Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Fitness Tips

কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন রোগের লক্ষণ

বিশ্রাম এবং নিয়মিত ভেপার নিলে অ্যাকিউট ল্যারেনজাইটিস সেরে যায়। বাড়াবাড়ি হলে অ্যান্টি-বায়োটিক বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২১ ০৮:১৩
Share: Save:

ঠান্ডা লেগে বা খুব চেঁচামেচি করে গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া... খুবই সাধারণ উপসর্গ। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে গলার স্বরে পরিবর্তন হলেও, অনেকে সজাগ হন না। কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন বড় রোগের লক্ষণ হতে পারে। যদি সাধারণ ঠান্ডা লেগে গলা বসে যায় বা কণ্ঠস্বর পাল্টে যায়, তা দিনকয়েকের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না হলে ইএনটি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করতে হবে।

ল্যারিংক্স বা স্বরযন্ত্রের অবস্থান স্পর্শকাতর জায়গায়। বাইরে থেকে এটি দেখা যায় না। আপার এয়ারওয়ে এবং লোয়ার এয়ারওয়ের সংযোগস্থলে থাকে দু’টি ভোকাল কর্ড। এর পরে শুরু হয় ট্র্যাকিয়া বা শ্বাসনালি, যা ফুসফুসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। অর্থাৎ স্বরযন্ত্রের কারণে আমরা কথা বলতে পারি। আবার শ্বাসনালির প্রবেশদ্বারে এর অবস্থান হওয়ায় সুস্থ ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের সঙ্গে ভোকাল কর্ডের সম্পর্ক রয়েছে। গলার স্বর পাল্টে যাওয়া মানে ভোকাল কর্ডের ছন্দে সমস্যা হচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এর দেওয়াল মোটা হয়ে যায়।

ল্যারেনজাইটিস

গলার স্বর পরিবর্তনের সবচেয়ে প্রচলিত কারণ হল ল্যারেনজাইটিস। এটি দু’প্রকার হতে পারে। অ্যাকিউট এবং ক্রনিক।

অ্যাকিউট ল্যারেনজাইটিস সাধারণত ঠান্ডা লেগে বা হঠাৎ খুব জোরে চিৎকার করে কথা বলার কারণে হয়। এসি এবং নন-এসির মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন, ঠান্ডা কিছু খাওয়া থেকে অ্যাকিউট ল্যারেনজাইটিস হতে পারে।

বিশ্রাম এবং নিয়মিত ভেপার নিলে অ্যাকিউট ল্যারেনজাইটিস সেরে যায়। বাড়াবাড়ি হলে অ্যান্টি-বায়োটিক বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। তবে মূলত এর চিকিৎসা, গলাকে বিশ্রাম দেওয়া।

ক্রনিক ল্যারেনজাইটিস

পেশার কারণে জোরে বা বেশি কথা বলতে হয় যাঁদের, তাঁদের ল্যারেনজাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কারও কারও ক্ষেত্রে বিষয়টি ক্রনিক, সারা বছরের। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় অন্তর ব্যক্তির গলার স্বর বসে যায়। সাংবাদিক, আইনজীবী, ডাক্তার, গায়ক, এমনকি ট্রেনের হকারদেরও এই সমস্যা হতে পারে। সমস্যাটি যদি ক্রনিক হয়, তবে ভয়েস থেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তাঁদের পরামর্শ মতো নিয়মিত ভেপার নিয়ে, ভোকাল হাইজিনের দিকটিও মাথায়
রাখতে হবে।

ইডিমা: ভোকাল কর্ডে অনেক সময়ে ফ্লুয়িড জমে যেতে পারে। সেটিও ক্রনিক ল্যারেনজাইটিসের কারণ। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসা হয়।

এ ছাড়া অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণেও ক্রনিক ল্যারেনজাইটিস হতে পারে। অর্থাৎ পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড উঠে এসে ল্যারি‌ংক্সের
ক্ষতি করে, যার ফলে কণ্ঠস্বর কর্কশ হতে থাকে।

ভোকাল কর্ডে গ্রোথ...

গলাকে বিশ্রাম দিয়ে, অ্যান্টি-বায়োটিক বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেয়েও যদি স্বাভাবিক স্বর ফেরত না আসে, সে ক্ষেত্রে বুঝতে হবে অন্য কোনও গুরুতর সমস্যা হচ্ছে। দেরি না করে তখনই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ইএনটি বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর দত্ত এমন বেশ কিছু রোগ সম্পর্কে সতর্ক করে দিলেন।

এ ক্ষেত্রে রোগী দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তিত কণ্ঠস্বরের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। ইএনটি বিশেষজ্ঞরা এন্ডোস্কোপ বসিয়ে ল্যারিংক্সের জায়গাটি পর্যবেক্ষণ করেন। যদি দু’টি ভোকাল কর্ডে সরষে বা মুসুর দানার মতো কোনও নডিউল থাকে, তখন আগে চিকিৎসকেরা দেখেন, ওষুধ দিয়ে বিষয়টি আয়ত্তে রাখা যাবে কি না। তাই কোনও গ্রোথ থাকা মানেই যে সার্জারি একমাত্র পথ, তা কিন্তু নয়।

কিন্তু যদি পলিপ, সিস্ট বা নডিউল ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণের আওতার বাইরে চলে যায়, তখন মাইক্রো সার্জারি একমাত্র পথ। ডা. দীপঙ্কর দত্তের কথায়, ‘‘এটি খুব সাধারণ সার্জারি। যে হাসপাতালে যেমন সেটআপ, সেই ভাবে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করেন। লেসারের মাধ্যমেও হতে পারে, আবার ছুরি-কাঁচি দিয়েও। যে দিন সার্জারি করা হয়, সে দিন বিকেলেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুধু সার্জারির পরে তিন-চার দিন গলাকে বিশ্রাম দিতে হবে। অর্থাৎ কথা বলা যাবে না। পঞ্চম দিন নাগাদ রোগীকে প্রথম কথা বলানো হয়। রোগী তাঁর স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর ফিরে পান।’’

তবে এ ক্ষেত্রে ওই বাদ যাওয়া মাংসপিণ্ডটির বায়পসি করা হয়। বায়পসি রিপোর্ট যদি ম্যালিগন্যান্ট আসে, তখন ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু করা হয়। ল্যারিংক্সের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির বদলে রেডিয়োথেরাপির প্রয়োগ বেশি প্রচলিত।

কেরাটোসিস

কেরাটোসিস মানেই ক্যানসার নয়। এটিকে বলা হয় প্রি-ম্যালিগন্যান্ট কন্ডিশন। যাঁরা বেশি ধূমপান করেন, দীর্ঘদিন নিকোটিন সেবনের ফলে তাঁদের ল্যারিংক্সে সাদা একটি আস্তরণ পড়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও রোগী পরিবর্তিত কণ্ঠস্বরের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। পরীক্ষা করে দেখা যায়, হয়তো তাঁর ল্যারিংক্সে কোনও গ্রোথ হয়নি। কিন্তু সাদা প্যাচ পড়েছে।

অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্যও সাদা প্যাচ পড়তে পারে। কিন্তু অ্যাসিড রিফ্লাক্সের চিকিৎসা করেও যদি সমস্যা আয়ত্তে আনা না যায়, তখন বুঝতে হবে কেরাটোসিসের কারণ প্রি-ম্যালিগন্যান্ট কন্ডিশন। এ ক্ষেত্রেও মাইক্রো সার্জারি একমাত্র পথ। এর পরেও বায়পসি করা হয়। ক্যানসার ছাড়াও এ ক্ষেত্রে আর একটি সম্ভাবনা দেখা যায়, যাকে বলে ডিসপ্লাশিয়া।

ডিসপ্লাশিয়া

এটিকে বলা হয় টোয়েলাইট জ়োন। অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থা নয়, আবার ক্যানসারও নয়। ডাক্তারি পরিভাষায় এটিকে বলা হয়, প্রি-ম্যালিগন্যান্ট বা কার্সিনোমা ইন সিটু। অর্থাৎ এই সাদা প্যাচ যদি কোনও ভাবে রয়ে যায় বা রোগী যদি ধূমপান থেকে বিরত না হন, তবে এই ডিসপ্লাশিয়াই পরবর্তী কালে ক্যানসারের আকার ধারণ করতে পারে।

এ ক্ষেত্রে জটিলতা বেশি। কারণ ক্যানসার ধরা পড়লে, তার চিকিৎসা শুরু করা যায়। কিন্তু ডিসপ্লাশিয়া ক্যানসারের পূর্ববর্তী স্টেজ। তাই এ ক্ষেত্রে রোগীদের তিন মাস অন্তর নিয়মিত ভাবে চেম্বারে গিয়ে গলা পরীক্ষা করানো আশু কর্তব্য। রোগী ঠিকমতো ফলো-আপ করালে, চিকিৎসকেরা সময় থাকতেই ধরতে পারেন যে, সাদা প্যাচ আবার ফিরছে কি না। হঠাৎ করে কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে গিয়ে ক্যানসারের তৃতীয় বা চতুর্থ স্টেজে গিয়ে ধরা পড়লে, তখনও চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু তা বেশ জটিল এবং রোগীর পক্ষে কষ্টকর। মনে রাখতে হবে, ভোকাল কর্ডের ক্যানসারের চিকিৎসা সম্ভব। প্রথম বা দ্বিতীয় স্টেজে ভোকাল কর্ডের ম্যালিগন্যান্সি ধরা পড়লে, তার চিকিৎসা করিয়ে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।

তাই অযথা যেমন আতঙ্কিত হবেন না, তেমনই কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হলে সময় থাকতে সজাগ হন।

অন্য বিষয়গুলি:

Fitness Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy