ঠোঁটের কোণে ঘা, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসা, রক্তাল্পতা বা হাড়ের সমস্যা... এ জাতীয় বিভিন্ন রোগবালাই ডেকে আনতে পারে অপুষ্টি। আবার অতিরিক্ত খাবারের ফলেও শরীরে থাবা বসাতে পারে ওবেসিটির মতো অসুখ। তাই সুষম আহার ও যথাযথ পুষ্টি হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখা প্রয়োজন।
একটি শিশুর ওজন ঠিকঠাক বাড়লে বা তার চেহারা ভাল হলেই অনেকে ধরে নেন যে, তার খাওয়াদাওয়ায় কোনও ত্রুটি নেই। কিন্তু আগে বুঝতে হবে, এই ধারণাটির গোড়াতেই গলদ। একটি শিশু চিপস, কোল্ড ড্রিঙ্কস, পাস্তা জাতীয় খাবার রোজ খেয়ে গেলে তাকে দেখে অপুষ্টির শিকার মনে হবে না। কিন্তু আসলে তার পুষ্টির অভাব হতেও পারে। তার ভিটামিনসের অভাবে চোখে সমস্যা দেখা দিতে পারে আবার অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুডের ভারে ওবেসিটিও তার ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই রোজকার খাবারে নজর রাখুন।
অপুষ্টিজনিত অসুখ
অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা: পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ মেয়ের মধ্যেই রক্তাল্পতার প্রবণতা থাকে। তার একটি কারণ আয়রনের অভাব। রোজকার খাবারে আয়রন ঠিক মাত্রায় হয়তো থাকে না। আবার শরীরে আয়রন অ্যাবজ়র্ব করার জন্য দরকার যথাযথ মাত্রায় ভিটামিন সি গ্রহণ। ফলে এক দিকে যেমন আয়রনের জোগান দেওয়ার জন্য পালং শাক, লিভার বা মেটে, ডাল, টোফু ইত্যাদি খেতে হবে, তেমনই ভিটামিন সি-র জন্য মুসাম্বি, পাতিলেবুর মতো সিট্রাস ফল, স্ট্রবেরি, বেল পেপার, তরমুজও রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। না হলে আয়রন-সমৃদ্ধ খাবার রোজ খেলেও শরীর তা গ্রহণ করতে পারবে না।’’
অস্টিয়োপোরোসিস: একটা বয়সের পর থেকে অনেক মহিলাই ভঙ্গুর হাড়ের সমস্যায় ভুগতে থাকেন। তার মুখ্য কারণ হল, ক্যালসিয়ামের অভাব। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। তবে তিন মাস ক্যালসিয়াম খেয়ে এক মাস তা বন্ধ রাখতে হয়। অন্য দিকে শরীর যাতে এই ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারে, তাই রোজ শরীরে রোদ লাগানোও জরুরি। কারণ খাবারে ভিটামিন ডি খুব কম পরিমাণে পাওয়া যায়। একমাত্র রোদ থেকেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে সহায়ক। তাই অস্টিয়োপোরোসিস রুখতে একসঙ্গে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি প্রয়োজন।
থাইরয়েডের সমস্যা: এর কারণ আয়োডিনের অভাব। আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর থাইরয়েডের ওঠানামার জন্য সন্তানধারণেও সমস্যা দেখা দেয়।
দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: চোখ ভাল রাখতে ভিটামিন এ খুব জরুরি। রোজ গাজর, বাঁধাকপি ও আনাজপাতি রাখা উচিত খাদ্যতালিকায়। না হলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়া, চোখ পিটপিট করা ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া: ডায়াবিটিস থাকলে বা ওজন কমাতে অনেকেই কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশ কমিয়ে দেন। কিন্তু শরীরে শক্তি জোগাতে কার্বসেরও দরকার আছে। ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আশঙ্কা কিন্তু বেশি। এতে হঠাৎ করে গ্লুকোজ় লেভেল অনেকটা নেমে যায়। কিছু ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রাণঘাতীও। তাই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
এডিমা: প্রোটিনের অভাবে এডিমা হয়। ‘‘শিশু থেকে বয়স্কদের মধ্যে এই অসুখ দেখা যায়। কোনও কারণে প্রোটিন বেশি খাওয়া না গেলে বা অপুষ্টিজনিত কারণে প্রোটিনের অভাব দেখা দিলে এই অসুখটি দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে হাত, পায়ের কিছু অংশ ফুলে যায়।’’ বললেন সুবর্ণা।
অতিপুষ্টিও ভাল নয়
ওবেসিটি তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি যে, অতিপুষ্টি নয় বরং অপুষ্টিকর খাবারই মূলত ওবেসিটির জন্য দায়ী। অনলাইন ফুড অ্যাপের দৌলতে বাড়িতে বসে খুব সহজেই হাতের কাছে চলে আসছে চাইনিজ়, কন্টিনেন্টালের মতো মুখরোচক খাবার। কিন্তু এ ধরনের খাবার স্বাদু হলেও পুষ্টিগুণ কতটা থাকে তা কি আমরা বিচার করি? আর এখানেই সমস্যা শুরু। খাদ্যাভ্যাস পাল্টে রোজকার ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে ফল ও আনাজপাতি যোগ করলেই কিন্তু পুষ্টির জোগান বাড়বে এবং ওবেসিটির মতো অসুখের হাত থেকে রেহাই মিলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy