Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
ন্যাশনাল

জুনিয়রদের পরীক্ষা, ঠাঁই নেই রোগীদের

জুনিয়র ডাক্তারদের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা, তাই হাসপাতালের বিশেষ-বিশেষ ওয়ার্ডে কিছু দিন রোগী ভর্তি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বা বন্ধ করে দেওয়া হবে! সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেরাই এমন অদ্ভুত নিয়ম বানিয়ে নিয়েছে কলকাতার অধিকাংশ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। ​বিষয়টি জানাজানি হলে স্বাস্থ্য দফতর এমনকী ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র কোপ নামতে পারে। তবু একটুও ভাবিত নয় তারা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০৬
Share: Save:

জুনিয়র ডাক্তারদের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা, তাই হাসপাতালের বিশেষ-বিশেষ ওয়ার্ডে কিছু দিন রোগী ভর্তি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বা বন্ধ করে দেওয়া হবে! সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেরাই এমন অদ্ভুত নিয়ম বানিয়ে নিয়েছে কলকাতার অধিকাংশ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ।
বিষয়টি জানাজানি হলে স্বাস্থ্য দফতর এমনকী ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র কোপ নামতে পারে। তবু একটুও ভাবিত নয় তারা। উল্টে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে খুল্লমখুল্লা নোটিস জারি করে পরীক্ষার সময়ে রোগী ভর্তি নিয়ন্ত্রণের কথা ঘোষণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এই ঘটনাই ঘটেছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেেজ।

১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর ন্যাশনালে মেডিসিনের স্নাতকোত্তরে প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা ছিল। সে জন্য মেডিসিনের আরএফ-২ ওয়ার্ডে রোগী ভর্তিতে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়। লিখিত নির্দেশও পাঠানো হয় চিকিৎসকদের কাছে। প্রশাসনিক কর্মী এবং মেডিসিনের একাধিক চিকিৎসকই বলেছেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণের অর্থ আসলে দু’দিন ওই ওয়ার্ডে কোনও রোগী ভর্তি না-করা। সেটাই মৌখিক ভাবে বলে দেওয়া হয়েছিল। মেডিসিনে ভর্তিযোগ্য রোগী এলেই রেফার করে দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁরা জানান, অন্য ওয়ার্ডে ওই রোগীদের ঠাঁই দেওয়া যায়নি কারণ আগে থেকেই সেখানে শয্যা ছাপিয়ে মেঝে পর্যন্ত রোগী ছিল।

গত ৬ জুন জেনারেল মেডিসিনের এমবিবিএস (সাপ্লি) প্র্যাক্টিক্যালের জন্য ৩ থেকে ৬ জুন ওই আরএফ-২ ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি নিয়ন্ত্রিত হয় নোটিস দিয়ে। ৩ জুন মেডিসিনের প্রধান পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়ের সই করা ওই নোটিস সুপার, অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে সমস্ত ওয়ার্ড মাস্টার, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার এবং সিস্টারদের পাঠানো হয়েছিল।

খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী বারংবার বলেছেন, হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরানো চলবে না। তা সত্ত্বেও কী ভাবে পরীক্ষার জন্য রোগী ভর্তি নিয়ন্ত্রিত হয়? এর জেরে অতি গুরুতর রোগীকেও যে রেফার করা হয়নি সেই নিশ্চয়তা কি ন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেন? ন্যাশনালের সুপার পীতবরণ চক্রবর্তীর জবাব, ‘‘এটা নতুন কিছু নয়। সব মেডিক্যাল কলেজে এটাই অলিখিত নিয়ম। পরীক্ষার কিছু দিন কয়েকটা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি করা যাবে না।’’ এ নিয়ে একেবারে বিজ্ঞপ্তি জারি করা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘মেডিসিনের প্রধানকে জিজ্ঞাসা করুন।’’

মেডিসিনের প্রধান পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘হাসপাতালে জায়গার অভাব। প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষায় এক-এক জন ছাত্রছাত্রীর অন্তত আধ ঘণ্টা সময় লাগে। পরীক্ষার জন্য একটা ওয়ার্ড পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। তাতে বাছাই করা কিছু কেস রাখতে হয়। এক শয্যায় একাধিক রোগী বা মাটিতে রোগী রাখা যায় না। বাধ্য হয়ে একটা ওয়ার্ডে ভর্তি আটকাতে হয়। স্বাস্থ্য দফতর পরীক্ষার আলাদা জায়গা না দিলে কী করব? রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা যেমন জরুরি, তেমন ডাক্তার তৈরি করাও তো জরুরি।’’

ইমার্জেন্সির একাধিক মেডিক্যাল অফিসার জানান, মেডিসিন, সার্জারি বা অর্থোপেডিক থেকে ওয়ার্ডে ভর্তি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ এলেই আমাদের অগত্যা রেফার বাড়িয়ে দিতে হয়। এমবিবিএসের পরীক্ষা হলে কমবেশি এক সপ্তাহ আর এমডি-এমএস হলে ২-৩ দিন এরকম চলে। তাঁদের কথায়, ‘‘পরীক্ষার জন্য টানা কয়েক দিন গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ভর্তি না-করে রেফার করলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে পারে। তাই ‘অটো কাট’ পন্থা নিই।’’ সেটা কি? তাঁদের ব্যাখ্যা, ‘‘রোগীর আত্মীয়দের জানানো হয়, ভিড়ের চোটে রোগীকে মাটিতে থাকতে হবে এবং তাতে রোগীর মৃত্যুও অসম্ভব নয়। ভয় পেয়ে তাঁরা নিজে থেকেই রোগীকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান। আমাদের আর রেফার লিখতে হয় না।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর বা এন আর এস-এর একাধিক চিকিৎসকের মতে, ‘‘সব হাসপাতালই প্র্যাক্টিক্যালের সময়ে ভর্তি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু পুরো বিষয়টাই চলে মৌখিক ভাবে। কেউ প্রমাণ রাখে না। ন্যাশনাল নোটিস জারি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য ‘‘মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন’’ বলে এড়িয়ে যান।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy