Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Degenerative Disk Disease

নিয়ম মেনে চললে এ রোগের ভয় কম

বয়স বাড়লে ডিস্ক ডিজেনারেশন শুরু হবেই, তা পুরোপুরি ঠেকানো যায় না। তাই আগে থেকেই সচেতন হতে হবে।

—প্রতীকী চিত্র।

ঊর্মি নাথ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৪ ০৯:০৪
Share: Save:

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলে পাক ধরে, ত্বক কুঁচকে যায়, চোখে ছানি পড়ে। শরীরের বাইরের এই পরিবর্তন অধিকাংশ মানুষ মেনে নেন, কারণ এইগুলো যন্ত্রণাহীন। শুধু বাইরে নয়, শরীরের ভিতরেও পরিবর্তন চলে নিরন্তর। যেমন ডিস্ক ডিজেনারেশন বা শিরদাঁড়ার বয়সজনিত পরিবর্তন। বয়স বাড়লে ডিস্ক ডিজেনারেশন হবেই, একে থামানো যায় না। কিন্তু জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস ও শারীরচর্চার মধ্য দিয়ে বিলম্বিত করা যায়।

কী ভাবে সমস্যার উৎপত্তি

মেরুদণ্ডে প্রতি জোড়া ভার্টিব্রা বা কশেরুকা একটি ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক দিয়ে আলাদা করা থাকে। এটা অনেকটা ডিমের কুসুমের মতো, যার বাইরের খোলসটা সুতোর মতো দড়িদড়া দিয়ে তৈরি, যাকে বলে অ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস। আর ডিমের কুসুমের মতো থলথলে অংশটি নিউক্লিয়াস পালপোসাস। এটাই শক অ্যাবজ়র্বার বা ঝাঁকুনি রোধক হিসেবে কাজ করে। নিউক্লিয়াস পালপোসাসে প্রধানত থাকে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ— প্রোটিয়োগ্লাইকান এবং কোলাজেন। প্রোটিয়োগ্লাইকানের কাজ শরীর থেকে জল শুষে নিউক্লিয়াস পালপোসাসের জেলির জলীয়ভাব বজায় রাখা, যাতে ডিস্কের ঝাঁকুনি রোধ করার ক্ষমতা বজায় থাকে।

ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ ডা. শঙ্করপ্রসাদ সিংহ এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রোটিয়োগ্লাইকান এবং কোলাজেনের চরিত্র বদলাতে থাকে। ফলে ডিস্কের নিজস্ব চেহারা এবং বহনক্ষমতা কমে যায়। একেই ডিস্ক ডিজেনারেশন বলে। বহনক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি নমনীয়তাও কমে জড়তা তৈরি হয়। এরই সঙ্গে দু’পাশের ফ্যাসেট জয়েন্টগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এই দু’পাশের অসম বহনক্রিয়ার ফলে কশেরুকার মূল অংশে নতুন ছড়ানো–ছিটানো হাড় তৈরি হতে থাকে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে। এই পরিবর্তনকেই স্পনডাইলোসিস বলে, যা সবচেয়ে বেশি হয় ঘাড় ও কোমরের শিরদাঁড়ার তলার অংশে। যত বয়স বাড়বে, তত অ্যানিউলাস ফাইব্রোসাসও দুর্বল হতে থাকে। হঠাৎ করে কোনও নড়াচড়া বা আঘাতের ফলে ডিস্কের টুকরো অ্যানিউলাসের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসে। একে বলে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স।’’ আবার কশেরুকার দু’পাশে যে স্নায়ু বার হয় সুষুম্নাকাণ্ড থেকে, এই ডিস্কের টুকরো অনেক সময় সেইখানে গিয়ে চাপ দেয়। তখন হাত বা পা বরাবর যন্ত্রণা হয়। এই রকমই একটি যন্ত্রণাকে আমরা জানি সায়াটিকা নামে।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

চিকিৎসা

বয়স্কদের ঘাড়, কোমর, শিরদাঁড়ায় প্রবল ব্যথা হলে যন্ত্রণার প্রকোপ নিরাময়ে ব্যথার ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তাঁরা এক্সরে, সিটিস্ক্যান বা প্রয়োজনে এমআরআই করে দেখে নিতে পারেন সমস্যা কেন হচ্ছে এবং কোথায় হচ্ছে। ডিস্ক ডিজেনারেশন জটিল হয় তখন, যখন বিশ্রামে থাকলেও ব্যথা হয়। ‘‘ডিস্ক ডিজেনারেশনের ফলে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো হয়, তা সব সময়ে খুব বিপজ্জনক নয়। প্রথমে দেখা হয় ওষুধ, বিশ্রাম ও ফিজ়িয়োথেরাপি করে সারানো যায় কি না। কিছু ক্ষেত্রে ঘাড়ে ও কোমরের জন্য বেল্ট দেওয়া হয়, যাতে ঘাড় ও কোমরে সাপোর্ট থাকে। যদি দেখা যায় তাতে উপকার হচ্ছে না, বরং পায়ে, হাতে নিউরোলজিক্যাল দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে, তখন অস্ত্রোপচার বাধ্যতামূলক। একাধিক বার ডিস্ক সার্জারি হয়েছে এমন রোগীও আছেন। এখন এমআরআই করে এবং মাইক্রোস্কোপের ব্যবহারে উন্নতমানের সার্জারি হচ্ছে। ফলে অপারেশনের পরে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন,’’ বললেন ডা. সিংহ। মনে রাখা জরুরি, আমাদের শরীরে গঠনমূলক কাজ চলতে থাকে ৩০ বছর বয়স অবধি। ৩০ থেকে ৪৫ একই জায়গায় থেমে থাকে। ৪৫-এর পর থেকে ক্ষয় চলতে থাকে শেষ বয়স অবধি। ‘‘তিরিশের পর থেকে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম ও সুষম আহার প্রয়োজন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কাজের জায়গায় চেয়ারে ঠিক ভঙ্গিমায় বসতে হবে। একটানা এক জায়গায় না বসে থেকে কিছুক্ষণ অন্তর চেয়ার ছেড়ে উঠে একটু হেঁটে আসবেন। কিছু নিয়ম মেনে চললে অবশ্যই ডিস্ক ডিজেনারেশন নিয়ন্ত্রণ করা যায়,’’ বললেন ডা. শঙ্করপ্রসাদ সিংহ।

ডিস্ক ডিজেনারেশন এড়াতে কিছু নিয়ম

  • সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না।
  • জলের বালতি, ভারী জিনিস তোলা বা ঠেলা এড়িয়ে চলতে হবে।
  • ঘর মোছার জন্য স্ট্যান্ড ব্যবহার করতে হবে।
  • দাঁড়িয়ে রান্না করলে মাঝে মাঝে চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিতে হবে।
  • রাতের খাবার সাড়ে আটটার মধ্যে সেরে ফেলতে পারলে ভাল।
  • টেবিল-চেয়ারে বসে খেলেই ভাল।
  • মাটিতে বসা এড়িয়ে চলুন।
  • নিজের সুবিধে অনুযায়ী খাট বা চেয়ারের উচ্চতা স্থির করুন।
  • চেয়ারে বসার সময়ে খেয়াল করতে হবে যাতে বসার ভঙ্গি ঠিক থাকে।
  • শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে ওঠার সময়ে একদিকে পাশ ফিরে উঠতে হবে।
  • মেঝেতে বা বিছানায় পা মুড়ে, হাঁটু গেড়ে বা উবু হয়ে বসা যাবে না।
  • গাড়ি চালানোর সময়ে লাম্বার কুশন ব্যবহার করা ভাল।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

অনেকেই ৫০-৫২ বছর বয়সে জিমে যাওয়া শুরু করেন। তাঁদের অবশ্যই জিমে যাওয়ার আগে ডাক্তারের কাছে গিয়ে কী ধরনের এক্সারসাইজ় তাঁরা করতে পারবেন, তা জেনে নেওয়া জরুরি। ওই বয়সে কিছু শারীরিক বাধ্যবাধকতা এসে যায়। বিশেষত কার্ডিয়াক সমস্যা। ডিস্ক ডিজেনারেশন পুরোপুরি এড়ানো যায় না। তাই সময় থাকতেই সচেতন ভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bone Health Health care
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy