Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Exam Stress

শিশুর পরীক্ষা-ভীতি দূর করবেন কী ভাবে? কী করবেন কী করবেন না?

পরীক্ষা নিয়ে শিশু যেন আতঙ্কে না ভোগে, সেটা দেখার দায়িত্ব বাবা-মায়েরই। অহেতুক ভয়, উদ্বেগ শিশুর শরীর ও মনে প্রভাব ফেলে। তাই বাবা-মায়েদের এই সময়ে বেশিই যত্নশীল হতে হবে।

Tips to help your child beat exam stress, how to encourage them

সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে ভয় দূর করবেন কী ভাবে। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ১৫:২৯
Share: Save:

পরীক্ষার আগে ভয় পাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই ভীতি যদি মাত্রা ছাড়া হয়ে যায় এবং সন্তান অকারণে দুশ্চিন্তা করতে শুরু করে, তখন তা চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। পরীক্ষার আগে, পরীক্ষা চলাকালীন বা ফল প্রকাশের আগে-পরে অনেকেই আতঙ্কে ভোগে। অতিরিক্ত পরীক্ষা-ভীতি থেকে ‘অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার’ দেখা দিতে পারে ছোটদের। তখন মনের পাশাপাশি, শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে থাকে। অহেতুক ভয় থেকে শরীর খারাপ হয় অনেকের। ঘন ঘন বমি, বুক ধড়ফড় করা, বার বার শৌচাগারে যাওয়া, কম কথা বলা, দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। তাই পরীক্ষার আগে এবং অবশ্যই ফল প্রকাশের পরে সন্তানের প্রতি একটু বেশিই যত্নশীল হতে হবে বাবা-মায়েদের। প্রয়োজনে খোলামেলা কথা বলতে হবে সন্তানের সঙ্গে। ভয় দূর করে কী ভাবে উৎসাহ দেওয়া যায় সে চেষ্টাও করতে হবে।

সন্তানের পরীক্ষা-ভীতি কী ভাবে দূর করবেন বাবা-মায়েরা?

১) পরীক্ষার আগে ইতিবাচক কথাবার্তা বলতে হবে। সন্তানের সঙ্গে কথা বলে জানুন, পরীক্ষার সিলেবাস শেষ হয়েছে কি না। কোন কোন বিষয়ে তার সমস্যা রয়েছে, ঠিক কোন বিষয়টি বুঝতে পারছে না বা পিছিয়ে পড়েছে। আগে সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখে একটা তালিকা করে ফেলুন।

২) সন্তান যে বিষয়গুলিতে পিছিয়ে রয়েছে সেগুলি নিয়ে স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলুন। গৃহশিক্ষক থাকলে তাঁকে সেই সব বিষয়ের উপর জোর দিতে বলুন। যদি অঙ্ক নিয়ে ভয় পায়, তা হলে নিয়মিত অভ্যাস করান। স্কুলের পড়ানো বা গৃহশিক্ষকের উপর শুধু নির্ভর করে থাকবেন না। প্রয়োজন হলে আপনি বাড়িতে পরীক্ষা নিন। কী কী ভুল হচ্ছে দেখিয়ে দিন। বার বার চর্চা করালে সেই বিষয়ের প্রতি ভীতি তো কাটবেই, সন্তানের আত্মবিশ্বাসও ফিরে আসবে।

৩) পরীক্ষা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা করবেন না। অনেক বাবা-মা ভাল ফল করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এতে সন্তানের উদ্বেগ আরও বাড়ে। অভিভাবকদের নিজেদেরও বুঝতে হবে ও সন্তানকেও বোঝাতে হবে যে সকলের মেধা সমান নয়। তাই কখনওই তুলনা টানবেন না।

৪) সারা বছর পড়াশোনা না করে পরীক্ষার মাস দুয়েক আগে কেউ পড়াশোনা শুরু করলে স্বাভাবিক ভাবেই তার উৎকণ্ঠা বাড়বে। তখন সে মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করবে। এ সমস্যা থেকে বার হতে বাবা-মা সন্তানকে একটা রুটিন তৈরি করে দেবেন। রোজের ব্যস্ততা থেকে সময় বার করে দেখুন সন্তান সেই রুটিন মেনে পড়াশোনা করছে কি না। পরীক্ষার সিলেবাস শেষ করতে হবে অন্তত মাস দুই-তিন আগে। পরীক্ষার দিন কয়েক আগে নতুন কোনও বিষয় নিয়ে পড়লে চলবে না। তাতেও উদ্বেগ তৈরি হবে।

৫) সন্তানকে গল্পের ছলে পড়ান। যে বিষয়গুলিতে দুর্বল সেগুলির ছোট ছোট পয়েন্ট লিখে বা গল্পের ছলে আলোচনা করুন ওর সঙ্গে। যে অধ্যায়টি পড়া হল সেটা পর দিন আবার পড়া এবং সেই সংক্রান্ত প্রশ্ন সমাধান করাও জরুরি৷

৬) পরীক্ষার আগে লেখার অভ্যাস বেশি রাখা জরুরি। সেই জন্য বাড়িতে মক-টেস্ট দেওয়ার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। এমন নয়, অনেক টাকা খরচ করে কোনও নামী প্রতিষ্ঠানে গিয়েই মক-টেস্ট দিতে হবে। সে ব্যবস্থা বাড়িতেই করুন। এতেও পরীক্ষা দিতে যাওয়ার ভয় কেটে যাবে।

৭) রাত জেগে পড়া একেবারেই ঠিক নয়। সন্তান যদি খুব ভোরে উঠতে না পারে, তা হলেও জোর দেবেন না। রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ঘুমের সময় কাটছাঁট করলে তার প্রভাব পড়তে পারে পড়াশোনায়। ক্লান্ত থাকলে কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারবে না।

৮) শরীরচর্চার রুটিনও তৈরি করে দিন। নিয়ম করে প্রতি দিন ২০ মিনিট শরীরচর্চা করতে পারলেও মানসিক চাপ দূর হবে। শিশুর যদি যোগাসন করার অভ্যাস থাকে তা হলে খুবই ভাল। না হলে একাগ্রতা বাড়াতে ডিপ ব্রিদিং, ধ্যান রোজ করতে হবে। একটানা না পড়ে বরং বিরতি নিতে বলুন। ফাঁকা সময়টাতে খেলাধূলা করা ভাল। তাতে মন হালকা থাকবে।

৯) খাওয়াদাওয়ার দু’-চারটে নিয়ম মেনে চলুন৷ ভয় বা আতঙ্ক থেকে ভাজাভুজি, মুখরোচক খাওয়ার প্রতি ঝোঁক বাড়ে শিশুদের। বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার খেতে শুরু করলে শরীর তো খারাপ হবেই, মনের চাপও বাড়বে। তাই এই সময়টাতে পুষ্টিকর ও হালকা খাবারই খাওয়াতে হবে সন্তানকে।

১০) পরীক্ষায় নম্বরের গুরুত্ব আছে ঠিকই, কিন্তু সেটিই যেন শিশুর লক্ষ্য না হয়ে ওঠে, সে দিকে নজর রাখুন। বেশি নম্বর পেতেই হবে, প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতেই হবে এমন প্রত্যাশা তৈরি করে দেবেন না। বরং নির্ভুল শেখাই যেন সন্তানের লক্ষ্য হয়, তার জন্য বাবা-মাকেই চেষ্টা করতে হবে।

১১) চেষ্টা সত্ত্বেও পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না হলেও বকাবকি করবেন না। অহেতুক বিষাদগ্রস্ত না-হয়ে পরের পরীক্ষার ফল কী ভাবে ভাল করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করুন। সকলে মিলে পাশে থাকার আশ্বাস দিলে শিশুর মনের জোর বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE