কেউ চান মেদ ঝরাতে, কেউ আবার পেশিবহুল সুঠাম গড়ন। কারও লক্ষ্য ফিটনেস। লক্ষ্যপূরণের হরেক উপায় এখন বাতলে দিচ্ছেন সমাজমাধ্যমপ্রভাবীরা। কোন ডায়েট কখন করতে হবে, কী খেলে মেদ গলবে দ্রুত— এমন নানা টোটকা, পরামর্শ চাইলেই মিলছে মুঠোফোনে।
দ্রুত নির্মেদ, তন্বী চেহারার পেতে বিভিন্ন রকম ডায়েট নিয়ে চর্চা সবসময়ই। শরীর ভাল রাখতে, মেদ ঝরাতে ইনস্টাগ্রামে মনো ডায়েটের পরামর্শ দিয়েছেন সমাজমাধ্যম প্রভাবী চিন্থিয়া ব্রোমলি। তাঁর কথায়, তিন দিন যদি কেউ শুধু আঙুর খেয়ে ডায়েট করতে পারেন শরীরে বদল আসবে। তাঁর পিছনে যুক্তিও দেখিয়ে তিনি। বলছেন, ‘‘টানা আঙুর খেয়ে গেলে ফলের রস লিম্ফ্যাটিক ক্লিনজ়ারের কাজ করবে। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যেতে সাহায্য। এই প্রক্রিয়া ওজন কমানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং শরীর চনমনে রাখতে সাহায্য করবে।’’
তিনি যা বলছেন, তা কতটা ঠিক? কী এই মনো ডায়েট? পুষ্টিবিদ পায়েল কোঠারি বলছেন, ‘‘২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা এক ধরনের খাবার খেয়ে যাওয়াকেই বলা হয় মনো ডায়েট। বিভিন্ন রকমের খাবার খেলে অনেক সময় হজমের সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে একই ধরনের খাবার খেলে শরীরের পক্ষে পুষ্টি শোষণ, খাবারটি হজম করা তুলনামূলক সহজ হয়।’’
‘লিম্ফ্যাটিক ড্রেনেজ়’-এর যে কথা বলেছেন সমাজমাধ্যম প্রভাবী তা কতটা সঠিক? মানবদেহ অসংখ্য রক্তবাহী নালি জালের মতো ছড়িয়ে। এদের একত্রে লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম বলা হয়। এর কাজই হল শরীরে তরলের ভারসাম্য রক্ষা করা।
আরও পড়ুন:
পুষ্টিবিদ বীণা ভি বলছেন, ‘‘কোষ এবং কলা থেকে দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম। একে বলা হয় লিম্ফ্যাটিক ড্রেনেজ়। কেউ যদি দিন তিনেক আঙুর খেয়ে মনো ডায়েট করেন তার উপকারিতা অবশ্যই আছে। শরীরে জলের ঘাটতি দূর করতে, দূষিত পদার্থ বার করে দিতে সাহায্য করবে এই ডায়েট। আঙুরে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ভিটামিন এবং খনিজ আছে। আর আছে শর্করা। ফলে শারীরিক কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি মিলবে সেখান থেকেই।
তবে শুধু আঙুর খেয়ে ডায়েট সাময়িক ভাবে কার্যকর হলেও এতে ক্ষতির সম্ভবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, আঙুর খেয়ে ডায়েট করলে শরীরে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটের অভাব হতে পারে। পাশাপাশি একই রকম খাবার অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে হজমে সুবিধার বদলে উল্টোও হতে পারে। ক্রমাগত আঙুর খেলে অম্বল, বদ হজম হতে পারে। পেটের সমস্যাও হওয়া আশ্চর্যের নয়। বিশেষত রক্তে শর্করার মাত্রায় এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। ডায়াবেটিক বা ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্ট হলে এই ডায়েট অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। ফলে স্বল্প সময়ের এই ডায়েট সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়।
বরং পুষ্টিবদ থেকে ফিটনেস নিয়ে চর্চাকারীরা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে খাওয়ার তালিকায় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার — সব খাবারই মিলিয়ে মিশিয়ে রাখতে বলেন। পরিমিত খাবার, শরীরচর্চাই হতে পারে ওজন কমানোর যুক্তিসম্মত উপায়।