বেলাগাম: কোভিড-বিধি উড়িয়ে জনজোয়ারে ভাসল প্রাক্ বড়দিন। বৃহস্পতিবার। পার্ক স্ট্রিটে ছবি: সুমন বল্লভ
কারও যুক্তি, শীতের রোদ গায়ে মাখলেই মরবে করোনা। কেউ আবার ভাল ছবি তোলার টানে ব্রাত্য করেছেন মাস্ককে। পার্ক স্ট্রিট থেকে নিউ টাউন, চিড়িয়াখানা থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল— বড়দিনের আগের দিন সর্বত্রই মাস্কহীন মুখের লাগামছাড়া উৎসব-যাপনের ছবি।
দুর্গাপুজোয় ভিড় এড়াতে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই কড়াকড়ি জারি ছিল ছটপুজো পর্যন্ত। কিন্তু এ বার শীতের উৎসব ঘিরে সেই কড়াকড়ির সবটাই উধাও। পুলিশ ও প্রশাসনের তরফেও রাতের জমায়েত নিয়ে কোনও কড়া নির্দেশিকা নেই। এই পরিস্থিতিতে করোনা-বিধি কার্যত হেলায় উড়িয়ে শীতের উৎসব-যাপনে নেমে পড়ছেন শহরবাসীর একাংশ। যা দেখে সচেতন শহরবাসীর অনেকের প্রশ্ন, ‘‘আগের দিনই এই অবস্থা হলে বড়দিনের রাতে কী হবে? বর্ষশেষে বা বর্ষবরণের দিনই বা সামাল দেওয়া হবে কী ভাবে?’’
বৃহস্পতিবার সপরিবার চিড়িয়াখানায় এসেছিলেন দত্তপুকুরের তমাল মণ্ডল। দশ জনের সেই দলের কারও মুখেই মাস্কের বালাই নেই। চিড়িয়াখানা বন্ধ জেনে ফুটপাতেই সঙ্গে আনা খাবার খুলে খেতে বসে তমাল বললেন, ‘‘আমার করোনা হয়ে সেরে গিয়েছে। ফলে আর হবে না। আগে মাস্ক ব্যবহার করতাম, করোনা হওয়ার পরে মাস্ক পরা ছেড়ে দিয়েছি। ও সবে আসলে কিছুই হয় না। ভাল খাবার খেলেই সব ঠিক আছে।’’ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে ভিড় করে দাঁড়ানো জনা কুড়ির দলের সদস্যদেরও কারও মাস্ক নেই। শান্তিপুর থেকে কলকাতায় পিকনিক করতে এসেছেন তাঁরা। তাঁদেরই একজন, সুকমল সরকার বলছেন, ‘‘শীতের রোদ গায়ে মাখলেই করোনা সেরে যায়। তা ছাড়া বিপদ থাকলে তো সরকারই নিষেধ করত! পিকনিকে তো কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। আর শীতে পিকনিকের ভিড় তো হবেই।’’
নিউ মার্কেট চত্বরে। বৃহস্পতিবার। ছবি স্বাতী চক্রবর্তী
নিউ টাউনের বিশ্ববাংলা গেটের সামনে মাস্কহীন আর এক দম্পতি আবার সাফ বলছেন, ‘‘মাস্ক পরে ভাল ছবি ওঠে না। অকারণে মাস্ক পরে
থাকব কেন? করোনা আর হচ্ছে না। কেউ মারা যাচ্ছেন বলেও শুনছি না।’’ এ দিন রাত যত বেড়েছে, ভাল ছবি তোলার হিড়িকে মাস্কহীন মুখের ভিড় ততই বাড়তে দেখা গিয়েছে পার্ক স্ট্রিটেও। সেখানে রেস্তরাঁয় ঢোকার জন্য লাইন থেকে শুরু করে ফুটপাত ধরে হেঁটে চলা জনতা— অনেকেই বেপরোয়া। পার্ক স্ট্রিটের সাজসজ্জা দেখতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সেখানে হাজির এক যুবক বললেন, ‘‘আজ সারা রাত ঘোরার পরিকল্পনা করে বেরিয়েছি। করোনার ভয়ে তো আর সেই পরিকল্পনা বদলানো যাবে না।’’
আরও পড়ুন: নভেম্বরের বিল থেকে সিইএসসি-র বকেয়া অঙ্ক মেটাতে হবে ১০ কিস্তিতে
আরও পড়ুন: এগ্রি গোল্ড দুর্নীতিতে ৪ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ইডি-র
শহরবাসীর একাংশের এই ‘বেপরোয়া’ মনোভাব দেখে চিকিৎসকেরা রীতিমতো শঙ্কিত। চিকিৎসক কুণাল সরকার বলছেন, ‘‘এমন উৎসব অনেকেই করতে চান। কিন্তু এটাই যেন শেষ উৎসব পালন না হয়। দেশে দেশে যখন করোনা নিয়ে নতুন করে শোরগোল উঠেছে, তখন কলকাতাবাসীর হঠাৎ করে এমন আমোদ-প্রমোদে মেতে ওঠা আশ্চর্য লাগছে।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘রাতের জমায়েত নিয়ে রাজ্যের এ বার সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। সরকার নাবালক হয়ে থাকবে, আর হাইকোর্ট ধমকাবে, সেটা সব সময়ে হতে পারে না!’’
চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মন্তব্য, ‘‘ভুললে চলবে না, শীতেই করোনাভাইরাস বাতাসে বেশিক্ষণ বেঁচে থাকে। করোনায় মৃত্যুহার কিন্তু এখনও ভয়ের। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত সতর্ক ভাবে পদক্ষেপ না করলে কিন্তু মুশকিল।’’ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী বলছেন, ‘‘করোনা কিন্তু ঘামাচির মতো হয়ে যায়নি। তাই দেদার উৎসব পালনের এত সাহস কোথা থেকে? সেটাই তো ভেবে পাচ্ছি না।’’
ধর্মতলা চত্বরে হাজির এক তরুণীর অবশ্য মন্তব্য— ‘‘মন ভাল থাকলেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল হয়। করোনার সঙ্গে লড়তে মন ভাল রাখার জন্যই বেরিয়ে পড়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy