করোনা–কালে অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের রোগীদের বিপদ সবচেয়ে বেশি৷ কোভিডে যত মানুষ মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগেরই এই সমস্যা আছে বলে জানা গেছে৷ কাজেই যাঁদের রক্তচাপ বেশি আছে তাঁদের তো বটেই, যাঁদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা আছে, অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কযুক্ত কারও এ রোগ আছে বা নিজের ওজন–সুগার–কোলেস্ট বেশি আছে, তাঁদের বিশেষভাগে সতর্ক থাকা দরকার৷ হালকা ব্যায়ামের পাশাপাশি নজর দেওয়া দরকার খাওয়া–দাওয়ার দিকে৷ যাঁরা রক্তচাপ কমানোর ওষুধ খান, তাঁদেরও সঠিক খাবার খাওয়া দরকার৷ নাহলে ওষুধ ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না৷
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘ড্যাশ ডায়েট যাকে বলে খাদ্যাভ্যাসে বদল এনে রক্তচাপ আর হাইপারটেনশনকে দূরে রাখা, খেতে শুরু করার দু–সপ্তাহের মধ্যে সিস্টোলিক রক্তচাপ কমতে শুরু করে কিছুদিনেই ৮–১৪ পয়েন্টের মতো কমে যায়৷ কমে ওজন, হূদরোগ–স্ট্রোক–ডায়া ও ক্যান্সারের প্রবণতা৷ কাজেই রক্তচাপ ও ওজন বেশি থাকলে এই ডায়েট খেতে হবে৷ কোভিডের জটিলতার আশঙ্কাও কমবে তাতে৷’
কী আছে এই ডায়েটে তা জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ সুজাতা মুখোপাধ্যায়৷ আসুন, দেখে নেওয়া যাক৷
কী খাবো কী খাবো না
নুনের প্রধান উপাদান সোডিয়াম৷ এমনিতে আমরা গড়ে ৩৪০০ মিগ্রা সোডিয়াম খাই, এই ডায়েটে ২৩০০ মিগ্রার বেশি খাওয়া বারণ৷ কিছু ক্ষেত্রে খেতে হয় ১৫০০ মিগ্রার কম৷ তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়াতে হয় পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের যোগান৷ কাজেই শাক–সবজি, ফল ও লো–ফ্যাট দুধ খেতে হয়৷ সঙ্গে মাপমতো ভাত, রুটি, ডাল, বিন্স, মাছ, চিকেন, ডিম ও সপ্তাহে ৫–৬ দিন অল্প বাদাম ও বীজ৷ খাবারে মোট ফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কম রাখতে হয় বলে রেডমিট, ভাজা, মিষ্টিখুব কম খেতে হয়৷
কোন খাবার কতটুকু
সারা দিনে ২০০০ ক্যালোরির মতো খেলে–
• ভাত–রুটি জাতীয় খাবার খান ৬–৮ সাভিং৷ এক সার্ভিং হল একটা মাঝারি রুটি/এক পিস পাউরুটি/আধকাপ ভাত–ওট্স–পাস্তা৷ ব্রাউন রাইস, হোল হুইট পাস্তা, ব্রাউন ব্রেড, আটার রুটি খেলে ফাইবার ও পুষ্টি বেশি পাবেন৷
• টমেটো, গাজর, ব্রকোলি, মিষ্টি আলু ও রঙিন শাক–সবজিতে থাকে ফাইবার, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম৷ ৪–৫ সাভিং খেতে হয়৷ এক সার্ভিং বলতে বোঝায় এক কাপ কুচোনো বা আধ কাপ রান্নাকরা সবজি৷
• ফলে প্রচুর ভিটামিন, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম থাকে৷ ফ্যাট থাকে কম৷ সারা দিনে ৪–৫ সার্ভিং খাবেন৷ এক সার্ভিং বলতে একটা মাঝারি ফল, আধকাপ টাটকা/হীমায়িত বা ক্যান্ড ফল কিম্বা চার আউন্স জ্যুস৷ প্যাকেটের ফল বা ফলের রস না খাওয়াই ভাল৷
• দুধ, দই, ছানা, চিজ হল ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও প্রোটিনের উৎস৷ উৎস স্যাচুরেটেড ফ্যাটের৷ কাজেই দিনে এক কাপ চর্বিহীন বা কম চর্বির স্কিম মিল্ক/ছানা/দই খান
• মাংসে আছে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন বি, আয়রন ও জিঙ্ক৷ তবে চর্বি থাকে বলে দিনে ৬ আউন্সের বেশি নয়৷ তারপরও সব কেটে চর্বি বাদ দিয়ে বেক, গ্রিল বা রোস্ট করে খান৷ সামুদ্রিক ও তৈলাক্ত মাছে ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে বলে ঘন ঘন খাওয়া ভালো৷
• অ্যামন্ড, বীজ, রাজমা, সয়াবিন, মটরশুঁটি, মুসুর ডাল ইত্যাদিতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং প্রোটিন৷ আছে প্রচুর ফাইবার ও ফাইটোকেমিক্যাল৷ সপ্তাহে ৪–৫ সার্ভিং৷ এক সার্ভিংয়ে থাকে এক–তৃতীয়াংশ কাপ বাদাম, দু–টেবিল চামচ বীজ, আধকাপ রান্না করা বিন, মটরশুঁটি বা ডাল৷ বাদামে উপকারি মুফা ও ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকে৷
• এই ডায়েটে মোট ক্যালোরির ৩০ শতাংশের মতো ফ্যাট থেকে আসে৷ তবে তার ৬ শতাংশের বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে আসা ঠিক নয় বলে রেডমিট, মাখন, চিজ, হোলমিল্ক, ক্রীম, ডিম খান বুঝেশুনে৷ প্রসেস্ড ফুড ভাজাভুজি যত বাদ দেবেন, তত ভাল৷
• মিষ্টি সপ্তাহে ৫ সার্ভিংয়ের কম৷ এক সার্ভিং হল, এক টেবিল চামচ চিনি/জেলি/জ্যাম, আধকাপ সরবৎ অথবা এককাপ লেমোনেড৷ ফ্যাটসমৃদ্ধ মিষ্টি বেশি ক্ষতিকর৷ কাজেই সন্দেশ, রসোগোল্লা, আইসক্রীম না খাওয়াই ভালো৷ আর্টিফিসিয়াল সুইটনারও ক্ষতিকর৷
• ছেলেরা দুটো ও মেয়েরা দিনে একটার ড্রিঙ্ক করবেন না।
• অল্প–বিস্তর চা–কফি খেতে পারেন৷
• প্যাকেটের খাবার কেনার আগে তাতে ‘নো সল্ট অ্যাডেড’, ‘সোডিয়াম ফ্রি’ বা ‘লো সোডিয়াম’ লেখা আছে কিনা দেখে নিন৷ ক্যান্ড ফুড ব্যবহার করুন ভাল করে ধুয়ে৷
• সপ্তাহে একদিন ‘চিট ডে’ রাখুন৷ অনিয়ম করুন তবে একটু নিয়ম মেনে৷ ডায়েটিংয়ে টিকে থাকা সহজ হবে তাহলে৷
• কাজকর্ম বাড়ান৷ বাড়ান চলাফেরা৷ দিনে ৩০–৪০ মিনিট ব্যায়াম করুন৷ ডায়েটিংয়ের পাশাপাশি করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে চিন্তা অনেক কমবে৷ ওজন তো কমবেই৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy