—প্রতীকী চিত্র।
“তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।”
নয়নে কাজল তো সবাই পরে, কিন্তু ক’জন আর ভুরু বাঁকিয়ে চাইতে পারে! ‘সপ্তপদী’ ছবিতে উত্তমকুমারের দিকে সুচিত্রা সেন যেভাবে ভুরু বাঁকিয়ে তাকিয়েছিলেন, সে ভাবে চোখের দৃষ্টি দিয়েই মনের কথা বোঝাতে কোন মেয়ে না চায়! এক কথায়, চোখের সৌন্দর্য কিন্তু অনেকাংশেই নির্ভর করে তার উপরে থাকা ঘন এক জোড়া ভুরুর উপর। সুন্দর চোখকে আরও রহস্যময়ী করে তোলে ভুরু। তবে ক্রমাগত স্টাইলিং, প্লাকিং ইত্যাদি নানা কারণে আজকাল অনেকেরই ভুরু পাতলা হয়ে যায়। তাই যত্ন নেওয়া প্রয়োজন ভুরুর।
সমস্যার কারণ
কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই অনেক সময়ে ভুরু থেকে রোম ঝরে যেতে শুরু করে। আবার শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনও অসুস্থতা বা জেনেটিক কারণেও ভুরু পাতলা হয়ে যেতে পারে। প্লাস্টিক সার্জন ডা. মণীশ সান্থালিয়া বললেন, “এগজ়িমা এবং পোরিয়োসিসের মতো নানা ত্বকের সমস্যা বা শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার কারণে অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হন। তা ছাড়া, শরীরে কোনও জটিল রোগ বাসা বাঁধলেও এই সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি অত্যাধিক প্লাকিং বা ক্রমাগত রূপচর্চা, ফেশিয়াল, মেকআপ ব্যবহারের কারণেও অনেকের ভ্রু পাতলা হয়ে যায়। রূপচর্চায় থার্মাল বা কেমিক্যাল বার্ন হয়েও অনেক সময়ে ভ্রুর ক্ষতি হয়।
ভ্রু ভাল রাখতে
ত্বক ও চুলের মতো ভ্রুর যত্ন করাও প্রয়োজন। রাতে শোয়ার আগে মুখের মতো নিয়মিত ভ্রুর মেকআপ তোলা জরুরি। কড লিভার অয়েল থেকে পাওয়া ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ভ্রুর পক্ষে বেশ ভাল। তা ছাড়া, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিতে পারেন বায়োটিন জাতীয় ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ও মাল্টিভিটামিন। এর মাধ্যমে ভ্রু-এ রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। পাশাপাশি ভুরু ভাল রাখতে
পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত শারীরচর্চা,
স্ট্রেস কম করা প্রয়োজন।
সমাধান
ডা. মণীশ বলছেন, “সকলের আগে ভ্রু ঝরে যাওয়ার কারণ খুঁজে বার করা দরকার। তার পর প্রয়োজন মতো অ্যান্টিফাঙ্গাল বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা করাতে হবে। শরীরে থাইরয়েড বা অন্য রোগ বাসা বাঁধলে প্রথমেই তার চিকিৎসা শুরু করতে হবে। পাশাপাশি ভ্রুর ঘনত্ব বাড়াতে বাজারে এখন নানা ধরনের জেল কিনতে পাওয়া যায়, তা-ও ব্যবহার করতে পারেন। বাড়িতেও নারকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েল সহযোগে এই জেল বানিয়ে নিতে পারেন। ভুরু ঘন করার পাশাপাশি শেপেও রাখতে সাহায্য করে এই জেল। তা ছাড়া, ঘনত্ব বাড়াতে প্রয়োজনে করা যেতে পারে ভ্রু প্রতিস্থাপনও।
ভ্রু প্রতিস্থাপন
মাথার চুলের মতো ভ্রু-ও প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। ভ্রু একেবারে পাতলা হয়ে গেলে অনেকেই তা প্রতিস্থাপন করে নেন। ডা. সান্থালিয়া বললেন, “ভ্রু প্রতিস্থাপন করতে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া ব্যবহার করা হয়। এফইউটি (ফলিকিউলার ইউনিট ট্রান্সপ্লান্ট) এবং এফইউই (ফলিকিউলার ইউনিট এক্সট্রাকশন) এই দুই পদ্ধতিতে ভ্রু প্রতিস্থাপিত করা হয়। মূলত মাথার পিছনের দিক থেকে ছোট ফলিকল নিয়ে তা ভুরুতে ইমপ্লান্ট করা হয়। এক এক দিকের ভ্রুর জন্য প্রায় ২৫০-৪০০ ফলিকল প্রয়োজন হয়। ডার্মাটোলজিস্টরা সাধারণত এফইউই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। এ ক্ষেত্রে মেশিনের সাহায্যে ফলিকল হারভেস্ট করা হয়। এ ক্ষেত্রে ফলিকলগুলি অনেকসময়ে ডিস্টেবিলাইজ়ড হয়ে যায়। প্লাস্টিক সার্জনরা মূলত এফইউটি পদ্ধতি পছন্দ করেন। এই পদ্ধতিতে হাত দিয়ে ফলিকল ইমপ্লান্ট করা হয়।
প্রতিস্থাপনের পর
ভ্রু প্রতিস্থাপনের তিন দিন পর ক্রাস্টিং এড়াতে বিশেষ ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়। খেয়াল রাখবেন, প্রতিস্থাপনের পর অন্তত পনেরো দিন একেবারেই ত্বকের কোনও চিকিৎসা, ফেশিয়াল, ব্লিচ ইত্যাদি করানো চলবে না। ত্বকে কোনও ক্রিম লাগানোর আগেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রতিস্থাপন চিকিৎসা অনেকটাই অন্যান্য অপারেশনের মতো। তাই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। প্রতিস্থাপনের পর ৭২ ঘণ্টা রাস্তায় না বেরোনোই ভাল। এতে ধুলো, ময়লায় সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
পরিচর্যা
প্রতিস্থাপিত ফলিকলগুলি বেড়ে উঠতে ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগে। প্রতিস্থাপনের পরে মাথার চুলের মতোই বাড়ে ভ্রু। তবে আলাদা করে প্রতিস্থাপিত ভুরুর পরিচর্যা করার কোনও প্রয়োজন হয় না। মাঝে মাঝে কেবল একটু ভ্রু শেপ করে দেওয়া ও ট্রিম করা প্রয়োজন হয়।
সতর্কতা
শহর জুড়ে এখন বেশ কিছু সালঁয় কোনও প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসকের উপস্থিতি ছাড়াই প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে। ডা. সান্থালিয়া বললেন, পার্লার কিংবা সালঁ-য় নয়, ভ্রু প্রতিস্থাপন করা উচিত চিকিৎসকের পরামর্শেই। ডার্মাটোলজিস্ট বা প্লাস্টিক সার্জনের তত্ত্বাবধানে ভ্রু প্রতিস্থাপন করা জরুরি। অনভিজ্ঞ হাতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভ্রু প্রতিস্থাপন অনেক সময়েই বিপজ্জনক হতে পারে। সংক্রমণের ভয়ও সে ক্ষেত্রে বেশি থাকে।
বিশেষ পরামর্শ
ভ্রু প্রতিস্থাপনের আগে রক্ত পরীক্ষা ও ত্বকের পরীক্ষা করা জরুরি। রক্তে শর্করা এবং হিমোগ্লোবিন ঠিক মাত্রায় থাকা জরুরি। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে প্রতিস্থাপন করা বিপজ্জনক হতে পারে। পাশাপাশি লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া ব্যবহারে রোগীর সমস্যা থাকলেও এই প্রতিস্থাপন করা হয় না।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সাধারণ ভাবে ভ্রু প্রতিস্থাপনের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ডা. মণীশ সান্থালিয়া জানালেন, বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে প্রতিস্থাপন না করালে চোখে সংক্রমণ হওয়ার ভয় থাকে। তা ছাড়া, ভ্রু প্রতিস্থাপনের পর সাময়িক ব্যথা হতে পারে। চোখ ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মোটামুটি পাঁচ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়। ব্যথার ওষুধও খেতে হতে পারে।
সব চিকিৎসা পদ্ধতিতেই কমবেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। ডা. মণীশ সান্থালিয়ার মতে, তাই অহেতুক ভয় না পেয়ে কেবল সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভ্রু প্রতিস্থাপন চিকিৎসা।
পুরুষ-নারী নির্বিশেষে যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই ভ্রু প্রতিস্থাপন করাতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy