Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
সঞ্জীবন

চিকিৎসার খরচ কমাতে হাসপাতালে বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রতিষ্ঠান চালানোর খরচ বাঁচাতে বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র গড়ছে হাসপাতাল।

হাওড়ার ফুলেশ্বরের সেই হাসপাতাল।

হাওড়ার ফুলেশ্বরের সেই হাসপাতাল।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

হাওড়ার ফুলেশ্বরে দেড় মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হয়ে গেলে হাসপাতালের নিজস্ব বিদ্যুতের চাহিদা যেমন মিটবে, তেমনই উৎপাদন প্রক্রিয়াজাত গ্যাস ব্যবহার করে কমানো হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের খরচও। এই বাড়তি সঞ্চয়ের লভ্যাংশ দিয়ে রোগীদের বাজারচলতি দরের চেয়ে কম খরচে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে সঞ্জীবন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের অধিকর্তা তথা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ শুভাশিস মিত্রের দাবি, ‘‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের দৌলতে আমরা যে টাকা বাঁচাব, সেই সাশ্রয়ের ভাগ দিলে চিকিৎসায় কোনও আপোস না করেও রোগী বা তাঁর পরিজনদের আর্থিক-স্বস্তি দেওয়া যায়। সেটাই মাথায় রেখেছি আমরা।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত কাঠ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। পোশাকি নাম, ‘উড বেসড কো-জেনারেশন পাওয়ারপ্ল্যান্ট’। সোজাসাপ্টা ভাষায়, কাঠকে না পুড়িয়ে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় উত্তপ্ত করে পাওয়া গ্যাস দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন। প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ১২-১৫ কোটি টাকা। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া তাপকেও রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহার করা হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কাজে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হিসেব, উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের জন্য তাদের খরচ হবে প্রায় পাঁচ টাকা, যা বাণিজ্যিক হারে কেনা বিদ্যুতের তুলনায় অনেকটাই কম। পাশাপাশি, বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে পাওয়া গ্যাস শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করে দৈনন্দিন বিদ্যুতের ব্যবহারও কমানো যাবে। দৈনন্দিন এই ‘সাশ্রয়’ টাকার অঙ্কে কম নয়। তারই লভ্যাংশ দিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসা পরিষেবার খরচ কমাতে চায় তারা।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ফুলেশ্বর স্টেশনের কাছেই এই হাসপাতালটি গড়ার জন্য যে সব চিকিৎসকেরা উদ্যোগী হয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই ছিলেন অনাবাসী। উদ্যোক্তাদের দাবি, শুরু থেকেই হাসপাতাল চালানোর খরচ নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হয়েছিল, যাতে সেই সাশ্রয় রোগীদের চিকিৎসার খরচ কমাতে সাহায্য করে। হাসপাতালের ঘরগুলি তৈরি করার সময়ে স্থাপত্যবিদ্যার প্রয়োগ এমন ভাবে করা হয়েছে, যাতে ঘরের ভিতরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাব না হয়। এতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার যেমন তুলনামূলক ভাবে কমানো যায়, কমে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবহারও।

দীর্ঘদিন স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় কাটিয়ে বছর তিনেক আগে দেশে ফিরেছেন শুভাশিসবাবু। তবে ২০০১ সালে গোড়াপত্তনের সময় থেকেই জড়িয়ে রয়েছেন এই হাসপাতালের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সময়ের সঙ্গে চিকিৎসার খরচ ক্রমশ বাড়ছে। সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা নিলে যদি চিকিৎসার মান ক্ষুণ্ণ না করে খরচটা কমিয়ে আনা যায়, তা করা হবে না কেন?’’ চিকিৎসার খরচ কমানোর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আর এক পরিকল্পনা—এলাকার বাসিন্দা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গজ এবং ব্যান্ডেজ তৈরি করানো। তৈরি করা গজ এবং ব্যান্ডেজ ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির কাছ থেকেই কিনে নেওয়া হবে, যাতে সাশ্রয় হয়। এই সাশ্রয়ের সুফলও রোগীরা
পাবেন বলে দাবি করেছেন
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালে বিকল্প বিদ্যুতের কেন্দ্র গড়ার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিকল্প শক্তি বিশেষজ্ঞ শান্তিপদ গণচৌধুরী। বলেছেন, ‘‘যে উপায়ে ওঁরা বিদ্যুৎ তৈরি করতে চাইছেন, তাতে পরিবেশে দূষণের আশঙ্কা নেই। উল্টে খরচ অনেকটাই কমবে। রাজ্যে বা রাজ্যের বাইরে যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে, এটাই আশার কথা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE