ওজন বাড়ার নেপথ্যে রোজের অনেক ভুল অভ্যাস দায়ী। ছবি: শাটারস্টক।
মেদ নিয়ে চিন্তা করেন না এমন মানুষ প্রায় বিরল। শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে শরীরচর্চা থেকে শুরু করে ডায়েটে পরিবর্তন— কীই না করি আমরা! অথচ, চিরাচরিত কিছু অভ্যাসের মধ্যেই যে মেদের বীজ বোনা আছে, তা জানেন কি? কত ক্ষণ ঘুমোন দিনে? এই উত্তরের উপরই নির্ভর করে শরীরে মেদ জমার প্রবণতা। অনিদ্রার প্রকোপে বা কম ঘুমোলেই শরীরে মেদ জমা হবে বেশি।
তা বলে ভাববেন না পড়ে পড়ে ঘুমোলে ওজন কমবে৷ আবার এমনিতেই যাঁদের ঘুম কম, তাঁদেরও কম ঘুমের কারণে ওজন বাড়ে না৷ কিন্তু ঘুমোতে চেয়েও যদি না পারেন ও তার ফলে গ্রাস করে ক্লান্তি ও ঝিঁমুনি, তবে কিন্তু সতর্ক হন। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে দিনে ৫ ঘণ্টার কম বা ৯ ঘণ্ঢার বেশি ঘুমোলে শরীরে এমন সব পরিবর্তন হয় যে তার জেরে ওজন বাড়ে৷
কেন? ভেবে দেখুন রাতে ঘুম হয়নি অথচ হাতে প্রচুর কাজ, এ রকম অবস্থায় আমরা কফির পর কফি বা কোল্ড ড্রিঙ্ক খেয়ে তরতাজা থাকার চেষ্টা করি তো? ফাস্ট ফুড–জাঙ্ক ফুড বেশি খাই৷ বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, ঘন ঘন কম ঘুম হলে হাই ক্যালোরি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়৷ যার হাত ধরে বাড়ে ওজন৷ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই সব অঘটনের মূলে রয়েছে মস্তিষ্কের কারসাজি৷
আরও পড়ুন: কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে যা আপনাকে করতেই হবে
কম ঘুমে বেড়ে যায় শরীরের মেদ। ছবি: শাটারস্টক।
যত দোষ মস্তিষ্ক কোষ!
যত কম ঘুম, তত ভুল সিদ্ধান্ত৷ স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো একটা মিষ্টিতেই সামলে নিতে পারেন, কিন্তু ঘুমের অভাব হলে ‘না’ করার ক্ষমতা কমে যায়৷ কারণ ক্লান্ত অবস্থায় মস্তিষ্ক এমন কিছু চায়, যা তাকে তৃপ্তি দেবে৷ ‘আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ঘুম কম হলে গভীর রাতে টুকটাক খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়৷ সে খাবারও আবার সচরাচর কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর থাকে৷ শিকাগো ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা আবার দেখেছেন যে যাঁরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা ভাল ভাবে ঘুমোন, তাঁদের তুলনায় যাঁরা কম ঘুমোন, তাঁদের খাবারে চর্বির পরিমাণ থাকে প্রায় দ্বিগুণ৷ মোদ্দা কথা, কম ঘুমোলে চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ হাই ক্যালোরি খাবার খাওয়ার চাহিদা বাড়ে। তার পাশাপাশি বিপদ বাধায় হরমোনও৷
হরমোনের কারসাজি
কম ঘুমোলে খিদের হরমোন ঘ্রেলিনের পরিমাণ বাড়ে৷ খিদে বেড়ে যায়৷ কমে লেপটিনের পরিমাণ, যার কাজ মস্তিষ্ককে পেট ভরে যাওয়ার সংকেত দেওয়া৷ ফলে খাওয়ার পরিমাণ বাড়ে৷ আবার কম ঘুমের ফলে শারীরিক–মানসিক চাপ বাড়লে ক্ষরিত হয় স্ট্রেস হরমোন কর্টিজোল৷ ক্যালোরি খরচ কমে যায়৷ ওজন বাড়ার এও অন্যতম কারণ৷ শিকাগোর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মাত্র ৪ দিন কম ঘুমোলেই ইনসুলিনের কার্যকারিতা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়৷ ফলে ডায়াবিটিস ও মেদবাহুল্যের আশঙ্কা বাড়ে৷ কাজেই ঘুমের সঙ্গে কোনও সমঝোতা নয়৷
আরও পড়ুন: ডেঙ্গির চরিত্র বদল, নানা অঙ্গে বৈকল্য
কম ঘুমোলে জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।
ভাল ঘুমের জন্য
বিছানায় যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে কম্পিউটার, মোবাইল ও টিভি বন্ধ করুন৷ কাজের দুশ্চিন্তা মাথা থেকে বার করে দিন৷ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন ঘুমোনোর ঠিক আগে উষ্ণ জলে স্নান করা, বই পড়া, গান শোনা বা মেডিটেশনের মতো কোনও একটা অভ্যাস করে ফেলতে পারলে ভাল৷ ঘুমোতে যাওয়া ও সকালে ওঠার সময় ঠিক রাখুন৷ এমনকি ছুটির দিনেও এই রুটিন বদলাবেন না। শোওয়ার দেড়–দু’ঘণ্টা আগে হালকা খাবার খান৷ বেশি খেলে ঘুমের সমস্যা হবে৷ ঘুমোনোর ঠিক আগে মদ্যপান করবেন না, অম্বল হলে ঘুম আসতে অসুবিধে হবে৷ বেলা দুটোর পর থেকে চা–কফি–কোলা–চকোলেট খাবেন না৷ ক্যাফেইনের রেশ ৫–৬ ঘণ্টা পর্যন্ত শরীরে থেকে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে৷ অন্ধকারে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের ক্ষরিত হয়৷ কাজেই আলো নিভিয়ে দিন৷
আরও পড়ুন: আসছে শীত, সাবধানে রাখতে হবে বাচ্চাদের
কম ঘুমের ক্ষতি: এক নজরে
কম ঘুমোলে খিদের হরমোন ঘ্রেলিন ও স্ট্রেস হরমোন কর্টিজোলের পরিমাণ বাড়ে৷ বাড়ে খিদে৷ আবার লেপটিন কমে যায় বলে খেয়ে খেয়ে আশ মেটে না৷ সবে মিলে দিনে প্রায় ৩০০ ক্যালোরির মতো বেশি খাওয়া হয়ে যায়৷ জল, শাক–সব্জি–ফলের বদলে কার্বোহাইড্রেট ও জাঙ্ক ফুডের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে৷ দিনভর ক্লান্তি ও ঘুমঘুম ভাব লেগে থাকে৷ সে সময় ক্যাফিন কাজ করে ম্যাজিকের মতো৷ কাজেই কফি বা কোলার বদলে স্বাস্থ্যকর ক্যাফিনের উৎস কালো চা বা ডার্ক চকোলেট খেলে সব দিক রক্ষা হয়৷ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বসে যান কোলা পানীয় নিয়ে৷ তাতে এক দিকে যেমন বেশি ক্যালোরি ঢোকে শরীরে, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার তাগিদও বাড়ে৷ ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে ডায়াবিটিস ও মেদবাহুল্যের সূত্রপাত হতে পারে৷ শরীরের বিপাক ক্রিয়ার হার কমতে শুরু করে৷ কাজেই বেশি দিন এ রকম চললে ওজন বাড়তে পারে সে কারণেও৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy