Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
mobile

মোবাইল বা টিভি শিশুর জন্য অত সর্বনেশে নয়! এমনই বলছে নতুন গবেষণা

এমনটাই দাবি করেছেন চিকিৎসক-গবেষকরা। ৬-১৪ বছর বয়সি কয়েকশো শিশুর জীবনযাত্রার উপর এই গবেষণা চলে।

শিশুদের মোবাইল আসক্তি নিয়ে অকারণেই ভয় পাচ্ছেন কি? ছবি: আইস্টক।

শিশুদের মোবাইল আসক্তি নিয়ে অকারণেই ভয় পাচ্ছেন কি? ছবি: আইস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:৩০
Share: Save:

শিশুদের বায়না ভোলাতে হাতে মোবাইল তুলে দেওয়া হোক কিংবা অভিভাবকদের ব্যস্ততার সময় শিশুদেরও ব্যস্ত রাখতে কার্টুন, ঘরে-বাইরে এমন ছবির নজির কম নেই। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রয়েছে চিকিৎসকদের সতর্কবার্তাও। ঘন ঘন মোবাইল বা টিভির স্ক্রিন শিশুদের উপর কতটা কুপ্রভাব বিস্তার করে, সে সম্পর্কে কমবেশি সকলেই সচেতন। তবে এ বার একটু অন্য সুর শোনালেন দ্য রয়াল কলেজ অব পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড চাইল্ড হেল্‌থ (আরসিপিসিএইচ)-এর গবেষকরা। তাঁদের মতে, মোবাইল বা টিভির স্ক্রিন নিয়ে এত ভয় অমূলক। শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ‘বিষাক্ত’-ও নয় এ সব।

সম্প্রতি আমেরিকার বিএমজে মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এমনটাই দাবি করেছেন চিকিৎসক-গবেষকরা। ৬-১৪ বছর বয়সি কয়েকশো শিশুর জীবনযাত্রার উপর এই গবেষণা চলে।

গবেষণার প্রধান রাসেল ভিনারের কথায়, “কয়েক জন শিশুকে নিয়ে এই পরীক্ষা করে আমরা দেখেছি শরীরের পক্ষে ঠিক কতখানি স্ক্রিন-সময় ক্ষতিকারক, বা আদৌ তা ক্ষতিকর কি না তারতেমন কোনও প্রমাণই নেই। মোবাইল বা টিভি-র বিষয়ে অভিভাবকরা না জেনেই বড় বেশি ভয় পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে হতাশা বা মেদবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসাবে যে ‘স্ক্রিন-টাইম’-কে দায়ী করা হয়, তারও কোনও নিশ্চিত প্রমাণ নেই। বরং এই সব ইলেকট্রনিক গ্যাজেট আধুনিক যুগের সঙ্গী।’’

আরও পড়ুন: ত্বকের ক্যানসারের হানা ঠেকাতে মেনে চলুন এ সব

এই দলেরই অন্যতম সদস্য ম্যাক্স ডেভি-র মতে, ‘‘মোবাইল বা কম্পিউটার বরং জ্ঞানের পরিসর বাড়ায়। সারা বিশ্বে কত কী ঘটে চলেছে, সে সম্পর্কে শিশুরা জানতেও পারে মোবাইল ও কম্পিউটার থেকে।” তাই সে সবে হাত দিলেই অভিভাবকদের নিষেধাজ্ঞা উড়ে আসার মতো কোনও কারণ দেখছেন না গবেষকরা।

মোবাইল বা কম্পিউটার জ্ঞানের পরিসর বাড়ায় শিশুদের।

যদিও তাঁদের এই রিপোর্ট নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত চিকিৎসা মহল। আরসিপিসিএইচ-এরই আর এক দল চিকিৎসকের মতে, এর আগেও শিশুদের শরীর ও মন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, স্ক্রিনিং টাইমের বাড়াবাড়ির কারণেই মানসিক অবসাদ, ওবেসিটি, অন্যমনস্ক স্বভাব এমনকি, খিটখিটে হয়ে যাওয়া, কম ঘুমোনো— এ সব নেতিবাচক স্বভাবের শিকার হচ্ছে শিশুরা। সুতরাং সচেতনতার কারণ নেই, এমনটা বললে বিষয়টিকে লঘু করে দেখা হবে।

এই বিতর্ক দানা বেঁধেছে আরও এক কারণে। বিএমজে মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্টে চিকিৎসকরাও এত নিশ্চয়তার মধ্যে সামান্য, একটা ‘কিন্তু’ রেখে দিয়েছেন।গবেষকদের মতে, ঘুমনোর আগে বা পড়াশোনা ও শরীরচর্চার সময় শিশুর হাতে মোবাইল না দেওয়া, দিনের মধ্যে অনেকটা সময় টিভি দেখা— এ সব শিশুদের মোবাইল ও টিভি-র অপব্যবহার শেখায় ও তাদের নেশাগ্রস্ত করে তোলে। এমনকি খাওয়ার সময় টিভি না দেখার দিকেভোট তাঁদেরও। তাই এক দিকে মোবাইল বা টিভি থেকে শতহস্ত দূরে না থাকার পরামর্শ দিলেও অন্য দিকে এই সাবাধানতাগুলিও অবলম্বন করতে বলছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: মুখে দুর্গন্ধ? এ সব সহজ উপায়েই দূর করুন সমস্যা

আর এখানেই অপর এক চিকিৎসকগোষ্ঠীর দাবি, ক্ষতি করে বলেই এ সব নিষেধাজ্ঞার কথা হালকা ভাবে জানিয়ে রেখেছেন তাঁরাও। এমনই এক জন, লন্ডনের পেডিয়াট্রিক সার্জেন শ্রাবণী চক্রবর্তী। তাঁর মতে, ‘‘এই গবেষণা কিন্তু বিদেশের মাটিতে হয়েছে। এখানে মোবাইল বা টিভি সেটের শব্দ, আলো সবই অনেকটা স্বাস্থ্যকর যুক্তি মেনে রাখা হয়। তুলনায় ভারতে এই বিষয়গুলি নিয়ে অত সচেতনতার আশ্রয় নেওয়া হয় না। তাই ফলাফলেও ফারাক ঘটে। তা ছাড়া ‘স্ক্রিন টাইম’ কোনও রকম সমস্যা না ঘটালে গবষকরা নিজেরাও সচেতনতার প্রসঙ্গটুকু তুলতেন না। বরং এর আগেও নানা পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুদের হাড় ও স্নায়ুর অসুখ, মাথা যন্ত্রণা, মানসিক অবসাদ, সামাজিক না হতে পারার মতো সমস্যা ডেকে আনে। তবে হ্যাঁ, এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, সচেতনতা যেমন প্রয়োজন, তেমনই অল্পস্বল্প স্ক্রিন টাইম নিয়ে অকারণে বাতিকগ্রস্ত হওয়ারও কারণ নেই।’’

খাওয়ার সময় টিভি নয়।

ভয় কি কোথাও থেকেই যাচ্ছে? কলকাতার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এই গবেষণা অনেকটাই মোবাইল বা টিভি স্ক্রিন নিয়ে মা-বাবার মনের অহেতুক বাড়াবাড়ি রকমের ভয়কে কমাবে ঠিকই। এগুলো নিয়ে বাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়েন অনেক অভিভাবক। সে সব কাটিয়ে ওঠাই ভাল। তবে অনেকটা সময় ধরে মোবাইল বা টিভিতে ব্যস্ত থাকলে তা ক্ষতিসাধন করেই। শরীরের সঙ্গে শিশুদের মনেও চাপ বাড়ায়। কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আঙুলের হাড় ও স্নায়ুর অসুখ ধরা পড়ে।’’

আরও পড়ুন: সুগার ভুলতে সুগার ফ্রি-তে মজেছেন? আরও বড় বিপদ বাসা বাঁধছে শরীরে

কী করা উচিত তবে?

এই গবেষণার প্রেক্ষিতে কলকাতার স্নায়ু ও অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নারায়ণ মুখোপাধ্যায়, চক্ষুবিশেষজ্ঞ প্রাপ্তি ঘোষ, মনোরোগ চিকিৎসক অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, পেডিয়াট্রিক সার্জেন প্রবাল সরকারদের মতে, অভিভাবক হলে মেনে চলুন মূল কিছু বিষয়।

মোবাইল ছুঁলেই রে রে করে ওঠার দরকার নেই। বরং দিনের মধ্যে এক ঘণ্টা মোবাইল থেকে পড়াশোনা করলে ক্ষতি নেই। কিন্তু তা যেন কখনওই একটানা না হয়। স্ক্রিন টাইমের মধ্যেই মাঝে মাঝে উঠে চোখে জল দেওয়ান, প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ২০ সেকেন্ডের জন্য চোখ দূরের কোনও জিনিসে রাখুন। খাওয়ার সময়, পড়াশোনার সময় বা শরীরচর্চার সময় কোনও ভাবেই মোবাইল নয়। বাচ্চা কাঁদলেই তাকে মোবাইল বা কার্টুন দিয়ে ভোলাবেন না। বরং অনেয কিছুতে আগ্রহী করে তুলুন। তার সারা দিনের অন্যান্য কাজকর্ম ও পড়াশোনার সামগ্রীর মতোই মোবাইল বা কম্পিউটারকে ব্যবহার করতে সেখান। বাতিকগ্রস্ত হয়ে অল্পেই না বলার যেমন কারণ নেই, আবার তেমনই অতিরিক্ত আসক্তি অবশ্যই ক্ষতি করে শরীরে।

(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)

অন্য বিষয়গুলি:

Fitness Tips Health Tips Child Care Tips Tech
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE