তৃণমূল সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে সর্বত্র সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। অথচ অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানেই সরকারের ফলাও করে ঘোষিত পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি।
মাস দুই আগে ঘটা করে রাজ্যের মধ্যে প্রথম এসএসকেএমের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে কার্ডিওলজি, কার্ডিও-থোরাসিক এবং অস্থি সংক্রান্ত অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি প্রায় ৫৭% ছাড়ে বিক্রি শুরুর কথা ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু কার্ডিওলজি এবং অস্থি সংক্রান্ত অস্ত্রোপচারের যন্ত্র বিক্রি হলেও গত দু’মাসে ওই দোকান থেকে কার্ডিও-থোরাসিক অস্ত্রোপচারের একটিও যন্ত্র বিক্রি হয়নি। বহু রোগীর বাড়ির লোকজন কম দামে যন্ত্র কিনতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। তাঁদের বাইরের দোকান বা সংশ্লিষ্ট যন্ত্র সংস্থার এজেন্টদের থেকে বেশি টাকা দিয়ে জিনিস কিনতে হয়েছে বলে অভিযোগ।
একাধিক রোগীর আত্মীয়দের থেকে অভিযোগ পেয়ে সপ্তাহখানেক আগে এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের চিকিৎসকদের লিখিত জবাবদিহি করেন। জানতে চান, কার্ডিওলজি এবং অর্থোপেডিক বিভাগের অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি বেশিরভাগই ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কেনা হচ্ছে। তা হলে কার্ডিওথোরাসিক বিভাগে ওপেন হার্ট বাইপাস, ভাল্ভ প্রতিস্থাপন, হার্টে ফুটো সারানো, করনারি আর্টারির ব্লক সারানোর মতো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় যন্ত্র কেন ওই দোকান থেকে কেনা হচ্ছে না? চিকিৎসকেরাই রোগীর বাড়ির লোককে ওই দোকানে যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন না? উত্তরে কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের প্রধান শুভঙ্কর ভট্টাচার্য জানান, ওই দোকানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী না মেলায় রোগীর পরিজনদের বাইরে থেকে কিনতে বলা হচ্ছে।
এসএসকেএমের হিসেব অনুযায়ী, গত দু’মাসে সেখানকার ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কার্ডিওলজি বিভাগের প্রায় ৭০০ রোগী কম দামে পেসমেকার ও স্টেন্ট কিনেছেন। অর্থোপেডিক বিভাগের প্রায় ১৫০ জন রোগী বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী কিনেছেন। সেখানে কার্ডিওথোরাসিক বিভাগে সপ্তাহে ১২-১৫টি অস্ত্রোপচার হলেও কোনও যন্ত্র ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কেনা হয়নি। বাইরে থেকে যন্ত্র কিনতে হলে করনারি আর্টারি বাইপাসের জন্য প্রায় ৬০-৬২ হাজার টাকা খরচ হয়। ন্যায্য মূল্যের দোকানে তা পাওয়া গেলে অন্তত ৩০ হাজার টাকা কম লাগে। আবার ভাল্ভ প্রতিস্থাপনের জিনিস বাইরে থেকে কিনতে খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে তা কিনলে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকার মতো কমে হয়ে যায়। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ঘোষণা সত্ত্বেও এসএসকেএমের দোকানে তা মিলছে না।
দিন কয়েক আগেই এ ব্যাপারে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান-কর্তৃপক্ষ ও কার্ডিওথোরাসিকের চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রদীপবাবু। অবিলম্বে যাতে ওই দোকান থেকে কার্ডিওথোরাসিক অস্ত্রোপচারের যন্ত্র বিক্রি শুরু হয়, সেই নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন, কেন কার্ডিওথোরাসিকের যন্ত্রপাতি এত দিন সেখানে বিক্রি করা হচ্ছিল না?
ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের তরফে অম্বরীশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি প্রথমত, কার্ডিওথোরাসিক অস্ত্রোপচারের অধিকাংশ যন্ত্র তৈরি করে বিদেশি সংস্থারা। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ৫৭% ছাড়ে যন্ত্র বিক্রিতে রাজি করতে তাঁদের প্রবল অসুবিধা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কার্ডিওথোরাসিক অস্ত্রোপচারে প্রায় ১৯৩ ধরনের চিকিৎসা-যন্ত্র প্রয়োজন হতে পারে। অম্বরীশবাবু জানান, এই মুহূর্তে ১২০ ধরনের যন্ত্রের ব্যবস্থা তাঁরা করতে পেরেছেন। সব যন্ত্রের ব্যবস্থা না করে বিক্রি শুরু করলে অস্ত্রোপচার চলাকালীন কারও অতিরিক্ত যন্ত্র দরকার হলে ন্যায্য মূল্যের দোকানে তা না পেয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন রোগীর আত্মীয়েরা।
প্রদীপ মিত্র অবশ্য জানিয়েছেন, এ সব ফাঁপা যুক্তি। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যতটুকু যন্ত্র আপাতত পাওয়া যাচ্ছে তাই দিয়েই অনতিবিলম্বে বিক্রি শুরু করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy