রাজ্যে মোট কত ডাক্তার বা নার্স রয়েছেন, সমস্ত ওষুধের দোকানে নিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত ফার্মাসিস্ট রয়েছেন কি না, জেলায় জেলায় ছড়িয়ে থাকা হাতুড়ে ডাক্তারের সংখ্যাই বা কত এমন সব প্রশ্নের কোনও সঠিক জবাব মজুত ছিল না এত দিন।
এ বার রাজ্যে শুরু হচ্ছে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী গণনার কাজ, যার পোশাকি নাম ‘হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সেন্সাস’। পূর্বাঞ্চলে এমন প্রকল্প এই প্রথম। এর ফলে কোনও এলাকায় আচমকা কোনও স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটলে সামাল দেওয়ার কাজটা অনেক সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। নানা ঘটনায় ঠেকে শিখেই এ বার তথ্য সংগ্রহে মন দিচ্ছে রাজ্য।
স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে প্রকল্পটি শুরু করছে সোসাইটি ফর হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভেইলেন্স। সহযোগিতায় পঞ্চায়েত ও মিউনিসিপ্যাল দফতর। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সরকারি বেসরকারি সমস্ত চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের যাবতীয় তথ্য এবং ছবি সংগ্রহ করা হবে এই গণনায়। এমনকী যে সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম, মূলত হাতুড়ে ডাক্তাররাই ভরসা, সে সব অঞ্চলে ঘুরে ওই হাতুড়ে ডাক্তারদের সম্পর্কেও যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এই প্রকল্পটি সফল হলে রাজ্যের স্বাস্থ্য মানচিত্রে অনেকটাই স্বচ্ছতা আসবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যে মেডিক্যাল কাউন্সিল রয়েছে। ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন দেয় তারাই। তা হলে ডাক্তারের মোট সংখ্যা মজুত নেই বলা হচ্ছে কেন? কাউন্সিল-কর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, মেডিক্যাল কাউন্সিলে ডাক্তারের নাম নথিভুক্ত থাকে ঠিকই। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার ‘আপডেট’ হয় না। ফলে যে চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে দশ-পনেরো বছর আগে, তাঁর নামও তালিকায় থাকে। তাই ওই তথ্যকে নির্ভরযোগ্য বলে ধরা সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্য সচিব মলয় দে বলেন, “এই ধরনের তথ্যপঞ্জি হাতের কাছে তৈরি থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের জন্য এখন আলাদা কাউন্সিল তৈরি হচ্ছে। সে জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য দরকার। তা ছাড়া কোথায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে কত ডাক্তার, নার্স রয়েছেন, উন্নত পরিষেবা দেওয়ার জন্য সেটাও জানা জরুরি। তাই এই প্রকল্পটিকে আমরা সময়োপযোগী মনে করছি।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রথমে বীরভূম ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় পাইলট প্রোজেক্ট শুরু হবে। পরে ধাপে ধাপে গোটা রাজ্যেই কাজ শুরু হবে। এক বছরের মধ্যেই গোটা রাজ্যের তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন। পঞ্চায়েত কর্মীরা গ্রামীণ এলাকাগুলির খবর অনেক বেশি রাখেন। তাই গণনার কাজে তাঁদেরও যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যের কোন অঞ্চলে কী ধরনের অসুখ হয় তার বিস্তারিত তথ্যও মজুত নেই। ‘সোসাইটি ফর হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভেইল্যান্স’-এর মাধ্যমে কিছু দিন আগে সেই কাজও শুরু হয়েছে। এর পোশাকি নাম ‘হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভেইল্যান্স’। বীরভূম জেলায় চারটি ব্লকের ৩৩৩টি গ্রামের ১৩,০০০ পরিবারের ৫৯ হাজার মানুষকে নিয়ে শুরু হওয়া এই ‘পপুলেশন প্রোজেক্ট’ এখন নজর কেড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারেরও।
সংস্থার তরফে চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর মতে, এই দুটি প্রকল্প পরস্পরের পরিপূরক। তাঁর কথায়, “সুন্দরবনের কোনও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যদি রোগের মানচিত্র তৈরি করতে হয়, তা হলে পাশাপাশি সেখানকার চিকিৎসা পরিকাঠামোর মানচিত্র তৈরি করাটাও আবশ্যিক। না হলে কাজটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।”
তাই কে, কোন রোগে ভুগছেন, কার ক’টি সন্তান, পরিবারে কেউ মারণ রোগে আক্রান্ত কি না সে সব তথ্য জানার পাশাপাশি কার কত জমি আছে, কে কত দূর পড়াশোনা করেছেন, পানীয় জলের উৎস কী, এক মাসে বাজার খরচ কত, বাড়ি থেকে স্কুল কত দূরে, ওষুধের দোকান কত দূর, বাজারে ঋণ রয়েছে কি না, জ্বালানি হিসেবে কী ব্যবহার হয়, কোন জলে বাসন মাজা হয়, সে সবও জানার কাজ চালাচ্ছেন সমীক্ষকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy