Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
চোখ বুজে রয়েছে সরকার

সিলিকোসিসে ধুঁকছে পাঁচামি

সিলিকোসিসের সঙ্গে পাঁচামির যোগসূত্র দীর্ঘ দিনের। গত আড়াই দশকে বীরভূমের ওই প্রান্তিক এলাকায় নিশ্চুপে সিলিকোসিসের বলি, এমন খাদান শ্রমিকের তালিকাও দীর্ঘ। সরকারি ঔদাসীন্য এবং জেলা প্রশাসন ও শ্রম দফতরের দায় এড়ানোর প্রবণতাও নতুন নয়।

পাথরের ধুলোয় ঢেকেছে চারপাশ। —ফাইল চিত্র।

পাথরের ধুলোয় ঢেকেছে চারপাশ। —ফাইল চিত্র।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০২:০৮
Share: Save:

সিলিকোসিসের সঙ্গে পাঁচামির যোগসূত্র দীর্ঘ দিনের।

গত আড়াই দশকে বীরভূমের ওই প্রান্তিক এলাকায় নিশ্চুপে সিলিকোসিসের বলি, এমন খাদান শ্রমিকের তালিকাও দীর্ঘ।

সরকারি ঔদাসীন্য এবং জেলা প্রশাসন ও শ্রম দফতরের দায় এড়ানোর প্রবণতাও নতুন নয়।

নতুন এটাই, পাঁচামি ফের মৃত্যু-মিছিল দেখতে শুরু করেছে। এবং তা সিলিকোসিসের হাত ধরেই।

গত তিন বছরে সরকারি ভাবে ওই এলাকায় সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে সরকারি ভাবে মারা গিয়েছেন মাত্র তিন জন। তবে পাঁচামির খাদান ঘেরা গ্রামগুলোয় পা দিলে বোঝা যাচ্ছে, দীর্ঘ দিন ধরে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, প্রবল কাশি ও পরিণতিতে মুখে রক্ত তুলে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন এমন শ্রমিকের তালিকা অন্তত ৩২।

সরকারি নথিতে সেই সব মৃত শ্রমিকদের হিসেব নেই। তাঁদের মৃত্যুর কারণও ‘জানে না’ স্থানীয় প্রশাসন। এ ব্যাপারে রাজ্যে বহু দিন ধরেই কাজ করছে, এমন একটি সংগঠনের পক্ষে বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বেসরকারি ভাবে সিলিকোসিসে মৃত্যুর সংখ্যাটা পঞ্চাশও হতে পারে, আবার একশো-ও। কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে, আমরা সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, গত তিন বছরে (২০১১-২০১৪) ওই সংখ্যাটা অন্তত ৩২। রোগে আক্রান্ত হয়েও ধুঁকে-ধুঁকে বেঁচে রয়েছেন শতাধিক শ্রমিক।’’ তবে সরকারি বদান্যাতায় শ্রমিকদের চিকিৎসার যে তেমন কোনও উদ্যোগ নেই, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।

মৃত্যুর এই মিছিলে সাম্প্রতিক সংযোজন মিছু মুর্মু এবং দেবু রাউত। ২০১১ সালে ওই দুই গ্রামবাসী এবং ২০১৩ সালে হিংলো পঞ্চায়েতের দেওয়ানগঞ্জ গ্রামের ঢিবে মুর্মু (৩৫) ছাড়া সরকারি পরিসংখ্যানে আর কারও নাম মেলেনি। জামশেদপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গত পাঁচ বছর ধরে সিলিকোসিসে আক্রান্ত শ্রমিকদের হাল হকিকত নিয়ে কাজ করছে। তাদেরও অভিজ্ঞতা একই।

পাঁচামি অবশ্য একা নয়। নব্বইয়ের দশকে পশ্চিম মেদিনীপুরে চেঁচুলগেড়িয়াও একই কারণে দেশের সিলিকোসিস-মানচিত্রে ঠাঁই পেয়ে গিয়েছিল। সে বার কয়েকশো খাদান-শ্রমিকের রোগাক্রান্ত হওয়ার খবরে নড়েচড়ে বসেছিল সরকার।

তবে, পাঁচামির ব্যাপারে এখনও ঘুম ভাঙেনি সরকারের। এমনই দাবি সাগরবাতি, জাঁদা, হরিণশিঙা গ্রামের কয়েক হাজার খাদান শ্রমিকের। তাঁদের ভরসাস্থল হাতে গোনা কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারাই তালবাঁধের মিছু মুর্মু (৫৫) এবং কেন্দ্রপাহাড়ির দেবু রাউতকে (৪৫) হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই সংগঠনের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, বেলুড়ের ইএসআই হাসপাতালে সিলিকোসিস বিশেষজ্ঞেরা দেখেই নিদান দিয়েছিলেন, মারণ রোগে ধরেছে ওই দুই খাদান শ্রমিককে। পরীক্ষা করে জানানো হয়েছিল, দু’জনের ফুসফুসেই যথেষ্ট পরিমাণে সিলিকার গুঁড়ো জমে গিয়েছিল।

সমীক্ষার পরে দেখা গিয়েছিল, হাবড়াপাহাড়ির শুকল টুডু (৩০), পুরাতন হাবড়াপাহাড়ির কণশ টুডু (৫০), পাথরপাড়ার রাম হেমব্রমও একই রোগে ভুগছেন। তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। তাঁরা যে সিলিকোসিসে আক্রান্ত তা নিশ্চিত হওয়ার পরে তাঁদের জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা হয়। তবে নির্দেশ দিয়েই দায় সেরেছে স্বাস্থ্য দফতর। রোজ প্রতি নিঃশ্বাসে পাথরের গুঁড়ো নিয়ে খাদান শ্রমিকেরা ধীর অথচ নিশ্চিত অপমৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy