শ্যাম্পুর আগে চুলে তেল মালিশ করা কেবল কেশচর্চার রুটিন নয়, তা এ দেশের এক প্রাচীন প্রথা। কিন্তু আমরা কি সঠিক উপায়ে তেলের ব্যবহার করি? বছরের পর বছর ধরে হয়তো তেল মালিশ করছেন, কিন্তু তা-ও চুল ঝরে পড়ার সমস্যায় ভুগছেন। আর এই প্রথার উপকার সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে আপনার মনে। কিন্তু আপনার তরফেই ভুল থেকে যাচ্ছে না তো? জানাচ্ছেন, কসমেটিক ডার্মাটোলজিস্ট গীতিকা মিত্তল গুপ্ত।
গীতিকার কথায়, ‘‘মাথার ত্বকে তেল মালিশ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর ফলে নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়। তা ছাড়া ক্লান্তি এবংউদ্বেগে ভোগা মানুষের জন্য খুবই আরামদায়ক এই পদ্ধতিটি। তবে, তেল মালিশের সময় এবং পরে খুব বলপ্রয়োগ করলে অনেক সময় চুলের আগা ভেঙে যেতে পারে। ফলিকল থেকে উপড়ে আসতে পারে চুল।’’
তাঁর পরামর্শ, দুই হাতের আঙুলের ডগা দিয়ে মাথার ত্বকে এবং গোড়ায় তেল মালিশ করতে হবে। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করার জন্য মালিশের সময় গোল গোল করে আঙুল চালাতে হবে। খুব জোরে নয়, হালকা চাপ প্রয়োগ করা উচিত মালিশের সময়। তবে চুলে যেন জট না পড়ে যায়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মালিশের পর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে হবে, এতে তেল সব জায়গায় সমান ভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ভেজা চুল, না কি শুকনো চুলে মাখবেন তেল?
গীতিকার কথায়, ‘‘আপনার চুল ভেজা হোক বা শুষ্ক, তেল মালিশে কোনও কিছুতেই অসুবিধা নেই। শর্ত কেবল একটিই, তেল মাখার সময় চুল এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকতে হবে, না হলে সেই তেল শোষণই করতে পারবে না ত্বক। তবে এখানেও ব্যতিক্রম রয়েছে। নারকেল তেলের মতো ভারী তেলের জন্য যেমন ভেজা চুল উপযুক্ত নয়। ভারী বলে তেলের বড় বড় অণুগুলি ভেজা চুলের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না।’’
চুলে এবং ত্বকে তেল শোষণের আরও একটি উপায়
ঈষদুষ্ণ তেল ব্যবহার করলে আরও ভাল ভাবে মাথার ত্বকে এবং চুলের ভিতরে শোষিত হতে পারে। হালকা গরম তেলের থেকে ভাল এ ক্ষেত্রে কিছু হতে পারে না। তবে আরও একটি উপায় রয়েছে। স্বাভাবিক তাপমাত্রার তেল মেখে নেওয়ার পর হালকা গরম তোয়ালে দিয়ে মাথা মুড়ে নিলে তেল শোষণের সম্ভাবনা বাড়ে।

চুলে তেল মালিশ করা দেশের এক প্রাচীন প্রথা। ছবি: সংগৃহীত।
মাথায় তেল রাখা উচিত কত ক্ষণ?
অনেকেই সারা রাত চুলে তেল রেখে দেন। কিন্তু গীতিকার পরামর্শ, এক থেকে দু’ঘণ্টাই চুলের পুষ্টির জন্য যথেষ্ট। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্ষণ তেল রেখে দিলে তেলমুক্ত চুল পাওয়ার জন্য একই পরিমাণ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে আবারও শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। লাভের বদলে ক্ষতিই বেশি হয় সে ক্ষেত্রে। ভারতের অনেক মহিলা প্রতি দিন চুলে তেল দেন এবং তার পর বেণী বেঁধে রাখেন। তবে গীতিকা জানাচ্ছেন, সপ্তাহে এক থেকে দু’বার এই নিয়ম মেনে চললেই যথেষ্ট।

মাথার ত্বকে তেল মালিশ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ছবি: সংগৃহীত।
কারা তেল মাখবেন না
সকলের জন্য চুলে তেল মালিশ উপকারী নয়। যাঁদের খুশকি, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এবং সোরিয়াসিস আছে, তাঁদের অতিরিক্ত তেল থেকে বিরত থাকা উচিত। খুশকির বৃদ্ধি, লাল দাগ, চুলকানি, প্রদাহজনিত নানাবিধ সমস্যা বাড়তে পারে।
তেল মাখার পর কী কী করতে হবে
মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নেওয়ার পর হালকা খোঁপা করে মাথার উপরে বেঁধে রাখুন। খুব বেশি শক্ত করে বাঁধলে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে। কারণ মালিশের পর চুল গোড়া থেকে আলগা হয়ে যেতে পারে। এর পর যদি অতিরিক্ত টান পড়ে, তা হলে চুল ছিঁড়ে যেতে পারে। এর পর ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করে নিন। শেষে গরম জলে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। শ্যাম্পুর পর যেন তেলের আর চিহ্ন না থাকে।