Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

সচেতন থাকলে ঝুঁকি কম

উদ্বেগ নয়, করোনা উপসর্গ থাকলে জরুরি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া। পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থাও করেছে প্রশাসন। খোঁজ নিলেন দয়াল সেনগুপ্তউদ্বেগ নয়, করোনা উপসর্গ থাকলে জরুরি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া। পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থাও করেছে প্রশাসন। খোঁজ নিলেন দয়াল সেনগুপ্ত

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২০ ০০:৫৫
Share: Save:

সপ্তাহ তিনেক আগের কথা। জেলা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব করানো হয়েছিল ময়ূরেশ্বরের এক সন্তানসম্ভবা বধূর। অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাওয়ার আগে ওঁর লালারসের নমুনা নেওয়া হয়। দিন দুই পরে জানা যায়, উপসর্গহীন ওই প্রসূতি করোনা আক্রান্ত। ওই খবরে ওই প্রসূতি বা তাঁর পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তবে দিন কয়েকের মধ্যেই কোভিড হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মা ও সদ্যোজাত।

করোনা-পরীক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এখন এমন অনেক উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলছে। যাঁদের বাড়ি কন্টেনমেন্ট জোনে নয়, যাঁদের কোনও উপসর্গ ছিল না বা আপাতভাবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল না। আবার কারও সামান্য হাঁচি কাশি হয়েছিল। সন্দেহ নিরসনে টেস্ট করিয়েছেন বা চিকিৎসার জন্য কোনও হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। সেখানে টেস্ট করাতে গিয়েই ধরা পড়েছে তিনি করোনা আক্রান্ত।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা তেরোশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। দুই স্বাস্থ্য জেলার হিসেবে অবশ্য আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম। তবে বীরভূমের ক্ষেত্রে যেটা উল্লেখযোগ্য, সেটা হল আক্রান্তদের ৯০ শতাংশই উপসর্গহীন। যাঁদের উপসর্গ রয়েছে এমন আক্রান্তদের অনেকেই দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ভেন্টিলেটর সাপোর্ট প্রয়োজন হয়েছে মাত্র দু-চারজনরেই।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, করোনা আক্রান্তদের কী ধরনের উপসর্গ দেখা যাবে তা কিছুটা নির্ভর করে ভাইরাল লোডের উপর। অর্থাৎ যার শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ কম, তাঁর উল্লেখযোগ্য কোনও উপসর্গ দেখা যাবে না। মাঝারি মানের ভাইরাল লোড হলে অল্প জ্বর, গা ম্যাজম্যাজ করা, সামান্য গলাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে। আর ভাইরাল লোড বেশি হলে শরীর বেশি খারাপ হবে। তবে উপসর্গ থাক বা না থাক, করোনা আক্রান্ত রোগী অন্যদের অন্যদের সংক্রমিত করবেন। সেটা জেনে বা না জেনে। তাই সতর্কতা ভীষণ জরুরি। মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি বজায় রাথা. বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। এড়াতে হবে ভিড়, জমায়েত। উদ্বেগের বিষয়, এখনও যা সকলে মেনে চলছেন না।

আরেকটি পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। তা হল, কোনও ছোটখাট উপসর্গও দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ও করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত । সামান্য অসর্তকতাই অনেক সময় মারাত্মক আকার নিতে পারে। এই অতিমারি সৃষ্টিকারী ভাইরাসকে অবহেলা করা উচিত নয়। করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত বলে মত চিকিৎসকদের। কোনও করোনা আক্রান্তের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে এসেছেন এমন কেউও চাইলেই পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। করাচ্ছেনও। আক্রান্তের খোঁজও মিলছে প্রতিনিয়ত। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের ফল দ্রুত জানা যায়। আরটিপিসিআরএ সময় লাগে। কিন্তু কেউ লালারসের নমুনা দেওয়ার পর তার ফল না জানা পর্যন্ত নিজে আলাদা থাকলে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি কম।

কারও জ্বর, হাঁচি-কাশি হয়েছে, গলাব্যথা বা ডায়েরিয়ার মতো কোভিড উপসর্গে ভুগছেন বা চাইছেন করোনা টেস্ট করাতে। অথচ কোথায় যাবেন, কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, তিনি জানেন না। বাড়িতেও সাহায্যে করার কেউ নেই। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন জেলাবাসীকে সাহায্য করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ সংযুক্ত দু’টি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। কেউ এমন সমস্যায় পড়লে তিনি তাঁর নাম, কোথায় বাড়ি, নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র সামান্য কয়েকটি তথ্য লিখে ওই নম্বরে পাঠালেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। লালারসের নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন হলে কোথায় গিয়ে তাঁকে লালারসের নমুনা দিতে হবে সেটা বলে দেওয়া এবং সাহায্য করা হবে প্রশাসনের পক্ষ থেকেই।

সামনের সারির করোনা যোদ্ধা, যেমন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী পুলিশ, সরকারী কর্মীদের পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষা করা হচ্ছে যক্ষ্মা রোগী. অস্ত্রোপচারের বা ডায়ালিসিসের জন্য আসা রোগী বা যাঁদের উপসর্গ রয়েছে তাঁদেরও। এ ছাড়া সংক্রমণের গতি প্রকৃতি বুঝতে যে অংশে এখনও কোনও আক্রান্তের খোঁজ মেলে নি, সেখানে র‌্যান্ডম স্যাম্পলিং সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বীরভূম ও রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায়। দিনে গড়ে ১৫০০ পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট ও আরটিপিসিআর — দু’ধরনের পরীক্ষার মাধ্যেমে করোনা আক্রান্তকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।প্র তি ব্লকের একাধিক জায়গায় এবং পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডেও করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। কখন কোথায় পরীক্ষা হবে সেটা স্থানীয় বাসিন্দাদের জানানো হচ্ছে ।

কেউ করোনা আক্রান্ত হতে পারেন সন্দেহ হলে বা পরীক্ষা করাতে চাইলে সরাসরি হেল্পলাইন নম্বরে জানাতে পারেন। কিন্তু সেটাও তো সবাই পারবেন না, তাহলে তিনি কী করবেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘প্রয়োজনে সরাসরি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে যেতে পারেন। এলাকার আশাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, পঞ্চায়েত প্রধান, বিএমওএইচ, বিডিও কিংবা ওসি আইসিকে বললেও তাঁকে কী করতে হবে বলে দেওয়া হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy