বাড়ছে গরম। আগামী কয়েক মাস তাপপ্রবাহের সম্ভাবনাও রয়েছে। ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, কেউ বা এয়ার কুলার, কেউ আবার কেবল ফ্যানের ভরসাতেই থাকেন। কিন্তু তাপপ্রবাহের সময় সিলিং ফ্যানের কার্যকারিতা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু সকলের পক্ষে তো এয়ার কন্ডিশনার বা এয়ার কুলার কেনা সম্ভব নয়। যেখানে এয়ার কুলারের দাম ৬০০০ থেকে শুরু, আর এসি কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা। উপরন্তু, বিদ্যুতের চড়া বিল। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি বা শহর-শহরতলির অনেক বাড়িতে ঘর ঠান্ডার উপায় হিসেবে অনেকে মেঝেতে জল ঢেলে রাখেন অথবা জানালায় ভেজা কাপড় ঝুলিয়ে রাখেন। তবে সম্প্রতি প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী রীতিই ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য নতুন রূপে প্রকাশ্যে এসেছে। সেটি হল, মাটির পাত্রের এয়ার কুলার।
মাটির পাত্রের এয়ার কুলার একাধারে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। গ্রামীণ এবং শহুরে, দুই ধরনের বাড়িতেই জনপ্রিয় হয়েছে এটি। শোনা যাচ্ছে, দেশের দক্ষিণ প্রান্তে বেশি ব্যবহার হচ্ছে এই কুলার, যেমন তামিলনাড়ু, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু। তবে দিল্লির মতো উত্তর ভারতের শহরেও পরিবেশ-সচেতন পরিবারগুলি এসির ব্যবহার কমানোর জন্য এগুলিকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে।
কী ভাবে তৈরি হয়েছে এই কুলার?
মাটির শীতলকরণ বৈশিষ্ট্য (কুলিং প্রপার্টি), স্বল্প বিদ্যুৎ খরচ, সস্তা— সব মিলিয়েই এই কুলারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে দেশে। কাদামাটিতে প্রাকৃতিক ভাবে ছিদ্র থাকে। মাটির কুলারে তাই জল ধীরে ধীরে ছিদ্রের সাহায্যে কুলারের উপরিতলের মধ্যে দিয়ে বাষ্পীভূত হতে পারে। চারপাশের বাতাস থেকে তাপ টেনে নেয়। ফলে শীতল হয়ে যায় পরিবেশ। ঠিক একই নিয়মে মাটির পাত্রে জল রেখে দিলে ফ্রিজ ছাড়াই তা ঠান্ডা থাকে। মাটির পাত্রের এয়ার কুলার এই নিয়মকেই আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। হাতে তৈরি মাটির কাঠামোর তলায় জল ধরে রাখার জন্য একটি ফাঁপা জায়গা রয়েছে। পাত্রের সামনে ছোট বর্গাকার গর্ত করা হয়েছে, যাতে বায়ুপ্রবাহ সহজ হয়। পাত্রের মাথায় ছোট বৈদ্যুতিক ফ্যান লাগানো, যা গরম বাতাসকে পাত্রের মধ্যে দিয়ে নীচের দিকে ঠেলে দেয়। সেই বাতাসই ঠান্ডা হয়ে গর্ত দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। ওই ছোট ফ্যানটিই তখন সিলিং ফ্যানের থেকে অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠে।

মাটির শীতলকরণ বৈশিষ্ট্য, স্বল্প বিদ্যুৎ খরচ, সস্তা— সব মিলিয়েই এই কুলারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে দেশে। ছবি: সংগৃহীত।
মাটির পাত্রের এয়ার কুলারের বিক্রেতাদের পরামর্শ, পাত্রের চারপাশে একটি ভেজা কাপড় জড়িয়ে রাখলে আরও ভাল ভাবে কাজ করতে পারে এই যন্ত্র। এর ফলে পাত্রের উপরিতল থেকে অতিরিক্ত আর্দ্রতা বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসকে আরও ঠান্ডা করে।
কত দাম?
মাটির পাত্রের এয়ার কুলারের বেসিক সিঙ্গেল-ফ্যান মডেল এখন ২,৬০০ টাকায় পাওয়া যায়। ছোট ঘরের জন্য এটি উপযুক্ত। ডবল-ফ্যান মডেলের দাম প্রায় ৩,৯০০। এর থেকেও বড়টি পাওয়া যায় ৬,০০০ টাকায়। বিদ্যুৎ খরচ ন্যূনতম। কারণ, কেবল একটি ছোট ফ্যানের বিদ্যুৎ খরচ হয় এটিতে।
সীমাবদ্ধতা কী?
উচ্চ তাপমাত্রা এবং শুষ্ক আবহাওয়ার অঞ্চলে এই কুলার বেশি কার্যকরী। তাই এটি পশ্চিমবঙ্গের সব জেলার জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে। কিন্তু শুষ্ক আবহাওয়ার জেলাগুলিতে এটি ব্যবহার করা যায়। যদিও এয়ার কন্ডিশনারের মতো ঘর ঠান্ডা করতে পারবে না, তা-ও ছোট ঘরের ক্ষেত্রে ফ্যানের চেয়ে বেশি ভাল কাজ দেবে। জানলার সামনে বা হাওয়া-বাতাস চলাচল করে, এমন জায়গায় রাখলে উপকার বেশি।
কোথায় পাওয়া যাবে?
দক্ষিণ ভারতে ছোটখাটো দোকানেও কুলারগুলি বিক্রি করা হয়। কিন্তু বাংলায় বসে মাটির এয়ার কুলার পেতে হলে অনলাইনে খুঁজতে পারেন। সস্তায় পাওয়া যাবে কয়েকটি সাইটে। এ ছাড়া সমাজমাধ্যমের ভিডিও দেখে নিজে নিজে বানিয়েও নেওয়া যেতে পারে।