সারা দিনের নানা কাজে প্রত্যেক মা-বাবাই ব্যস্ত। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যৌথ পরিবারও এখন নিউক্লিয়ার। সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো, খেলার সঙ্গীর তালিকা ছোট হতে হতে এক বা দুইয়ে এসে থমকেছে। ফলে খুদেটির সারা দিনের সঙ্গী হয়ে উঠছে মনখারাপ। একে তো সারা দিন একা থাকার বিরক্তি, তার উপরে বাঁধা গতের জীবনে একঘেয়েমি গ্রাস করছে শৈশবকে। ফলে হতাশা দানা বাঁধছে শিশুমনেই। কিছু ক্ষেত্রে তার পরিণতিও ভয়ঙ্কর। তাই গোড়াতেই সন্তানের একার রাজ্য করে তুলতে হবে সুখের ও আনন্দের।
সমস্যা কোথায়?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মা-বাবারা সন্তানের হতাশার কারণ জানেন না। অনেক সময়েই হয়তো দেখা যায়, শিশুটির ঘর ভর্তি দামি খেলনা, নামী ব্র্যান্ডের বইয়ের স্তূপ। কিন্তু তার মাঝে বসেও শিশুটির মুখে হাসি নেই। কোনও কিছুতেই যেন তার আগ্রহ নেই। কারণ তার মনের খোরাক নেই। হয়তো তখন তার একছুটে দৌড়ে আসতে ইচ্ছে করছে সামনের মাঠ থেকে। বা বাড়ির পিছনের বাগানে গিয়ে দুটো পিঁপড়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। প্রথম সমস্যা মা-বাবা যা দিচ্ছেন আর সন্তান যা চাইছে, তার মাঝে ব্যবধান বিস্তর।
দ্বিতীয়ত, সমবয়স্ক, সমমনস্ক সঙ্গীর অভাব। শিশুটির সর্বক্ষণের সঙ্গী বলতে বেশির ভাগ সময়েই বাড়ির দাদু, ঠাকুমা অথবা সব সময়ে দেখভালের সঙ্গী। তাঁরা শিশুর মনের নাগাল না-ও পেতে পারেন।
তৃতীয়ত, রোজকার রুটিন। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বললেন, ‘‘মা-বাবারা নিজেদের কাজে বেরোনোর সময়ে সন্তান সারা দিন কী করবে না করবে, সেই রুটিন করে দিয়ে যান। তা দরকারও। কিন্তু মাঝেমাঝে রুটিন ভাঙাও জরুরি। ধরুন, উইকেন্ডে বিকেলে সে আঁকার ক্লাসে যায়। সেখানে এক দিন তার আঁকার ক্লাস ক্যানসেল করে ওকে নিয়ে বরং আইসক্রিম খেতে যান। দেখবেন, ওই একটা দিনের আনন্দই ও কত দিন মনে রাখবে।’’
এর পরেও সমস্যা আছে। সন্তান একা থাকতে থাকতে বড়রা যা করে, সেটাই করতে শুরু করে। হয়তো বাড়িতে ঠাকুমা সারা দিন টিভিতে সিরিয়াল দেখছেন। শিশুটিও তাঁর সঙ্গে সিরিয়াল দেখতে শুরু করে দিল। ফলে বয়স বাড়ার আগেই অনেক পরিণত চিন্তা তৈরি হতে শুরু করে। যা হয়তো আবার আপনার কাছে পাকামো মনে হতে পারে।
জরুরি কথা
সন্তানকে প্রয়োজনের বেশি খেলনা, রং বা উপহার দেবেন না। কম জিনিসের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিতে দিন সন্তানের মনোরঞ্জনের জন্য বা আপনার সময় নেই বলে ওর হাতে মোবাইল তুলে দেবেন না। বরং নিজেই সন্তানের আগ্রহ অনুযায়ী নানা ‘ডু ইট ইয়োরসেল্ফ’ শো দেখাতে পারেন। ও আগ্রহ পেলে সেগুলি নিজেই তৈরি করবে। কিন্তু স্ক্রিন টাইম বেঁধে দেওয়াও জরুরি বইয়ের সঙ্গে সখ্য তৈরি করাও জরুরি। ওদের বইয়ের দোকানে নিয়ে যেতে হবে। পড়তে না পারলে ‘টাচ অ্যান্ড ফিল’ বই দিয়ে শুরু করতে পারেন
কী করা যেতে পারে?
সন্তানকে দেখাশোনার জন্য যিনি থাকছেন, তাঁর উপরে অনেকটাই দায়িত্ব বর্তাবে। ফলে সন্তানের সঙ্গে কী ভাবে কথা বলবেন, ওর সঙ্গে কী ধরনের খেলা খেলবেন, সে বিষয়ে তাঁকেও বোঝাতে হবে। এমনকি আপনার করে দেওয়া রুটিন ভাঙার দায়িত্ব মাঝেমাঝে তাঁকেও নিতে হবে। তা হলে আপনার খুদেটি তাঁকে নিজের কাছের বন্ধু ভেবে ভরসা করতে শিখবে। ফলে আপনি ওর কাছে না থাকলেও ও একজন বন্ধুকে সব সময়ে কাছে পাবে। গাছ লাগানো, তার মাটি তৈরি করা ইত্যাদি শেখাতে পারেন। বার্ডহাউস রাখতে পারেন বাড়ির বাগানে। সেখানে পাখিদের আনাগোনা দেখেও ওর অনেকটা সময় কেটে যাবে। একঘেয়েমি কাটাতে ওর রোজকার খাবারেও বদল আনতে হবে। অনেকেই বাচ্চার জন্য একই ধরনের মাছের ঝোল বা মাংসের ঝোল রান্না হয় রোজ। সেখানে হঠাৎ সপ্তাহের মাঝে এক দিন দুপুরে ওর মনের মতো খাবার রান্না করে রাখতে পারেন। হতে পারে সেটা চাউ মিন বা বিরিয়ানি। কিন্তু সপ্তাহে এক দিন সেই নিয়ম ভাঙা মেনু থাকুক না হয় ওর জন্য। দিনের বাকি খাবারে ওর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান বহাল রাখুন। অনেক সময়েই অফিস থেকে ফিরেও কাজ পিছু ছাড়ে না। ফলে কিছু কাজ চলে মোবাইল বা ল্যাপটপে। সেই সময়ে যদি আপনার সন্তান এসে আপনার সঙ্গে খেলতে বা কথা বলতে চায়, তাকে ফেরাবেন না। বরং মিনিট দশেক হলেও ওর সঙ্গে একটু খেলুন। ওর সঙ্গে গল্প করুন। সেটুকুই ওর মনের খোরাক। বাড়িতে পোষ্যও রাখতে পারেন। পোষ্য কিন্তু খুব ভাল বন্ধু হয়। আর সন্তান একটু বড় হলে তার দেখভালের দায়িত্বও দিতে পারেন তাকে। তা হলে সেখানেও ওর খানিকটা সময় কেটে যাবে। তবে মাঝেমাঝে ওদের বোর হতে দেওয়াও জরুরি। বোরডম থেকে বেরোনোর রাস্তা ওদেরই খুঁজে বার করতে দিন। হতে পারে একার জগতে নতুন কিছুর হদিশ পেয়ে গেল সে এ ভাবেই।
মডেল: দীপ্তার্ক সেনগুপ্ত
ছবি: অমিত দাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy