ওজন কমাতে কোন খাবার খাওয়া চলে, কোনটা নয়, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যে প্রোটিন, তা সকলেই মানেন। কেউ বলেন ওজন কমাতে গেলে, কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে পাতে প্রোটিন রাখা দরকার। কেউ আবার মনে করেন, প্রক্রিয়াজাত খাবারই রয়েছে ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতার মূলে।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে মাছ, মাংস ডিম বা প্রক্রিয়াজাত প্রাণিজ খাবারের বদলে উদ্ভিজ্জ খাবার পাতে রাখলেই ওজন কমবে দ্রুত। উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত খাবার প্রক্রিয়াজাত হলেও আপত্তি নেই, তবে বাদ দিতে হবে প্রাণিজ খাবার।
সম্প্রতি বহু তারকাই ভিগান ডায়েটের দিকে ঝুঁকছেন। যেখানে প্রাণিজ কোনও খাবারই খাওয়া হয় না। দুধ, দইও বাদ যায় তালিকা থেকে। ‘নিউট্রিশন অ্যান্ড মেটাবলিজ়ম’নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, সকালের খাবার হোক বা রাতের বেকন, সসেজ, ডিম— এগুলির বদলে বেছে নিতে হবে পছন্দের যে কোনও উদ্ভিজ্জ খাবার। ‘ফিজ়িশিয়ানস কমিটি ফর রেসপনসিবল মেডিসিন’-এর মুখ্য গবেষক হানা কাহ্লিওভা বলছেন, ‘‘প্রোটিন নয়, উদ্ভিদজাত খাবার খেয়ে ওজন কমার প্রমাণ মিলেছে গবেষণায়। তিনি বলছেন, "খাদ্যতালিকায় সয়া মিল্ক, ইয়োগার্টের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার রাখলেও সমস্যা নেই। তবে প্রাণিজ প্রোটিন বা খাবার বাদ দিতে হবে।’’
আরও পড়ুন:
এই গবেষণার জন্য সমীক্ষা চালানো হয়েছে অতিরিক্ত ওজনের ২৪৪ জনকে নিয়ে। প্রত্যেকেই প্রাপ্তবয়স্ক। তাঁদের দুই দলে ভাগ করা হয়। একটি দলকে ১৬ সপ্তাহ ধরে ভিগান ডায়েটে রাখা হয়েছিল, বাকিদের সব রকম খাবার খেতে বলা হয়েছিল। ভিগান খাবারের ক্ষেত্রে ক্যালোরি কোনও মাপ ছিল না বা প্রক্রিয়াজাত খাবারেও কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। ফলাফলে দেখা যায়, ভিগান ডায়েট করে গড়ে ৫.৯ কিলোগ্রাম ওজন কমেছে তাঁদের। সেই তালিকায় ভিগান পিৎজ়া থেকে বার্গার, সবই ছিল।
গবেষণা বলছে, ওজন কমাতে চাইলে তিন শর্ত মানা জরুরি
যে কোনও রকম প্রক্রিয়াজাত প্রাণিজ প্রোটিন বাদ দিতে হবে।
দুধ, ডিম (প্রক্রিয়াজাত নয়)-এর মতো খাবারও একেবারে কমিয়ে দিতে হবে।
চিজ়, ফ্রায়েড চিকেন, সসেজ় জাতীয় খাবার তালিকায় রাখা যাবে না।
কিন্তু কেন উদ্ভিদজাত খাবার প্রাণিজ খাবারের চেয়ে ওজন কমাতে বেশি সহায়ক?
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, হিসাব সহজ। উদ্ভিজ্জ খাবারে ফাইবার বেশি। এতে ক্যালোরি এবং ফ্যাট, দুই-ই প্রাণিজ খাবারের চেয়ে কম থাকে। উদ্ভিজ্জ খাবারে থাকা ফাইবার এ ক্ষেত্রে পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। অন্য দিকে, তাতে ফ্যাট এবং ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় তা ওজন কমাতে সহায়ক হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা ভিগান ডায়েট মেনেছেন, তাঁরা তুলনামূলক ভাবে কম ক্যালোরি এবং ফ্যাটযুক্ত খাবার খেয়েছেন। হানা বলছেন,‘‘আমাদের গবেষণা জানাচ্ছে, কৌটোজাত বিন, প্যাকেটজাত উদ্ভিজ্জ খাবার স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অঙ্গ হতেই পারে।’’
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ছাড়াও উদ্ভিজ্জ খাবার হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণা এবং সমীক্ষা অনুযায়ী প্রক্রিয়াজাত উদ্ভিজ্জ খাবার ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক না হলেও চিকিৎসকেরা বলছেন, সব সময় খাবার টাটকা খাওয়া উচিত। ফলে, ওজন বশে রাখতে চাইলে নজর দিকে হবে শাকসব্জি এবং উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের দিকেও। সয়া মিল্ক থেকে রকমারি ডাল, দানাশস্যে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার মেলে। সুস্থ থাকতে হলে খাবারের পাতে সব কিছুরই সঠিক সমন্বয় দরকার।
প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। ডায়েটে বিশেষ বদল আনতে হলে সব সময় চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া দরকার।