Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

করোনা নিয়ে বার বার বদলাচ্ছে নিদান, বিভ্রান্ত গবেষকেরা

সব মিলিয়ে করোনা গবেষণা প্রসঙ্গে ডব্লিউএইচও-র অবস্থান কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে গবেষক মহল কার্যত দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২০ ০৩:৫০
Share: Save:

কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, কোন পরিস্থিতিতে কী করণীয়—করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে গত কয়েক মাসে এ নিয়ে একাধিক নিদান দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটির সঙ্গে অন্যটি মেলেনি, কোনও ক্ষেত্রে আবার তা পরস্পর বিরোধীও বটে! এ নিয়েই বিশ্বের গবেষকেরা আপাতত দ্বিধাবিভক্ত।

তাঁদের একাংশের বক্তব্য, করোনা গবেষণা যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, সেখানে কোনও নির্দিষ্ট মন্তব্য করা উচিত নয়। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। অন্য পক্ষের অবশ্য দাবি, ঘটমান কোনও সংক্রমণে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। গবেষণার মাধ্যমে যে সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে, ডব্লিউএইচও সেটাই বলছে মাত্র। সব মিলিয়ে করোনা গবেষণা প্রসঙ্গে ডব্লিউএইচও-র অবস্থান কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে গবেষক মহল কার্যত দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে।

‘ইন্ডিয়ান ভাইরোলজিক্যাল সোসাইটি’-র সেক্রেটারি জেনারেল বিজ্ঞানী যশপাল সিংহ মালিক বলছেন, ‘‘ডব্লিউএইচও-র মন্তব্য সবাইকে দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলছে। ইতিমধ্যেই প্রমাণিত তথ্যের ক্ষেত্রেও তারা অনেক বিপরীত মন্তব্য করছে। ফলে সমাধানের পরিবর্তে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।’’ গবেষকেরা জানাচ্ছেন, সার্স-কোভ-২ একদম নতুন ভাইরাস। তাই তার সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনও কিছু বলা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। কারণ, সামগ্রিক গবেষণার ফলাফল জানতে আরও অনেক সময় লাগবে। কিন্তু তার আগেই কোনও নির্দিষ্ট মন্তব্য করাটা কৌশলগত ভাবে ডব্লিউএইচও-র ভুল হচ্ছে। ‘মাইক্রোবায়োলজিস্টস সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র প্রেসিডেন্ট এ এম দেশমুখের কথায়, ‘‘এই ভাইরাস সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা রয়েছে। অথচ ডব্লিউএইচও-র সদস্যেরা কোনও তথ্য চূড়ান্ত প্রমাণিত হওয়ার আগেই মন্তব্য করে দিচ্ছেন। এতেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থান বদল

আগে যা বলা হয়েছে

• উপসর্গহীন রোগীর থেকে সংক্রমণ ছড়ায়।

• মল থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রামাণ্য তথ্য নেই।

• বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায় না।

• আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা স্বাস্থ্যকর্মী এবং যাঁদের কাশি-হাঁচি হচ্ছে, তাঁরাই শুধু মাস্ক পরবেন।

পরে যা বলেছে

• উপসর্গহীন রোগীর থেকে সংক্রমণ ছড়ায় না। ফের বলা হয়, উপসর্গহীন রোগীরা ছড়ায় কি না, তা এখনও অজানা।

• মল থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

• পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন নেই এমন জায়গায় সংক্রমিতের সঙ্গে অনেক ক্ষণ থাকলে বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

• দূরত্ব-বিধি মেনে চলা সম্ভব নয় এমন জায়গায় বা সংক্রামক অঞ্চলে সকলেই মাস্ক পরবেন।

তবে বিশেষজ্ঞদের অন্য একটি অংশ মনে করছেন, সার্স-কোভ-২ বেটা করোনাভাইরাস প্রজাতির হলেও একদম নতুন। এমনকি, করোনাভাইরাসের আগের দু’টি সংক্রমণ, সার্স (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) এবং মার্সের (মিডল ইস্ট রেসপিরেটেরি সিন্ড্রোম) অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও সার্স-কোভ-২ সম্পর্কে এখনও দিশা পাওয়া যাচ্ছে না। এর সংক্রামক ক্ষমতাও আগের দু’টি ভাইরাসের তুলনায় অনেক বেশি। ডব্লিউএইচও-র সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘সার্স ও মার্স আগে হলেও সেই সংক্রমণগুলি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যেই আবদ্ধ ছিল। কিন্তু সার্স-কোভ-২ তো বিশ্বের ২১৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে! ফলে এর সঙ্গে অন্যদের তুলনা করাটা ভুল।’’ এ ক্ষেত্রে তাঁরা অন্য অনেক মহামারির প্রসঙ্গও তুলে আনছেন। তাঁদের বক্তব্য, অতীতে কলেরা, প্লেগ-সহ একাধিক মহামারি নিয়েও প্রাথমিক পর্যায়ে ধোঁয়াশা ছিল। যে কোনও মহামারির ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়ে থাকে। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এক গবেষকের কথায়, ‘‘মহামারির ইতিহাস ঘাঁটলেই বোঝা যাবে এখন যেমন বিভিন্ন তত্ত্ব বিভিন্ন সময়ে উঠে আসছে, তখনও তেমনই হয়েছিল।’’ মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায় আবার এডস রোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করছেন। তিনি জানাচ্ছেন, এডস অসুখ হিসেবে প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল ১৯৮১ সালে। ১৯৮৫ সালে এইআইভি ভাইরাসটি আবিষ্কার হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘এইচআইভি আবিষ্কারের পরে ৩৫ বছর কেটে গিয়েছে। তাও আমরা পুরোটা জেনে উঠতে পারিনি। সেখানে সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ এখনও এক বছরও পেরোয়নি। সবে আট মাস হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অভিযুক্ত করা ঠিক হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus COVID-19 WHO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy