্রশ্ন উঠে এসেছে নানা মহল থেকে।
বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব হৃদ্যন্ত্র দিবস বা ‘ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে’। চলতি বছরে এই দিনটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, তার কারণ হালে অল্পবয়সিদের মধ্যে হৃদ্রোগের পরিমাণ যেন আরও বেড়ে গিয়েছে। একা সিদ্ধার্থ শুক্লাই নন, নিত্য এমন বহু মানুষের হৃদ্রোগের খবর আসে, যাঁদের বয়স ৪০ বছরের কম। কেন এমন হচ্ছে? কী বলছেন চিকিৎসকরা?
এসএসকেএম হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগের চিকিৎসক সরোজ মণ্ডলের কথায় এর পিছনে বেশ কয়কটি কারণ থাকতে পারে। কী কী কারণ বলছেন তিনি? দেখে নেওয়া যাক।
• জন্মগত কারণ: অনেকেরই জন্ম থেকেই শিরা-ধমনীর কিছু সমস্যা থাকে। মাপ ছোট হয়। এগুলি অল্প বয়সে সে ভাবে বোঝা যায় না। যাঁদের এই সমস্যা আছে, তাঁরা যদি পরে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ করেন বা খুব বেশি শরীরচর্চা করেন, তা হলে অল্প বয়সেও হৃদ্রোগের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
• কাওয়াসাকি রোগ: অনেকেরই পাঁচ-সাত বছর বয়সে এই অসুখটি হয়। ফলে থ্রম্বোসিসের সমস্যা থেকে যেতে পারে। পরে বড় হলে ২৫-৩০ বছর বয়সেও তাদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা দেখা দেয়।
• ধূমপানে আসক্তি: যাঁরা ধূমপান করেন, নিয়মিত সিগারেট বা গাঁজা খান— তাঁদের রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওষুধ খেলে এই সমস্যা কমে। কিন্তু রক্ত জমাট বাঁধছে, তা অনেক সময়েই টের পাওয়া যায় না। ফলে চিকিৎসায় দেরি হয়। হৃদ্রোগের আশঙ্কা তাতে বেড়ে যায়।
• জিনগত কারণ: অনেকেরই জিনগত কারণে শিরা-ধমনীর নানা সমস্যা থাকে। বিশেষ করে লিপিড মেটাবলিজেমের সমস্যা থাকে অনেকের। তাঁদেরও কম বয়সেই হৃদ্রোগ হতে পারে।
• মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের সঙ্গে হৃদ্রোগের সম্পর্ক রয়েছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পরেই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
• বাবা-মায়ের থেকে পাওয়া: যাঁদের বাবা-মায়ের হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা রয়েছে, তাঁদের অনেকেরই কম বয়সে হৃদ্রোগের সমস্যা হতে পারে।
• খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা: এটি কম বয়সে হৃদ্রোগের অন্যতম কারণ। যাঁরা খুব কম বয়স থেকে জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্তি তেলের খাবার, অতিরিক্ত পরিমাণে দুগ্ধজাত খাবার খান— তাঁদের এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কী করে সাবধান হবেন?
সরোজ মণ্ডলের পরামর্শ, বুকে সামান্য ব্যথা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা থাকলে শরীরে সামান্য হলেও কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। সেটা যে কোনও বয়সেই হতে পারে। একেবারে ছোট বয়সেও বুকে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।’’ নিয়মিত হৃদ্যন্ত্রের পরীক্ষা করাতে হবে বলেও মত তাঁর।
সরোজের মত, ক্রান্তীয় পরিবেশে এমনিতেই হৃদ্রোগের আশঙ্কা বেশি। কারণ এই পরিবেশের মানুষের হৃদ্যন্ত্র সংলগ্ন শিরা-ধমনীর মাপ ছোট হয়। তা ছাড়া এখানকার পরিবেশে কোলেস্টেরল আর ডায়াবিটিসের প্রবণতাও বেশি। তাই একেবারে ছোট বয়স থেকেই সাবধান হতে হবে। না হলে অল্প বয়সে হৃদরোগের আশঙ্কা আরও বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy