কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা
ফোন একটু বেশি ক্ষণ ব্যস্ত থাকলেই সঙ্গীর পাল্টা প্রশ্ন ‘কার সঙ্গে এত ক্ষণ কথা বলছিলে’? অফিসের কাজে বাড়ি ঢুকতে খানিকটা দেরি হয়েছে বলে সঙ্গী বলে বসল, ‘চাকরি করতে হবে না! নিশ্চই কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছো।’ প্রতি মুহূর্তে নিজের সততার প্রমাণ দিতে দিতে ক্লান্ত?
সম্পর্কে এক বার সন্দেহের বীজ তৈরি হয়ে গেলে, সেই সম্পর্কের আয়ু বেশি দিন হয় না! একে অপরের প্রতি বিশ্বাস যে কোনও সম্পর্কের ভীত মজবুত করে। মনে সন্দেহ বাসা বাঁধলেই মুশকিল! সন্দেহ আদতে কি বাতিক? অসুখ? সন্দেহ মানেই কি অমূলক না কি তার মধ্যে কোথাও বাস্তব কিছু কারণও থেকে যায়? এই নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘আমাকে সন্দেহ করে!’
অদ্রিজা নামে এক মহিলা লেখেন, ‘‘আমার স্বামী আমায় বিয়ের আগেও সন্দেহ করতেন। ওর খালি মনে হত পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে আমি সম্পর্কে আছি। ভাবলাম বিয়ে করলে বুঝি ওর সন্দেহ করার বাতিক কমবে, কিন্তু এখন সে নিজের ভাইকে নিয়ে আমায় সন্দেহ করতে শুরু করছে। আমি আর পেরে উঠছি না। আমি ডিভোর্স চেয়েছি। কিন্তু ও আমাকে ডিভোর্সও দেবে না! এ ভাবে কী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়’?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক জন লিখেছেন, ‘আমি কি পোশাক পরেছি সন্দেহ শুরু তাই নিয়ে। হাতকাটা জামা পরেছি কেন? শাড়ি পরলে বক্ষভাঁজ কাকে দেখাচ্ছো— তাই নিয়েও সন্দেহ। সম্প্রতি রাস্তায় দুই যুবকের সঙ্গে আমায় কথা বলতে দেখে ওর সন্দেহ, আমি নাকি প্রেম করছি। কিছুতেই আমি ওকে বুছিয়ে উঠতে পারছি না, আমি তাঁদের চিনিও না। রোজ বাড়িতে অশান্তি হচ্ছে। আমি আর পেরে উঠছি না’।
অনুত্তমা বললেন, ‘‘বিশ্বাস সত্যিই বড় পলকা, কাচের মতো। তাতে যদি খুব গাঢ় দাগ পড়ে। একবার দাগ পড়লে, সেই আভাস কিন্তু চিরকাল থেকে যায়। সেই যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসাও কঠিন, এটাও সত্যি। সঙ্গীকে বুঝিয়ে বলুন, আপনি তাঁর সঙ্গে থাকতে চান কিন্তু তাঁর সন্দেহের সঙ্গে আপোস করে থাকা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। মন খুলে সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলুন। কঠোর হবে সেই সংলাপ। কিন্তু মনে রাখবেন, কখনওই ক্ষমাপ্রার্থী হবেন না। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায় আপনাদের দু’জনেরই। ভুল তো কিছু করেননি, তা হলে ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। সঙ্গীকে বোঝান যে, তৃতীয় কোনও ব্যক্তির জন্য আপনাদের সম্পর্কে ফাটল ধরছে না। ফাটল ধরছে কেবলমাত্র তাঁর অযৌক্তিক কিছু সন্দেহের কারণে। আর কিছুতেই তিনি যদি বুঝতে না চান, তা হলে বুঝবেন আপনাকেই বোধ হয় কোনও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
অনুত্তমা আরও বলেন, ‘‘সম্পর্কে প্রমাণ দেওয়ার অভ্যাস থাকলে সবার আগে তা বন্ধ করুন। সঙ্গীকে যদি সারা ক্ষণ প্রমাণ দিতে হয় তা হলে তো সম্পর্কে টেকাই দায় হয়ে যাবে। সঙ্গীর সঙ্গে পাসওয়ার্ড শেয়ার করতেই হবে এমনটা কিন্তু জরুরি নয়। তবে এই নিয়েও যদি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়, তা হলে আপনি চাইলে আইনের সাহায্য নিতেই পারেন। সঙ্গীকে বুঝিয়ে বলুন, সম্পর্কের বোমকেশ বক্সী না-ই বা হলেন তিনি। সম্পর্কে যদি গোয়েন্দাগিরিই করতে হয়, তা হলে সেই সম্পর্কে না থাকাই বোধহয় ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy