Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
corona virus

বাইরে বেরচ্ছেন রোজ? করোনা ঠেকাতে এই সব মানতেই হবে নিউ নর্ম্যালে

পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খেলে, অল্প ব্যায়াম করলে ও ভাল করে ঘুমলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এমনিই ঠিক থাকে৷

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহজ হবে সঙ্গে ছাতা থাকলে, তবে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ছবি: শাটারস্টক।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহজ হবে সঙ্গে ছাতা থাকলে, তবে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৪২
Share: Save:

প্রথমে মনে হয়েছিল, ঘরে থাকলে ও নিয়ম মানলে করোনা কাছে ঘেঁষতে পারবে না। এক জন থেকে অন্য জনে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে যাবে। কমবে অতিমারি। কেউ ভেবেছিলেন ভাইরাস মারা যাবে গরমে, কিন্তু কোনওটাই হয়নি। এ রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীদের গবেষণা তো চলছেই। ওষুধ বা ভ্যাকসিন কিছু একটা বেরলে সমস্যা মিটবে পুরোপুরি।

কিছু মানুষ লকডাউন মানলেন, কেউ মানলেন না। সংক্রমণের গ্রাফ উপরের দিকে এখনও। শেষমেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েই দিল, এবার শত্রুর সঙ্গে বসবাসের কৌশল শিখে নিন।

অর্থাৎ এবার বাড়িতে পরিচারিকা আসছেন। উঠতে হবে গণপরিবহণেও। আগে সপ্তাহে একবার কেবল বাজার যেতেন, প্লাস্টিকের চটি পরে, চোখে রোদচশমা ও এন-৯৫ এঁটে, ফিরে এসে সব সাবান-জলে ধুয়ে নিতেন, ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলতেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় হাত ধুতেন। আর এখন এক দিন না, বেরতে হতে পারে রোজই।

আরও পড়ুন:কোভিড আবহে হতে পারে ম্যালেরিয়াও, কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে​

‘করোনা সামলাতে’ গরম জল, আদা-তুলসি-লবঙ্গ-গুড়ুচি ইত্যাদির ক্বাথ, লেবু-জল, কমলালেবু ইত্যাদি খেলেই বাড়বে ইমিউনিটি, বিদায় নেবে করোনা, এই ভাবনাও সব সময় মনের মধ্যে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে এখন। চড়া রোদে দাঁড়িয়ে ভাইরাস ও নিজেকে পুড়িয়ে ঝামা করার যে কৌশল নিয়েছিলেন, তা-ও হবে না। বরং অফিসে কাজের ফাঁকে অন্যের হাতে বানানো এক-আধ কাপ চা-কফি খেতে হতে পারে। টিফিন না বানাতে পারলে ক্যান্টিনের ঝালমুড়ি বা ধোকলা খেতে হতে পারে কখনও।

বাইরে বেরলেও বজায় থাক সামাজিক দূরত্ব। ছবি: শাটারস্টক

দামি জামাকাপড়, জুতো, বেল্ট ইত্যাদি রোজ ধুতে ধুতে তাদের হাল খারাপ হবে। এমনকি, বাড়ি ফিরে শ্যাম্পু করে স্নানও করে উঠতে পারবেন না কেউ কেউ। ফলে প্রবল মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুন:নিউ নর্মালে নানা রোগ বাড়াচ্ছে দূষণ​

বাঁচার পথ

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী জানালেন, "নিয়ম মানলে তো ভাল। কিন্তু যা হচ্ছে, তা নিয়ম নয়। অবৈজ্ঞানিক সব ব্যাপার। এই যে গরমের মধ্যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় গরম জল খাচ্ছেন, চা খাচ্ছেন, কী এর কারণ? ভাইরাস মরবে? ভাইরাসকে মারতে গেলে জলের তাপমাত্রা যা হতে হবে, তাতে মানুষই মরে যাবে! অত চা খেলে অম্বল বাড়বে। কেউ আবার রোদে দাঁড়িয়ে থাকছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারণ তাতে ভিটামিন ডি তৈরি হবে, করোনা পালাবে! ভিটামিন ডি সব সময়ই দরকার। কিন্তু বাড়াবাড়ি করলে তো বিপদ। আসলে মানুষকে স্রেফ বলে দেওয়া হচ্ছে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। কেন করতে হবে, না করলে কী হবে তা না বুঝলে যা হয়! কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কেউ বাড়াবাড়ি করছেন। আর রোগ থেকে যাচ্ছে রোগের মতো। অতিমারির মোকাবিলা করতে গেলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হয়। প্রশিক্ষণ দিতে হয়। তার পর সবাই যখন বোঝেন, এই পথে চললে ভাল হবে, তাঁরা নিজেরাই নিয়ম মানেন, উপর থেকে চাপিয়ে দিতে হয় না।"

আরও পড়ুন:সব সময় শাসন নয়, ‘স্পেস’ দিন শিশুদেরও

সঠিক নিয়ম

• "রোগ ঠেকানোর ৮০ শতাংশ চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে হাত ধোয়ার মধ্যে", জানালেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। তিনি বলেন, "এই নয় যে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় হাত ধুতে হবে। আপনি যদি এমন জায়গায় হাত দেন যেখানে জীবাণু থাকার আশঙ্কা আছে, যেমন গণপরিবহণে উঠলে, ভিড় কাটিয়ে বেরলে, পাঁচজন ব্যবহার করেন এমন কিছুতে হাত দিলে, টাকা দেওয়া-নেওয়া করলে, সেই হাত নাকে-মুখে-চোখে লাগার আগেই ভাল করে ধুয়ে নিতে হয়। ধুতে হয় খাওয়ার আগে, শৌচাগারে গেলে। কাজেই বাইরে বেরনোর সময় সঙ্গে সাবান ও ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল আছে এমন স্যানিটাইজার নিন। টিস্যু পেপার বা পরিষ্কার রুমাল রাখুন। হাত ধোওয়ার সুযোগ থাকলে সাবান জলে হাত ধুয়ে নিন। না হলে স্যানিটাইজ করুন। সাধারণ সাবান হলেই হবে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবানের কোনও দরকার নেই। কারণ লড়াই তো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে নয়, ভাইরাসের বিরুদ্ধে।"

৭০ শতাংশ অ্যালকোহল আছে এমন স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। ছবি: শাটারস্টক।

• সাধারণ মানুষের গ্লাভস পরার দরকার নেই। নিয়ম মেনে না পরলে উলটে বিপদ। তার চেয়ে হাত ধুয়ে নেওয়া অনেক নিরাপদ।

আরও পড়ুন:‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?​

• রাস্তায় বেরলে মাস্ক বাধ্যতামূলক। অফিসেও পরবেন। ত্রি স্তরীয় মাস্ক সবচেয়ে ভাল। তবে গরমে অসুবিধা হলে দ্বি-স্তরীয় পরুন। বেশ বড় মাপের। নাকের উপর থেকে চিবুকের নীচ ও কান পর্যন্ত গালের পুরোটাই ঢাকা থাকতে হবে। আপনার ৬ ফুটের মধ্যে কেউ যেন মাস্ক না পরে না আসেন। বাড়ি ফিরে সাবান-জলে সুতির মাস্ক ধুয়ে শুকিয়ে নিন। সার্জিক্যাল মাস্ক হলে তা ধুয়ে নিয়ে কেটে ফেলে দিতে হবে. কারণ এর কার্যকারিতা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। যদি ৫টা ভালভবিহীন এন-৯৫ মাস্ক থাকে ও আলাদা করে রাখার জায়গা থাকে, পর পর ৫ দিন আলাদা আলাদা মাস্ক পরে আবার ষষ্ঠ দিন এক নম্বর মাস্ক দিয়ে শুরু করতে পারেন। রোগ ঠেকানোর ২০ শতাংশ দায়িত্ব আছে মাস্কের উপর।

আরও পড়ুন: কোষ্ঠকাঠিন্য ও অর্শে ভুগছেন? রেহাই পেতে এই সব মানতেই হবে

• মাস্ক পরছেন বলে মানুষের সঙ্গে দূরত্ব রাখবেন না, এমন যেন না হয়। ৬ ফুটের বেশি দূরত্ব রাখতে পারলে সবচেয়ে ভাল। নয়তো কম করে ৩ ফিট।

• চোখে চশমা থাকলে আর কিছু লাগবে না। না থাকলে রোদচশমা পরে বের হন।

• চুল বেঁধে স্কার্ফে মাথা ঢেকে নিন। কারণ বাসে-ট্রামে খোলা চুল অন্যের নাকে-মুখে উড়ে লাগতে পারে। তাঁদের রোগ আছে কি না তা তো জানেন না! সেই চুল আপনার নাকে-মুখে লাগলে বিপদ হতে পারে। তা ছাড়া বড় চুল রোজ শ্যাম্পুও করা যায় না।

• গয়নাগাঁটি, ঘড়ি পরে বেরবেন না। কারণ ধাতুর উপর প্রায় ৫ দিন থেকে যেতে পারে জীবাণু।

• অফিসে নিজস্ব কাপ রেখে দেবেন। সাবান-জলে ধুয়ে সেই কাপে চা-কফি খাবেন। ক্যান্টিন থেকে যে পাত্রেই আসুক, চা-কফির তাপে জীবাণু মরে যাবে, ভয় নেই।

• বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে যাবেন। নয়তো খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয় এমন ফল খাবেন। প্যাকেটের বিস্কুট বা বাদাম খেতে পারেন মাঝে মধ্যে। প্যাকেট খুলে পরিষ্কার করে ধোয়া পাত্রে ঢেলে, হাত ধুয়ে তার পর খাবেন।

• রাস্তার কিছু খাওয়া ঠিক নয়। বড় রেস্তরাঁয় সব নিয়ম মেনে খাবার বানালে, এক-আধ বার খেতে পারেন। না খেলে আরও ভাল। খাবার বাড়িতে এনে গরম করে খেলে অবশ্য অসুবিধে নেই।

• জুতো বাইরে খুলে ঘরে ঢুকবেন। পাঁচ জোড়া জুতো থাকলে এক-এক।দিন একেকটা পরতে পারেন। ষষ্ঠ দিনে আবার প্রথমটা পরবেন। কারণ ৫ দিন পর্যন্ত ভাইরাস লেগে থাকতে পারে জুতোয়। অত জুতো না থাকলে সাবান-জলে জুতো ধুয়ে তবে ঘরে ঢোকান। এরপর নির্দিষ্ট কা-বার্ড বা ঝোলায় ব্যাগ রেখে শৌচাগারে গিয়ে জামাকাপড়, চশমা সাবান-জলে ধুয়ে, তুলোয় স্যানিটাইজার ভিজিয়ে মোবাইল পরিষ্কার করে সাবান মেখে, শ্যাম্পু করে স্নান করবেন।

ব্যাগ স্যানিটাইজ করতেই হবে বাইরে থেকে ফিরলে। ছবি: শাটারস্টক।

• পরিচারিকা বা অন্য কেউ এলে ঘরে ঢোকার আগে হাত এবং পা সাবান-জলে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া মাস্ক পরতে হবে। জামাকাপড় বদলে নিতে পারলে আরও ভাল।

• বাহুল্যবর্জিত হালকা খাবারই ভাল এই সময়। ঘরে বানানো খাবার। ভাজা-মিষ্টি কম খাওয়া ভাল। ফল সুবিধামতো। মাছ-মাংস-ডিম, যাঁর যেমন সুবিধা।

• প্রচুর জল খাওয়ার দরকার নেই। শরীর যতটুকু চায়, ততটুকু খেলেই হবে। কোনও কারণে জলে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দিনে কম করে আড়াই-তিন লিটার।

• ভেষজ উপাদান খেতে ইচ্ছে হলে খাবেন। না খেলেও ক্ষতি নেই। কারণ এরা কেউ ভাইরাস মারতে পারে না। পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খেলে, অল্প ব্যায়াম করলে ও ভাল করে ঘুমলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এমনিই ঠিক থাকে।

আরও পড়ুন:অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় বাড়ছে এই সব রোগের আশঙ্কা, কী করবেন, কী করবেন না

• গায়ে হালকা রোদ লাগানো দরকার। সকালে হাঁটতে গেলে ব্যায়ামও হবে, রোদও লাগবে গায়ে। ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায় না। কাজেই ভয় নেই। সময় থাকলে একটু বেলার দিকেও বেরতে পারেন। চড়া রোদ ঠেকাতে ছাতা নিয়ে নেবেন। মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখাও সহজ হবে।

• অনেকের ধারণা, সনা বাথ নিলে ভাইরাস মরে। এটি ভুল ধারণা, জানান চিকিৎসকরা। এই গরমে ও সব করার কোনও দরকার নেই।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona coronavirus COVID-19 New Normal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy