প্রতীকী ছবি
ঘটনা ১: দক্ষিণ কলকাতার রীতিমতো সচ্ছল পরিবারের অবসরপ্রাপ্ত ভদ্রলোক। হঠাৎ করেই এক দিন চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন যে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে কোভিড সংক্রমণের জেরে। তাই এখনই তাঁকে দাহ করা হোক। কিন্তু বেশি সংখ্যক আত্মীয়স্বজনকে ডাকার প্রয়োজন নেই। কারণ তাতে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।
ঘটনা ২: সমস্ত কাজ, খাওয়া-দাওয়া সবই ঠিকঠাক করছেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এক যুবক। কিন্তু প্রতি মাসেই তাঁর এক কেজি করে ওজন কমছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও কোনও চিকিৎসক কিছু ধরতেপারছেন না।
এই দু’টি ঘটনাই অন্য চিকিৎসকদের মাধ্যমে ‘রেফার’ হয়ে আসে শহরের মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষকেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব সায়কায়াট্রি’-তে। প্রথম ঘটনাটির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাইকোসিস (বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্কহীন, এমন বদ্ধমূল বিশ্বাস) উপসর্গ এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ‘আন্ডারকারেন্ট ডিপ্রেশন’ কাজ করছে বলে মনোবিদদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে।
কোভিড সংক্রমণ এবং সে কারণে লকডাউন, ঘরের মধ্যে বন্দি থাকা, স্বাভাবিক জীবনের ছন্দপতন, রুটি-রুজির অনিশ্চয়তা-সহ নানা কারণে যে মানসিক রোগীদের সংখ্যা বাড়বে, সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। বিশ্বে একাধিক সমীক্ষায় সে সংক্রান্ত তথ্যও উঠে এসেছে। কিন্তু তার তীব্রতা যে এতটা হবে, তা আন্দাজ করা যায়নি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
‘ইনস্টিটিউট অব সায়কায়াট্রি’-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা জানাচ্ছেন, উৎকর্ষকেন্দ্রে যখন নিয়ে আসা হয়, তখন দক্ষিণ কলকাতার ভদ্রলোক ক্রমাগত বলে চলেছেন, ‘আমি মরে গিয়েছি। আমার চোখে তুলসীপাতা দাও। আমাকে দাহ করে দাও।’ অধিকর্তার কথায়, ‘‘বাড়ির লোকেরা তাঁকে বোঝাতে গেলে ওই ভদ্রলোক রীতিমতো চিৎকার-চেঁচামেচি করে বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর পর্যন্ত করছিলেন। চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁকে সুস্থ করে তোলা হয়।’’
পেশায় ইঞ্জিনিয়ার যুবকের ক্ষেত্রেও চিকিৎসা করা হয়। তবে মনোরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই দু’টি ঘটনা বিন্দুতে সিন্ধু মাত্র। কারণ কোভিড সংক্রমণের কারণে মানসিক রোগীর সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব সায়কায়াট্রিতে চালু করা হয়েছে ‘কোভিড মেন্টাল হেলথ ক্লিনিক’। যেখানে কোভিডজনিত মানসিক সমস্যার সমাধানের জন্য রোগীরা সোম, বুধ ও শনিবার যোগাযোগ করতে পারবেন। উৎকর্ষকেন্দ্রের অধিকর্তার কথায়, ‘‘আমরা বিষয়টি রাজ্য সরকারকেও জানিয়েছি। কোভিড-অবসাদ সামলানোর জন্য আমরা এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) তৈরি করেছি।’’
মনোরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কোভিড-উত্তর পর্বে মানসিক রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ঘরে বন্দি, স্বাভাবিক জীবনযাপনে ছেদের কারণ-সহ এমনি অবসাদ তো রয়েছেই। তার উপরে পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য হয়তো কোভিডে মারা গিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে অন্য সদস্যেরা ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডার’-এ ভুগছেন। আর এ সবের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হয়েছেন ‘অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজ়অর্ডার’-এর (ওসিডি) রোগীরা। ঘনঘন হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজ় করার মতো বিষয়গুলি অনেকের ক্ষেত্রেই মানসিক রোগে পরিণত হয়েছে। উৎকর্ষকেন্দ্রের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পরিবারের কারও ওসিডি নেই। তবুও অনেকের মধ্যেই এই রোগ সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে। কোভিডের কারণে মানসিক রোগ যে বাড়বে, তা জানা ছিলই। কিন্তু সেটা যে এত সংখ্যক মানুষকে প্রভাবিত করবে, তা বুঝতে পারা যায়নি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy