বিনা দোষে শাস্তি পাচ্ছে পোষ্যরা। ছবি: সংগৃহীত
হালে এক সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফেরার সময় একটি দৃশ্য দেখে থমকে গেলেন দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা রুমা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখলেন, তাঁর প্রতিবেশীর বাড়ির বাইরে বসে রয়েছে একটি ল্যাব্রাডর রিট্রিভার কুকুর। এটি তাঁর প্রতিবেশীরই কুকুর। বছর ১০ ধরে কুকুরটিকে ওই বাড়িতে দেখছেন রুমা। কিন্তু কোনও দিনই এ ভাবে সন্ধ্যাবেলা বাড়ির বাইরে বসে থাকতে দেখেননি। শুধু বসে থাকাই নয়, একই সঙ্গে চলছে কান্নাও।
কী এমন হল? কৌতূহল থেকেই রুমা প্রতিবেশীদের ডাকলেন। অল্প সময়েই জানা গেল, এর পিছনে রয়েছে কোভিড-আতঙ্ক। ‘পশুদেরও কোভিড হচ্ছে’ এমন এক খবর কোনও এক সূত্র থেকে পেয়েছেন তাঁরা। এর পরে পরিবারের ১০ বছরের সদস্যকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন নির্দ্বিধায়।
তবে এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ রকম বহু ঘটনার খবর আসছে নানা জায়গা থেকে। ৩ বছরের কিছু বেশি সময় ধরে বিগল জাতের কুকুর পুষছেন দমদমের বাসিন্দা শুভেন্দু দাস। কোভিডের কারণে বাড়ির পোষ্যটিকে কি ভয় পাচ্ছেন তিনি? শুভেন্দু বলছেন, ‘‘গত বছর যখন কোভিড শুরু হল, বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু অল্প দিনেই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে কোনও সন্দেহ রইল না। বাড়ির পোষ্য বা অন্য পশুদের থেকে মানুষের কোভিড হওয়ার আশঙ্কা কম। বরং মানুষের থেকে ওদের হতে পারে। তা হলে বাড়ির পোষ্যকে নিয়ে আমি ভয় পাব কেন?’’
বর্তমানে আবার তীব্র গতিতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। আর তাতেই অমূলক এই ভয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে দাবি কুকুর প্রশিক্ষক অভিজিৎ দত্তর। ‘‘প্রায় ১৪-১৫ বছর এই পেশায় রয়েছি। এখনও কাজ করছি। কোনও বাড়িতে কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিতে অসুবিধা হয় না। ওদের কাছে যেতেও সংক্রমণের ভয় হয় না। বরং ওদের মালিকদের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। চিকিৎসকদের থেকে যেটুকু জেনেছি, তাতে কুকুরদের থেকে করোনা ছড়ায় না।’’ এমনটাই বলছেন অভিজিৎ।
বাড়িতে পোষ্য নেই। কিন্তু রাস্তার কুকুরদের নিয়মিত খাওয়ান বেহালার মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘করোনার শুরুতে একটা খবর পেয়েছিলাম, আমেরিকার কোনও একটি বাড়ির পোষ্য কুকুরের নাকি করোনা হয়েছিল। কোনও এক চিড়িয়াখানায় বাঘের করোনা হয়েছিল বলেও খবর এসেছিল সেই সময়। তা থেকেই প্রাথমিক একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।’’ বলছেন মিতা। কিন্তু এই ভয় সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে নিজে বিশ্বাস করেন তিনি। ‘‘সংবাদমাধ্যমে বারবার বলা হচ্ছে, চিকিৎসকরা বলছেন, পোষ্যদের থেকে কোভিডের ভয় নেই। তবু বহু মানুষই এই সময় রাস্তার কুকুরদেরও এড়িয়ে চলেন। আগে যাঁরা ওদের খেতে দিতেন, এখন দেন না।’’
তবে শুধু রাস্তার কুকুর নয়, বাড়ির বহু বছরের সদস্য কুকুরদের রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া, তাড়িয়ে দেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে কোভিডের কারণে। ‘‘আমার পরিচিত কেউ এমন কাণ্ড ঘটাননি ঠিকই, তবু কানে এ ধরনের কথা যে একেবারে আসছে না, তাও নয়’’, বলছেন শুভেন্দু। ‘‘কোনও বিষয় নিয়ে ভয় বা সংশয় হতে পারে। এ ধরনের কোনও কিছু নিয়ে সন্দেহ থাকলে, তার সমাধান পেতে এক জন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই তো মিটে যায়। তার জন্য বাড়ির এত দিনের সদস্যকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অর্থ কী?’’ প্রশ্ন অভিজিতের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy