‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘বাঁচতে ইচ্ছে করে না’। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
পেশাগত চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়া, পারিবারিক অশান্তির মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ। জীবনের সব সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে মৃত্যুই হয়ে উঠছে অন্যতম অস্ত্র। বাইরে থেকে দেখে মৃত্যু ভাবনার আঁচ করা যায় না অনেক সময়ে। কয়েক মুহূর্ত আগেও নেটমাধ্যমে সক্রিয় থাকা ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আগে থেকে বোঝা যায়নি যে, তিনি আর বাঁচতে চাননি। লোকে কী বলবে ভেবে বোঝাতে চাননিও হয়তো। মরে যেতে চান শুনে অনেকেই তাঁকে দুর্বল ভাবতে পারেন, পরাজিত ভাবতে পারেন। সেই আশঙ্কায় ভিতরে শেষ হয়ে গিয়েও ভাল থাকার অভিনয় করে গিয়েছেন। বেঁচে থাকার কারণ তাই তো অনেক সময়ে বলা হয়ে ওঠে না। সেখানে বাঁচার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে, সেটা কী ভাবে বলবেন? এই নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘বাঁচতে ইচ্ছে করে না’। গত সপ্তাহেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন মনোবিদ। আগের পর্বের কিছু অমীমাংসিত সমস্যাকে তুলে ধরাই এই পর্বের মূল বিষয় ছিল। প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও বহু মানুষের কাছ থেকে ই-মেলে প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন জানিয়েছেন, তাঁর ২৬ বছর বয়স। বাঁচার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে। জীবনে কিছুই যেন মনের মতো হচ্ছে না। তিনি সঙ্গীতশিল্পী হতে চান। বড় বড় মানুষ তাঁর গান শুনে প্রীত হলেও কিছুতেই গান পেশা হয়ে উঠছে না। পাশাপাশি, সম্পর্কের সঙ্কটও আছে। গানে যদি সাফল্য আসত, তা হলেও জীবনের প্রতি এই বিরাগ জন্ম নিত না। শিল্পকে পেশা করে হয়তো উপার্জন করে উঠতে পারছেন না। তাতে কি সত্যিই দক্ষতা এবং যোগ্যতার ধার কমে? জনপ্রিয়তা না পেলেও আপনি এক জন সঙ্গীতশিল্পী। নিজের দক্ষতার, সম্ভাবনার খোঁজ পেলে অধ্যবসায় আর পরিশ্রম দিয়ে তা কী ভাবে আরও ধারাল করে তোলা যায়, সে দিকে খেয়াল রাখা সবচেয়ে জরুরি। বোঝালেন অনুত্তমা।
অন্য দিকে, নন্দিতা তাঁর মায়ের হয়ে কিছু সমস্যা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মায়ের বয়স ৫২। ইদানীং ভীষণ ভাবে হতাশায় ভোগেন। সব সময়ে নিজের মৃত্যু কামনা করেন। স্বপ্নেও নিজের মৃত্যু দেখতে পান। জীবনে অনেক না পাওয়ায় আছে। ছোটখাটো অনেক ব্যাপারে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
অনেক জমে থাকা রাগ থেকেও জীবনের প্রতি বিরাগ জন্মায়। সব অনুরাগ ফুরিয়ে যায়। রাগের সঙ্গে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তার একটা সংযোগ আছে। রাগ খুব ধ্বংসাত্মক আবেগ। রাগ নিজেকেই ধ্বংসের উপাদান হিসাবে কাজ করে মাঝেমাঝে। সেখান থেকেই অবসাদ আসে। মরে গেলেই সব সমস্যা, অবসাদের অবসান ঘটে না। দম, নিশ্বাস একেবারে ত্যাগ না করে জীবনে খানিক দম নেওয়া যেতে পারে। নন্দিতার মাকে বোঝালেন মনোবিদ।
মনের বল বাড়ানোর পথ এ পর্বেও বলে দিলেন অনুত্তমা। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময়ে পারস্পরিক সংলাপের মধ্যে দিয়ে মনের ভার কিছুটা হলেও লাঘব করা যায়। দু’টি শর্ত থাকবে, যে কথা এই বৃত্তে আলোচিত হবে, তা অন্য বৃত্তে গিয়ে চাউর করব না। দুই, কাউকে বিচার করতে যাব না। কারও দিকে আঙুল তুলব না। মনের কথা ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে দিয়েও মানসিক শুশ্রূষার একটি ফল্গুধারা বজায় থাকাই কাম্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy