দর্জিলিংকে খুঁজতে হবে আশপাশে। ছবি: সংগৃহীত
পাহাড়ি রাস্তার বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে পড়লেন প্রৌঢ়। দূর থেকে ভেসে আসছে ‘এ পরবাসে রবে কে হায়’। প্রৌঢ় দাঁড়িয়ে শুনতে শুরু করলেন দূর থেকে ভেসে আসা বোনের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত। এই গোটা দৃশ্যটির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছে বাঙালির দার্জিলিং-প্রেম। পাহাড়ি সান্যাল, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ আর দার্জিলিং। এখন সেই দার্জিলিং অনেকটা বদলে গেলেও, বাঙালির সেই প্রেমে বিশেষ বদল আসেনি।
করোনার পর এ দিক ওদিক ঘোরা কমেছে। কিছুটা বেড়েছে ভার্চুয়াল বা নেটমাধ্যমে ভ্রমণ। কিন্তু একটা শহর চিনতে গেলে নেটমাধ্যম যথেষ্ট নয়। তার অলিগলিতে লুকিয়ে থাকা গল্পগুলোর কী হবে? হালের ‘বহুমাত্রিক’ ভ্রমণ সেই সুযোগটাই করে দিচ্ছে ঘরে বসে। কলকাতাতে বসেই পেতে পারেন এক টুকরো দার্জিলিং।
কেমন এই বেড়ানো?
একটা শহরকে দেখার জন্য এখন অনেকেই বেছে নিচ্ছেন সেই শহর নিয়ে তৈরি হওয়া কয়েকটি সিনেমা, শহরটির উপর লেখা কয়েকটি বই আর এমন রেস্তঁরা, যেখানে ওই শহরের জনপ্রিয় পদগুলি পাওয়া যাবে। সব ক’টা মিলিয়ে মনের মধ্যে তৈরি হবে বেড়াতে চাওয়ার শহরটার একটা ভাব। এ ভাবেই দার্জিলিংয়ের স্বাদ নিতে চাইলে আপনি কী করতে পারেন? সন্ধান করল আনন্দবাজার ডিজিটাল।
সিনেমা: ‘‘দার্জিলিঙের কথা মনে পড়লেই, এখনও আমার দৌড় একটাই— মাণিকবাবুর ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। সিনেমাটা চালিয়ে বসে পড়ি।’’ বক্তা বছর পঞ্চাশের অপর্ণা ভৌমিক। পাশ থেকে তাঁর বর সুপ্রিয় ভৌমিকের তীব্র আপত্তি! ‘‘না, আমার কাছে আগে ‘আরাধনা’, তার পরে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। প্রেমের জন্য ‘আরাধনা’র তুলনা নেই’’, বলছেন সুপ্রিয়। তবে পর্দায় দার্জিলিং দেখতে হলে তাঁদের পরের প্রজন্মের অবশ্য বেশি পছন্দের ছবি ‘ম্যায় হুঁ না’। ‘‘শাহরুখ খান, সঙ্গে দার্জিলিং। লকডাউনের সময়ই আবার দেখলাম সিনেমাটা।’’ বলছেন বেসরকারি কোম্পানির কর্মী হিন্দোল সাহা। তালিকায় রয়েছে আরও কয়েকটি হিন্দি ছবির নাম। ‘বরফি’, ‘জগ্গা জাসুস’ আর ‘পরিণীতা’। বাংলার তালিকায় আছে ‘সাঁঝবাতি’-র মতো ছবি। এগুলির কয়েকটা দেখে ফেললেই পর্দায় দার্জিলিং ভ্রমণের অনেকটা সেরে ফেলা যাবে।
ঘুরে দেখা: অনেক চেষ্টা করলেও কলকাতা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা সম্ভব নয়।তাতে কী! দার্জিলিং আছে কলকাতাতেই। চলে যান জাপানি বৌদ্ধ মন্দিরে। ঢাকুরিয়া এলাকায় সরোবর লাগোয়া এই মন্দিরে গেলে দার্জিলিঙের বৌদ্ধ সংস্কৃতির কিছু চেহারা দেখতে পাবেন। সেই ৫ রঙের পতাকা, সেই গংয়ের গমগমে আওয়াজ। ‘‘২ বছর আগে প্রথম এই মন্দিরে যাই। বাইরে থেকেই দার্জিলিঙের পিস প্যাগোডার কথা মনে পড়ে যায়। এখানকার প্রধান উপাসক নিজেও দার্জিলিঙের। তাঁর ঘর, তাঁর কথা— সবই মনে পড়িয়ে দেয় দার্জিলিঙের কথা। মনে হয়, ওখানেই আছি’’, বলছেন স্কুলশিক্ষিকা অমৃতা সেন।
পেট পুজো: দার্জিলিঙের গলিতে গলিতে তিব্বতি খাবারের গন্ধ। ভাবছেন, এখানেও যদি ও রকম খাবার পেতেন? সেই ব্যবস্থাও আছে। ‘‘কলকাতায় ‘টিবেটান ডিলাইট’-এর তিব্বতি খাবারের তুলনা হয় না। দার্জিলিঙে স্থানীয়দের ঘরের তিব্বতি খাবার খেয়েছি। তার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।’’ দাবি বছর চল্লিশেকের অংশুমান চট্টোপাধ্যায়ের। এই তালিকায় চলে আসতে পারে কলকাতার আরও বেশ কিছু রেস্তরাঁ। ‘দ্য ব্লু পপি’, ‘দ্য টিবেটান ফ্লেবারস’-এর মতো রেস্তঁরা বা ‘ওয়াও মোমো’র মতো দোকান। ‘‘দার্জিলিঙে ‘গ্লেনারিজ’-এর মতো রেস্তরাঁ দারুণ চিনা খাবার বানায়, বা কনটিনেনটাল বিক্রি করে। পার্কস্ট্রিটের ‘মোক্যাম্বো’, ‘পিটার ক্যাট’ বা টুং ফং’-এ সে স্বাদের অনেকটাই পূরণ হবে। আর ‘ক্যাভেনটারস’-এর প্রাতঃরাশের স্বাদ মেটানো যেতে পারে ‘ফ্লুরিজ’-এ।’’ বলছেন ট্রাভেল-ব্লগার সুতীর্থ রায়।
পড়ে জানা: দার্জিলিঙের ‘অক্সফোর্ড বুকস অ্যান্ড স্টেশনারিজ কং’ অতি প্রাচীন দোকান। পাওয়া যায় দার্জিলিং সংক্রন্ত বহু বইও। কিন্তু শুধু সেটাই কেন? কলকাতায় বসেও খুঁজে পেতে পারেন এমন বই, যা মানসচক্ষে আপনাকে হাজির করবে ম্যালের সামনে। প্রথমেই আসবে সত্যজিৎ রায়ের ‘দার্জিলিং জমজমাট’। ‘‘দার্জিলিং সম্পর্কে জানতে গেলে ফেলুদার উপন্যাসটার কোনও তুলনা হয় না। তবে শুধু ওটাই কেন, ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ও চোখের সামনে দার্জিলিংকে তুলে ধরে।’’ বলছেন স্কুলশিক্ষিকা অমৃতা। ‘‘দার্জিলিং নিয়ে খুব ভাল লেখা জেসন গুডউইনের ‘দ্য গানপাউডার গার্ডেনস’। এশিয়ার এই এলাকায় চা চাষের ইতিহাস নিয়ে লেখা এই বই অন্য একটা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে দার্জিলিংকে। যা আমরা অতটাও চিনি না।’’ বলছেন ট্রাভেল-ব্লগার সুতীর্থ।
কলকাতার মধ্যে টুকরো টুকরো ছড়িয়ে থাকা দার্জিলিং ডাকছে আপনাকে। মাস্ক পরে, স্যানিটাইজার নিয়ে পৌঁছে যান সাধের দার্জিলিঙে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy