Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

প্রাণ ফিরে পান প্রাণায়ামে

হরেক রকম প্রাণায়ামের মধ্যে কোনওটি মনঃসংযোগ বাড়ায়, কোনওটি সুস্থ রাখে শ্বাসযন্ত্র। আপনার কোন প্রাণায়াম দরকার?রোজ প্রাণায়ামের অভ্যেস ফুসফুস সুস্থ রাখে। ফলে শ্বাসযন্ত্রের নানা সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায় সহজে। দূরে থাকে হাঁপানি-সহ শ্বাসনালীর নানা রোগ। এ ছাড়া বাড়ায় হজম করার ক্ষমতাও।

প্রাণায়ামের অভ্যেস করুন পদ্মাসনে বসে। শিরদাঁড়া থাকবে সোজা

প্রাণায়ামের অভ্যেস করুন পদ্মাসনে বসে। শিরদাঁড়া থাকবে সোজা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

ব্যস্ততার যুগে সময় নেই জিমে যাওয়ার। অথচ নিজেকে সুস্থ না রাখলেই নয়। তাই ব্যস্ততার মাঝেও সকালবেলা সময় বার করতে পারেন প্রাণায়ামের জন্য। ‘প্রাণ’ শব্দের অর্থ বায়ো এনার্জি। আর ‘আয়ম’ মানে নিয়ন্ত্রণ। নিয়মিত প্রাণায়াম অভ্যেস ও চর্চার মাধ্যমে কাবু করা যায় নানান রোগবালাই।

রোজ প্রাণায়ামের অভ্যেস ফুসফুস সুস্থ রাখে। ফলে শ্বাসযন্ত্রের নানা সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায় সহজে। দূরে থাকে হাঁপানি-সহ শ্বাসনালীর নানা রোগ। এ ছাড়া বাড়ায় হজম করার ক্ষমতাও। যোগ এবং অ্যাকিউপ্রেশার স্পেশ্যালিস্ট অনীশ রঘুপতি বলছেন, ‘‘প্রাণায়ামকে বলা চলে হাইপারব্যারিক অক্সিজেন থেরাপি। কোনও রকম মেশিন বা যন্ত্র নয়, প্রাণায়ামের মাধ্যমে অক্সিজেন শরীরে প্রবেশ করে, যা শরীরের জন্য খুব ভাল। শরীরের ৫১টি অংশের মধ্যে ৪৯ রকমের বায়ু আছে। সেই বায়ুকে শোধিত করার কাজটাই হল প্রাণায়ামের। এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা জরুরি, বেশ কিছু প্রাণায়ামের মাধ্যমে ক্যানসারের চিকিৎসাও সম্ভব।’’ ক্লাসিক্যাল প্রাণায়াম সাধারণত আট ধরনের হয়। পাশাপাশি রয়েছে আরও প্রাণায়াম।

নাড়ি শোধন

ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না— এই তিন নাড়ি মানবশরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইড়া নাড়ি কোনও ভাবে ঠিক মতো কাজ না করলে ঠান্ডা লাগে, হতাশা বা লো মেন্টাল এনার্জি, হজমের সমস্যা ছাড়াও বাঁ নাক বন্ধ হয়ে যায়। অন্য দিকে পিঙ্গলা নাড়ি ঠিক মতো কাজ না করলে শরীর গরম হয়, ইরিটেশন হয়, ত্বকে র‌্যাশ বেরোয়, অতিরিক্ত খিদে পায়, ডান নাক বন্ধ হয়ে যায়। তাই নাড়ির কাজ ঠিক মতো করার জন্য নাড়ি শোধন প্রাণায়াম করা দরকার। এই প্রাণায়াম করার জন্য মেঝেয় পা মুড়ে বসতে হবে। শিরদাঁড়া থাকবে সোজা। এ বার ডান হাত দিয়ে ডান দিকের নাক চেপে ধরে, বাঁ নাক দিয়ে শ্বাস টানতে হবে। তার পরে ডান নাক ছেড়ে ওই হাতের মধ্যমা দিয়ে বাঁ নাক চেপে ধরে, ডান নাক দিয়ে শ্বাস ত্যাগ করতে হবে। অন্তত ১০-১৫ বার এই ভাবে নাড়ি শোধনের অভ্যেস করতে হবে।

শীতলী প্রাণায়াম

নাম থেকেই স্পষ্ট, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শীতল হওয়ার সম্পর্ক। এর জন্য মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে পাঁচ-ছ’বার স্বাভাবিক শ্বাস নিয়ে শুরু করতে হবে। ঠোঁট দু’টিকে ‘ও’-এর মতো করে শ্বাস টানতে হবে। একসঙ্গে মুখ ও নাক দুই দিয়েই চলবে শ্বাসগ্রহণ। এ বার শ্বাস ছাড়তেও হবে নাক ও মুখ দিয়ে। পাঁচ-দশ বার পর্যন্ত করা যায়।

কপালভাতি প্রাণায়াম

এর জন্য মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে প্রথমে স্বাভাবিক ভাবে কয়েক বার শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। এ বার প্রক্রিয়া শুরুর সময়ে শ্বাস নিতে হবে স্বাভাবিক ভাবে, কিন্তু তা ছাড়ার সময়ে যথেষ্ট জোর প্রয়োগ করতে হবে। এতে পেট ভিতরের দিকে ঢুকে সমস্ত বায়ু বাইরে বেরিয়ে আসবে। আবার শ্বাস নিতে হবে স্বাভাবিক ভাবে। কপালভাতি অন্তত ২০-৩০ বার পর্যন্ত করতে হবে।

কপালভাতি প্রাণায়ামের আবার রয়েছে নানা ধরন— বাতক্রম কপালভাতি, ভূতক্রম কপালভাতি এবং শীতক্রম কপালভাতি। বায়ু গমন এবং নির্গমনের প্রক্রিয়াটি পরিচিত বাতক্রম কপালভাতি নামে। অর্থাৎ এতে অ্যাকটিভ এক্সহেলেশন এবং প্যাসিভ ইনহেলেশন হয়। ভূতক্রম কপালভাতির ক্ষেত্রে আবার নাক দিয়ে জল টেনে গলায় নিতে হয়। সেই জল বার করে দিতে হয় মুখ দিয়ে। শীতক্রম কপালভাতির পদ্ধতি আবার উল্টো। এ ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে জল টেনে বার করতে হয় নাসিকাছিদ্র দিয়ে। এই তিন রকমের কপালভাতির ক্ষেত্রে বায়ু হোক বা জল... তা বার করতে পেটে যথেষ্ট চাপ পড়ে। সহজেই অনুমেয়, এই ধরনের কপালভাতি করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। নিয়মিত অনুশীলনে সব ধরনের কপালভাতি আয়ত্ত করা সম্ভব।

বিলোম প্রাণায়াম

এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তা হবে তিন ধাপে। অর্থাৎ প্রথমে কিছুটা শ্বাস নিয়ে দু’সেকেন্ড থামতে হবে। আবার শ্বাস নিতে হবে। আবার দু’সেকেন্ড থেমে তৃতীয় ধাপে পুরো শ্বাস নিতে হবে। থেমে থেমে শ্বাস নেওয়া হলে ছাড়তেও হবে একই পদ্ধতিতে। তিন ধাপে অল্প অল্প করে বাতাস ছাড়তে হবে। শেষ ধাপে পুরো বাতাস ছেড়ে দিতে হবে।

অনুলোম প্রাণায়াম

বিলোম প্রাণায়ামের মতো একই পদ্ধতিতে করতে হবে অনুলোম প্রাণায়াম। এ ক্ষেত্রে এক দিকের নাক বন্ধ থাকবে। প্রথমে ডান দিকের নাক চেপে ধরে, বাঁ নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার কাজ করতে হবে। তার পরে বাঁ নাক চেপে ধরে, ডান নাক দিয়ে একই প্রক্রিয়ায় করতে হবে।

সার্বিক ভাবে প্রাণায়াম ওজন কমানো, হতাশা ও অবসাদ দূর করা, সাইনাসের কষ্ট কমানোয় সাহায্য করে। এ ছাড়াও আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমে, রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়, পিত্ত-বায়ু-কফের সমস্যা থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।

এ ছাড়াও ভ্রামরী, উজ্জয়ী, দীর্ঘ... প্রাণায়ামের সংখ্যা কম নয়। সব প্রাণায়ামের জন্য দরকার শারীরিক কসরত। নিয়মিত অভ্যেস করে প্রাণায়ামের ক্ষমতা বাড়ালে তবেই বাড়ানো যেতে পারে সময়সীমা।

অঙ্কন: প্রীতম দাশ

মডেল: তৃণা বৈদ্য;

ছবি: অমিত দাস

অন্য বিষয়গুলি:

Health Fitness Pranayam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy