ভালবাসার গল্প: এই বইয়েই মনোরোগীরা জানিয়েছেন তাঁদের অনুভূতির কথা।
হাসিতে ফেটে পড়েছিলেন সকলে। ডাক্তার-নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কেউই বাদ ছিলেন না। হাসির উৎস ওই হাসপাতালে বছর চারেক ধরে ভর্তি এক রোগিণীর মন্তব্য। তিনি বলেছিলেন, বিয়ে, সংসার, স্বাভাবিক দাম্পত্য—এ সবে তাঁর বড় আগ্রহ। মানসিক রোগিণীর এমন আগ্রহ শুধু কৌতুক নয়, তাচ্ছিল্য উদ্রেক করেছিল রাজ্যের সব চেয়ে বড় মানসিক হাসপাতালে।
এ বার অন্য পথে হাঁটা। একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মনোরোগীদের যৌনতার বিষয়টি সামনে আসছে, এই প্রথম। ‘এই আমাদের প্রেমকাহিনী’ নামে একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে মনোরোগী এবং সেরে ওঠা মনোরোগীরা জানিয়েছেন, যৌনতা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ও মতামত। বইটি সম্পাদনা করেছেন সুমিতা বীথি।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা বলছেন, যৌনতা সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে বহু সময়েই মানসিক রোগীরা নির্যাতনের শিকার হন। অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়েন অনেকে। বিভিন্ন মানসিক হাসপাতালে তো বটেই, মানসিক রোগীদের হোম-এও একাধিক ঘটনার নজির আছে। ধাপে ধাপে বিভিন্ন মানসিক হাসপাতালে এ জন্য কর্মশালার আয়োজন করা হবে।
এই কাজে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির তরফে জানানো হয়েছে, গোড়ায় মনোরোগীদের মনের কথা খুলে বলার মতো পরিবেশ তৈরি করা হবে। নিজেদের শরীরকে তাঁরা কী ভাবে, কতটা চেনেন তা জানতে চাওয়া হবে। প্রেম বলতে তাঁরা কী বোঝেন, তাঁদের জীবনে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল কি না, সেটাও জানার চেষ্টা হবে। মনোবিদদের পাশাপাশি এই কাজে সাহায্য করবেন অন্য চিকিৎসকেরাও। সুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পাঠ দেবেন তাঁরাই।
কাদের তা শেখানো হবে? যে মনোরোগীরা চিকিৎসায় সেরে উঠে বাইরের জগতে পা রাখতে চলেছেন, মূলত তাঁদের কথাই ভাবা হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মী তথা এই প্রকল্পের নেপথ্যে অন্যতম কর্ণধার রত্নাবলী রায়ের মতে, মানসিক রোগীদের মূল স্রোতে ফেরানো নিয়ে নানা চর্চা হয়। কিন্তু প্রেম এবং যৌনতার বোধকে দূরে সরিয়ে রেখে তাঁদের মূল স্রোতে ফেরানো সম্ভব নয়। বরং আর পাঁচ জন মানুষের মতো ওঁদেরও যে সমস্ত চাহিদা রয়েছে, সেই কথাটা সামনে আনা জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও কাজটা যে শুরু হল, সেটাই বড় কথা।’’
এই প্রকল্পে অংশ নেওয়া আর একটি সংগঠনের তরফে সর্বাণী দাস রায় জানান, এ নিয়ে সম্প্রতি বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে মানসিক রোগিণীরা নিজেদের জীবনের কথা বলেছেন। এসেছে যৌনতার প্রসঙ্গও। সর্বাণী বলেন, ‘‘মানসিক রোগীদের যাত্রাপথ খুব সুগম নয়। বহু ক্ষেত্রেই একটি মেয়ে দেখে যে, বাড়ির পুরুষরাই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি, যৌনতার ক্ষেত্রেও। এই অবস্থায় তাঁরা নিজেদের ইচ্ছা কী ভাবে তুলে ধরবেন, সেই পথটা তাঁদের দেখানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে।’’
মনোবিদেরা মনে করছেন, এমনিতেই যৌনতা নিয়ে সমাজের নানা স্তরে সংস্কার রয়েছে। মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে সেই সংস্কারের সঙ্গে যোগ হয় অবদমন। মনোবিদ মোহিত রণদীপ বলেন, ‘‘সংস্কার আর মানসিক রোগ, এই দুইয়ে মিলে নিষিদ্ধ জগতের চেহারা নেয়। সেই দরজায় ছোট করে হলেও ধাক্কা দেওয়া গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy