কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা ছিল সিগারেট কেনার ন্যূনতম বয়স করা হবে ২৫ বছর। কিন্তু সেই পরিকল্পনা আছে পরিকল্পনাতেই। বাস্তবায়িত হয়নি।
বেশ কয়েকটি রাজ্য গুটখা, গুড়াকু, পানমশলা বন্ধে ইতিমধ্যেই আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এখনও সে-পথে হাঁটেনি পশ্চিমবঙ্গ।
পথে পথে, সংবাদপত্রে, টিভি-সিনেমার পর্দায় প্রচার চালিয়েও তামাকু সেবনের অপকারিতা বোঝানো যাচ্ছে না। ডাক্তারদের দাওয়াই তাই কঠোর আইন। তামাকের মোকাবিলায় হাতিয়ার করার জন্য কড়া আইনের দাবি তুলেছেন তাঁরা। যাঁরা মুখ ও গলার ক্যানসার রুখতে মাঠে নেমে লাগাতার আন্দোলন করে চলেছেন, তাঁরা মনে করেন, যে-ভাবে তরুণদের মধ্যে মুখ ও গলার ক্যানসার বাড়ছে, তাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এক দিন না দিন তাঁদের দাবি মানতে বাধ্য হবে। সৌরভ দত্ত, তীর্থঙ্কর দেবনাথদের মতো চিকিৎসকেরা মনে করেন, মিছিল করে, মুখ ও গলার ক্যানসারে আক্রান্তদের পাশে নিয়ে মানুষকে সচেতন করার আন্দোলনে নেমে তাঁরা ওই দাবি পূরণ করাতে পারবেন। রবিবার তামাক-বিরোধী আন্দোলনকারীরা কলকাতার বুকে মিছিল করে বুঝিয়ে দিলেন, নিজেদের দাবি থেকে তাঁরা নড়ছেন না।
এ দিনের মিছিল থেকে পশ্চিমবঙ্গে তামাক-বিরোধী আইন জোরালো করতে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানায় ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক রাজু বিশ্বাসের মতে, একটি সিগারেট এক জন মানুষের ১১ মিনিট জীবনকাল কমে যায়। তামাকের প্রকোপ ক্রমশ মহামারির আকার ধারণ করছে। কী ভাবে তামাক সেবন কমানো যায়, তার পথ খুঁজে বার করার জন্যও রাজ্যকে অনুরোধ করেছে আইডিএ।
তামাক সেবনের ফলে ক্যানসারের প্রকোপ যে বাড়ছে, তা বারে বারেই জানিয়েছেন চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা। এই কারণে দেশে তামাক-বিরোধী আইনও চালু করা হয়েছে। কিন্তু সেই আইন এ রাজ্যে তেমন ভাবে বলবৎ করা হয় না বলেই অভিযোগ। বিশেষ করে প্রকাশ্যে ধূমপানের ক্ষেত্রে যতটা কড়া হওয়া উচিত, ততটা কড়া হয়নি এ রাজ্যের সরকার। হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক সুমন মল্লিকের মতে, খৈনি, গুটখার মতো তামাক সেবনে মুখের ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ছে। এই সব নেশার সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট-বিড়ির নেশা থাকলে ক্যানসারের আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে যায়।
ক্ষতি তো শুধু ধূমপায়ীদের নয়। যাঁরা বিড়ি-সিগারেট সেবন করেন না, ধূমপায়ীদের কাছাকাছি থাকার জেরে পরোক্ষ বিপদ ঘটছে তাঁদেরও। মুখের ক্যানসারের প্রকোপে লাগাম টানতে তামাক-বিরোধী যে-আইন রয়েছে, এ রাজ্যে তা যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করা হয় না। তার ফলে প্রকাশ্যে ধূমপানের ফলে যেমন ধূমপায়ীর ক্ষতি হয়, তেমনই পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হন বহু সাধারণ মানুষ। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর ধূমপানের জন্য প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। এ রাজ্যে ৩৬.৩ শতাংশ মানুষ ধূমপান করেন। ফলে যাঁরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন, তাঁদের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। এই পরিস্থিতিতেও প্রকাশ্যে ধূমপানের ক্ষতি ঠেকাতে প্রশাসনের কোনও সক্রিয়তা দেখা যায় না।
ক্যানসার চিকিৎসকদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, জোরালো আইন চালু না-করে শুধু সচেতনতা দিয়ে কি তামাক সেবন আটকানো যায়?
আন্দোলনকারীরা এ দিন চিনের একটি প্রয়াসের কথা জানান। তামাক-বিরোধী দিবস উপলক্ষে চিনে নতুন করে ধূমপান-বিরোধী আইন বলবৎ হয়েছে। ধূমপায়ীদের নিরিখে বিশ্বের প্রথম সারিতে চিনের স্থান। সে-দেশে প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। সরকারি অফিস, রেস্তোরাঁর সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল ও ঐতিহাসিক স্থানেও ধূমপান নিষিদ্ধ।
তামাক-বিরোধী দিবসে সচেতনতা বাড়াতে এ দিন বিকেলে মৌলালিতে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ থেকে একটি মিছিল বার করে আইডিএ। রাজুবাবুর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গকে তামাকমুক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy