পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ভুজঙ্গ’ প্রেম নতুন নয়। ছবি: সংগৃহীত।
বিদেশি কুকুর, বিড়াল, মাছ, পাখি, এমনকি কচ্ছপও নয়! কেরল থেকে শহরে আস্ত একটি বল পাইথন উড়িয়ে এনেছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। না! শুটিংয়ের জন্য নয়। নিজের বাড়িতে পোষার জন্য। নাম রেখেছেন উলুপী। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সমাজমাধ্যমে নিজেই নতুন অতিথির কথা জানিয়েছেন। লিখেছেন, “উলুপীকে বাড়িতে স্বাগত। আমাদের জীবন চিরকালের জন্য বদলে গেল।”
এখন দেখার বিষয়, এই পোষ্য বাড়িতে আনার পর সত্যিই তাঁদের জীবন বদলে যায় কি না। সৃজিতের প্রতিবেশীরা কোনও আপত্তি জানান কি না! কারণ, সাপুড়ের ঝুলিতে সাপ থাকা আর গেরস্থ বাড়িতে সাপ পোষা এক বিষয় নয়। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সাপ ধরা, মারা বা সাপের শরীরের কোনও অংশ দিয়ে তৈরি জিনিস ব্যবহার করা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। তবে বিদেশ থেকে যদি এমন পশু আমদানি করা হয়, সে ক্ষেত্রে রাজ্য বন দফতর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক। প্রয়োজনীয় নথি না থাকলে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিধি ‘সাইটস’ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ করতে পারে রাজ্য বন দফতর। সে ক্ষেত্রে জেল এবং জরিমানা দুটোই হতে পারে। তবে জানা গিয়েছে, যাবতীয় অনুমতি নিয়েই বাড়িতে নতুন অতিথিকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিচালক।
সৃজিতের মতো বাড়িতে পাইথন কিংবা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী পুষতে গেলে কী করতে হবে?
বিদেশ থেকে কোনও সাপকে আমদানি করে বাড়িতে পোষ্য হিসেবে রাখার প্রক্রিয়াটি কিন্তু খুব সহজ নয়। রাজ্য বন দফতরের স্পেশ্যাল ডিউটি অফিসার কল্যাণ দাস আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘যে কোনও প্রাণী দেশ থেকে রফতানি বা আমদানির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর সাপটিকে যে রাজ্যে আনা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বন দফতরের চিফ ওয়ার্ডেনের থেকেও অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় তা বেআইনি।”
শুধু জ্যান্ত পশু-পাখিই নয়। অনেকের বাড়িতেই হাতির দাঁতের জিনিস থাকে। বাঘের চামড়া বা অন্যান্য পশু-পাখির মাথাও বাড়িতে থাকে। সে ক্ষেত্রেও কি একই রকম নিয়ম থাকে? কল্যাণ জানিয়েছেন, “যাঁদের কাছে ওনারশিপ সার্টিফিকেট রয়েছে, একমাত্র তাঁরাই এই ধরনের জিনিস রাখতে পারেন। তবে এখন এই ধরনের শংসাপত্র দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন করে কেউ আবেদনও করতে পারবেন না।’’ তিনি আরও জানালেন, ‘সাইটস’ (দ্য কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেনজার্ড স্পিশিস অফ ওয়াইল্ড ফনা অ্যান্ড ফ্লোরা)-এ উল্লেখ্য প্রাণীদের বিদেশ থেকে ভারতে বা দেশ থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট একাধিক দফতরের তরফে অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। বিদেশ থেকে কোনও পাইথনকে দেশে আনতে গেলে কত দিন সময় লাগতে পারে? কল্যাণের কথায়, ‘‘বলা কঠিন। কারণ কোথা থেকে আসছে, সেই দেশের সরকারের তরফে অনুমতি পাওয়া, কী ভাবে আনা হচ্ছে, তার উপর সময় নির্ভর করবে। তবে চিড়িয়াখানা বা ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখা, উভয় ক্ষেত্রেই একই নিয়ম রয়েছে।’’
এই পোষ্য রাখার পর বন দফতরের কি আর কোনও হস্তক্ষেপ করার জায়গা থাকে?
বন্যপ্রাণ রাখলেই তো হল না। তার যত্নআত্তিও করতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা করানোর দায়িত্ব মালিকেরই। তবে ওই বন্য প্রাণটিকে কোনও ভাবে ব্যবসার কাজে লাগানো হচ্ছে কি না বা অন্য কাউকে তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন কি না সে সম্পর্কে কোনও অভিযোগ পেলে বন দফতর থেকে লোক গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য বন দফতরের আধিকারিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy