গরমের দিনে রকমারি শরবতে ভিজিয়ে রাখা তুলসীর বীজ খাওয়ার চল বেশ পুরনো। পাতিলেবুর শরবত হোক, কি কুলুক্কি (পাতিলেবুর রস, চিনির সিরাপ, তুলসীর বীজ, মশলা সহযোগে তৈরি গরমে খাওয়ার পানীয়)—রকমারি পানীয়ে খাওয়া হয় তুলসীর বীজ। তবে লোকমুখে এটি ‘সবজা’ নামেই বেশি পরিচিত। আবার স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, মেদ ঝরাতে চিয়াবীজ ভিজিয়ে সেই জলও খান অনেকে।
চিয়া হোক বা তুলসীর বীজ, দু’টিই উপকারী সন্দেহ নেই। কিন্তু পুষ্টিগুণের বিচারে এগিয়ে কে? চিয়া না তুলসী, গরমের দিনে কে কাকে টেক্কা দেবে?
চিয়া বীজ: ওজন কমাতে অনেকেই সকালে চিয়া ভেজানো জল খান। পুষ্টিবিদেরা বলেন, চিয়াতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন মেলে। এতে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে খাকে ফাইবারও। ফাইবার হজমে সাহায্যকারী ভাল ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। চিয়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। ভিটামিন, বি, সি এবং ই।

সবজা বীজ দিয়ে তৈরি শরবত। ছবি: ফ্রিপিক।
১ টেবিল চামচ চিয়া বীজে থাকে ৫৮ কিলোক্যালোরি, ৫ গ্রাম প্রোটিন, ৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫ গ্রাম ফাইবার, ৩.৮ গ্রাম ফ্যাটি অ্যাসিড বা ফ্যাট, ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম, ১ মিলিগ্রাম আয়রন, ৪০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম, ৮৬০ মিলিগ্রাম ফসফরাস।
তুলসীর বীজ: তুলসীর বীজের গুণও কিছু কম নয়। শরীর ঠান্ডা রাখতে, হজমে সহায়ক বীজটি। এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতে তা সাহায্য করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এই বীজের ভূমিকা রয়েছে।
১ টেবিল চামচ তুলসীর বীজে মেলে ৫৭ কিলোক্যালোরি। প্রোটিন ২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৭ গ্রাম, ফাইবার ৭ গ্রাম, ফ্যাট ২.৫ গ্রাম। এ ছাড়াও মেলে ক্যালশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি এবং ফোলেট।
পুষ্টিগুণে এগিয়ে থাকল কে?
আরও পড়ুন:
সমপরিমাণ চিয়া বীজে প্রোটিন মেলে একটু বেশি। আবার ফাইবার তুলসীর বীজে পাওয়া কিঞ্চিৎ বেশি। উপকারিতায় কেউ কারও চেয়ে কম যায় না। তবে যদি গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার প্রসঙ্গ আসে, তা হলে চিয়ার থেকে তুলসীর বীজ একটু এগিয়ে থাকতে পারে বলছেন পুষ্টিবিদেরা। ‘জার্নাল অফ মেডিক্যাল অ্যান্ড হেল্থ সায়েন্সেস’-এ ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা সংক্রান্ত রিপোর্ট বলছে, হাইপোক্যালোরিক ডায়েট এবং চিয়া বীজ ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুতরাং কে, কোনটি খাবেন নির্ভর করবে শরীর এবং প্রয়োজনের উপর। যদি কারও প্রোটিনের চাহিদা কম থাকে, তিনি তুলসীর বীজ খেতে পারেন।
সমাজমাধ্যমপ্রভাবী পু্ষ্টিবিদ শ্বেতা জে পাঞ্চল বলছেন, ‘‘চিয়া বীজ ভিজতে অন্তত ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। তুলসীর বীজ দ্রুত ভিজে যায়। পেটের স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে, চিয়ার চেয়ে তুলসীর বীজ বেশি ভাল। চিয়া বীজে ভাল মাত্রায় প্রোটিন এবং খনিজ খাকে। অন্য দিকে, ব্রণের সমস্যা থাকলে, অম্বল-গ্যাসের সমস্যা হলে চিয়ার বদলে তুলসীর বীজ খাওয়াই ভাল।’’ পুষ্টিবিদেরা বলছেন, উপকারী দুই বীজ-ই। তবে প্রয়োজন মতো এবং পরিমিত পরিমাণে তা খেতে হবে।