ফাইল চিত্র
ঘটনা ১
ছোট্ট কমলিকার কয়েকদিন ধরেই আঁকায় মন নেই। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জেদ, মাছ খাবে না তো খাবেই না! এ দিকে সকালে উঠে কিছুতেই অনলাইন ক্লাসে বসানো যায় না ঋতমকে। অথচ এই ছেলেটাই স্কুলে যেতে ভালবাসত।
কল্পবিজ্ঞান লেখক আইজ্যাক আসিমভের একটি বিখ্যাত গল্প রয়েছে, ‘দ্য ফান দে হ্যাড’। গল্পটি মূলত ভবিষ্যতের স্কুলের ঘটনা হলেও, কোভিড অতিমারির প্রকোপে এখনকার বাচ্চাদের অবস্থা হয়েছে ঠিক একই। এই অতিমারিতে অভিভাবকেরা বুঝে উঠতে পারছেন না বাড়ির ছোটদের মনের অবস্থা সামলাবেন কী করে?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আবীর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মা-বাবার টিমওয়ার্কই এই অবস্থা সামলানোর অন্যতম উপায়। নিজেদের ওয়ার্ক ফ্রম হোমের রুটিন সামলে কখনও মা, কখনও বাবা যদি বাচ্চাকে সময় দেন, তা হলেই অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। আর যদি বাড়িতে দাদু বা ঠাকুমা থাকেন, তা হলে তো সোনায় সোহাগা। মূল বিষয়, বাড়ির পরিবেশের মধ্যে সব সময় একটা সদর্থক ভাব বজায় রাখা।’’
মা-বাবার করণীয়
• স্ক্রিনটাইম কমাতে হবে
এই লকডাউনে বাচ্চাদের মধ্যে বিপজ্জনক ভাবে বেড়েছে ডিজিটাল অ্যাডিকশন। ফলে বেড়েছে জেদ, অমনোযোগ, নিদ্রাহীনতার মতো সমস্যা। প্রথমেই টিভি ও মোবাইলের ব্যবহার কমানো প্রয়োজন। অনলাইন ক্লাস বাদে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন স্ক্রিন টাইমের জন্য।
• কালার থেরাপি
বিশেষজ্ঞরা বলেন, রং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং বাচ্চাকে আঁকায় উৎসাহ দিন। সন্তানকে প্রথাগত রংয়ের বাইরে গিয়ে রং করতে বলুন।
• বাগানে হাতমকশো
আপনার বাড়িতে যদি বাগান থাকে, সন্তানকে বলুন বাগানের কাজে আপনাকে সাহায্য করতে। একটু বোঝার মতো বয়স হলে দায়িত্ব দিন একটি বা দু’টি গাছের দেখভাল করার। দিনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ সবুজের সান্নিধ্যে কেটে যাবে বিষাদ।
• গল্প শোনান
শিশুদের কল্পনার জগৎ সমৃদ্ধ করতে গল্পের বইয়ের জুড়ি নেই। দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি সময় আপনার সন্তানকে গল্প পড়ে শোনান। এখন প্রচুর অডিয়োবুক পাওয়া যায়, সে রকম হলে সকলে একসঙ্গে গল্প শুনুন।
• ফ্যামিলি টাইম
ডা. মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পরিবার আসলে একটি ইউনিট। সুতরাং অতিমারির এই অবস্থায় মানসিক চাপ কাটাতে রোজ একটি ফ্যামিলি অ্যাক্টিভিটি করা ভীষণ প্রয়োজনীয়। সে হতে পারে কোনও খেলা, একসঙ্গে কোনও মজার সিনেমা দেখা বা ফিজ়িকাল অ্যাক্টিভিটি। আর দিনে অন্তত একবার একসঙ্গে খেলে খুব ভাল হয়।’’
• অভিভাবকের জন্য
নিজেদের অন্তত একটি অ্যাক্টিভ হবি রাখুন। মনে রাখবেন, আপনার মনোভাব ইতিবাচক হলে সন্তানও আপনাকে দেখে উৎসাহিত হবে।
ঘটনা ২
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল হয়ে যেতে প্রথমে বেশ মজাই হয়েছিল অনির্বাণের। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভয়, কেরিয়ারের কোনও ক্ষতি হবে না তো?
বয়ঃসন্ধি এমন একটা সময় যখন অভিভাবকদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হয় সন্তানদের। লকডাউনে সেই কাজ আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুক্ত হয়েছে অ্যাংজ়াইটি ও ডিপ্রেশন।
কিশোর সন্তানের মনের তল পেতে কী করবেন?
মনোবিদ গার্গী দাশগুপ্তর কথায়, ‘‘ছেলে মেয়ের বন্ধু হয়ে ওঠা এ সময়ে বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। বাবা মাকে বোঝাতে হবে দুটো জিনিস, প্রথমত, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সারা বিশ্বেই প্রায় সকলেই এই বিষয়টায় ভুক্তভোগী। দ্বিতীয়ত, পরীক্ষার রেজ়াল্টই সব নয়। অতিমারির সময়ে আমরা অনেক অলটারনেটিভ কেরিয়ারের পথ পেয়েছি। সেগুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা যায়।’’
একই কথা বললেন ডা. মুখোপাধ্যায়, ‘‘এটা জীবনের একটা কি দুটো বছর। ভুক্তভোগী সারা বিশ্বের মানুষ। সুতরাং নিজেকে ভিকটিম ভাবার এখানে কোনও জায়গা নেই। সমুদ্রে যখন বড় ঢেউ আসে তখন আমরা অপেক্ষা করি ঢেউ সরে যাওয়ার, এখানে ঠিক তাইই করতে হবে।’’
কথা বলুন
বয়ঃসন্ধির সময় অভিভাবকদের সঙ্গে সন্তানের কমিউনিকেশন খুব জরুরি। চেষ্টা করুন আপনার কিশোর সন্তানের মনের অবস্থা জানার, কিন্তু তা জোর করে নয়। খেয়াল রাখবেন, আপনার সন্তান যেন বুঝতে না পারে আপনি ইচ্ছে করে তার মন ভাল করার চেষ্টা করছেন। এই বয়সে আত্মসম্মানবোধ অত্যন্ত প্রখর থাকে, সে কিন্তু আরও গুটিয়ে যাবে।
মতামত চান
ঘরের কাজে বা অফিসের কোনও বিষয়ে তার মতামত চান। এতে আপনার সন্তান গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে নিজেকে।
সমালোচনা নয়
নিজের ব্যক্তিগত বিরক্তি থেকে ভুলেও অযথা সন্তানের সমালোচনা করবেন না। বরং তাকে সদর্থক ভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করুন। তাকে বোঝান সে পরিবারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
লকডাউনে সন্তানের বিষাদ সামলাতে পরিবারই কিন্তু সবচেয়ে বড় শক্তি হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy