ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি ছবির দৃশ্যে রণবীর কপূর এবং দীপিকা পাড়ুুকোন। ছবি : সংগৃহীত।
হলিউড এবং বলিউডের বহু ছবিতেই দেখা যায় এক সময়ের প্রেমিক প্রেমিকা পরবর্তী জীবনে ভাল বন্ধু হয়েছেন। ভেঙে যাওয়া প্রেম, তাঁদের বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারেনি। কিন্তু সিনেমার পর্দায় যা সম্ভব, তা কি বাস্তবেও হয়। পুরনো প্রেম এবং তার যাবতীয় মানসিক বোঝা ভুলে কি সত্যিই দু’জন প্রাক্তন প্রেমিক এবং প্রেমিকা বন্ধু হতে পারেন! সেই বন্ধুত্বে কি কখনও পুরনো স্মৃতি চলে এসে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করবে না? মনোরোক চিকিৎসক জ়োয়ি শাহ বলছেন, ‘‘যাঁর প্রতি একটা সময় রোম্যান্টিক আবেগ ছিল, তাতে হঠাৎ ইতি টানা অবাস্তব!’’ তবে একই সঙ্গে জ়োয়ি এ-ও বলছেন, যে কিছু কিছু বিষয় মাথায় রাখলে বন্ধুত্ব হতে পারে না তা নয়। তবে বন্ধুত্ব রাখবেন কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবতে হবে, আদৌ বিষয়টা দু’তরফর জন্য স্বাস্থ্যকর কি না।
কী করে বুঝবেন প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত হবে কি না?
মনোরোগ চিকিৎসক জোয়ির মতে যেকোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে নিজে কী চাইছেন, কেন চাইছেন সেটা বোঝা জরুরি। নিজের চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হয়ে তার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া ভাল। তাই প্রথমেই নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন।
১। কেন বন্ধুত্ব চাইছেন?
মিয়ামির মনোবিদ ইদিত শারোনি দাম্পত্যের সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি বলছেন, যদি বিষয়টি এমন হয় যে, আপনারা প্রথমে বন্ধু ছিলেন, তার পরে প্রেম এসেছে এবং এখন মনে হচ্ছে বন্ধুত্বই ভাল ছিল, তবে সেটা একটা কারণ হতে পারে। অথবা যদি আপনাদের সন্তান থাকে এবং তাদের একসঙ্গে মানুষ করেন, তা হলেও বন্ধুত্ব হওয়া বা সুসম্পর্ক রাখার একটি কারণ থাকতে পারে। যদি ভাল বন্ধু হওয়াটাই একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তবে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু যদি দেখেন আপনার বন্ধুত্বের কারণ মানসিক নির্ভরতা বা প্রাক্তনকে ফিরে পাওয়ার আশা, তবে তা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়।
২। বিচ্ছেদের পরে যথেষ্ট সময় পেরিয়েছে কি?
জোয়ি এবং শারোনি দু’জনেই বলছেন, প্রাক্তনের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পর সেই আবেগ থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লাগতে পারে। মাসের পর মাস কেটে গেলেও অনেকে তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে পুরনো ক্ষত তাজা হতে সময় লাগবে না বেশি। বন্ধুত্ব করতে গিয়ে নিজের ক্ষতিই করে বসবেন আপনি। তাই নিজেকে সময় দিন। আগে দেখুন আপনি মানতে পেরেছেন কি না যে, দু’জনের মধ্যে যে রোম্যান্টিক সম্পর্ক ছিল, তা শেষ হয়েছে। কারণ অতীতের খারাপ লাগা এবং উত্তর না পাওয়া প্রশ্ন মাথায় নিয়ে বন্ধুত্ব হবে না।
৩। আপনি কি এখনও কষ্ট পাচ্ছেন?
সম্পর্ক কী ভাবে শেষ হয়েছে, তার উপরেও নির্ভর করবে আপনারা বন্ধু হতে পারবেন কি না। যদি এমন কিছু ঘটে থাকে, যার ফলে আপনি কষ্ট পেয়েছেন, তবে কিন্তু যত সময়ই পেরিয়ে যাক না কেন, পুরনো আবেগ বোঝা হয়ে থেকে যাবে। যা সম্পর্ককে স্বাভাবিক হতে দেবে না।
৪। বন্ধুত্বের সিদ্ধান্ত কি দু’তরফেরই?
জ়োয়ি বলছেন, ‘‘হয়তো আপনি চাইছেন বন্ধু হতে। কিুন্তু আপনার প্রাক্তন চাইছেন অস্বস্তি এড়াতে। দু’পক্ষেরই আগ্রহ না থাকলে বন্ধুত্ব জমবে না।’’ জোয়ির পরামর্শ, এ ব্যাপারে দু’জনে খোলাখুলি কথা বলে নেওয়াই ভাল।
৫। দু’জনের মধ্যে বন্ধু হওয়ার মতো মিল আছে কি?
প্রেম আর বন্ধুত্বের মধ্যে অনেক তফাৎ। প্রেমে অনেক সময় না বলা কথাও অনেক কিছু বলে যায়। দুই বন্ধুর মধ্যে কিন্তু কথা বলার মতো বিষয় থাকা দরকার। যদি না থাকে, তবে হয়তো দেখলেন, আপনারা নিজেদের পুরনো সম্পর্কের প্রসঙ্গেই ফিরে যাচ্ছেন। বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
৬। তিনিই কি আপনার একমাত্র বন্ধু?
সম্পর্কে থাকাকালীন সমস্ত সমস্যা নিয়েই বিশেষ মানুষটির কাছে যেতেন। বন্ধুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিন্তু তেমন না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোনও সময় তিনি আপনার সমস্যা শোনার জন্য না থাকলেও আপনি অন্য বন্ধুর কাছে যেতে পারবেন তো? জ়োয়ি বলছেন, এই ধরনের বন্ধুত্বে যাওয়ার আগে দেখে নিন আপনার আরও যথেষ্ট বন্ধু রয়েছে কি না।
৭। যদি প্রাক্তন নতুন সম্পর্কে যান বন্ধুত্ব রাখতে অসুবিধা হবে না তো?
দু’জনেই যখন একা তখন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কোনও না কোনও সময় আপনার প্রাক্তনের অন্য সম্পর্ক হতে পারে। জ়োয়ি বলছেন, নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, নিজের প্রাক্তনের নতুন সম্পর্কে তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারবেন তো!
৮। আপনার নতুন সঙ্গী ওই বন্ধুত্বকে কী ভাবে দেখবেন?
আপনি নতুন কোনও সম্পর্কে জড়ালে তিনি আপনাদের বন্ধুত্বকে কী ভাবে দেখবেন, সেটাও ভেবে দেখা জরুরি। আপনার বর্তমান প্রেমিক আপনাদের কথোপকথনের সঙ্গী হলে তাতে আপনার কোনও অসুবিধা হবে কি? সেটাও বোঝা জরুরি।
৯। সম্পর্ক আগের মতো হবে না, মানতে পারবেন তো?
প্রাক্তনের সঙ্গে সুস্থ বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হলে প্রথমে সম্পর্কের বদলে যাওয়াটা মেনে নিতে হবে। একা দেখা করা বা রাতে ভিডিয়ো কলে কথা বলার থেকে বন্ধুদের দল এক সঙ্গে থাকাটা অনেক বেশি উপযুক্ত হবে এক্ষেত্রে।
১০। সীমারেখা টানতে হবে!
কোথায় থামতে হবে জানতে হবে। যাতে কোনও রকম ভুল বোঝাবুঝি তৈরি না হয়। কারণ ভুললে চলবে না যে, সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। নিজেকে প্রশ্ন করুন সেই সীমারেখাটা টানতে পারবেন তো? হয়তো ঠিক করলেন, আপনারা কখনও একা দেখা করবেন না। সেক্ষেত্রে একা যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখান থেকে নিজেকে সরাতে পারবেন তো।
জোয়ি বলছেন প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব অসম্ভব নয়। শুধু কয়েকটি কঠিন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে আগে নিজেকে বুঝে নিন। তার পরেই এগোন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy