Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mobile Games

Mobile Games: গেমের নির্দেশ পূরণেই কি এত বাড়ি ছাড়ার ঘটনা, ঝাঁপ

বাঁকুড়ার দুই স্কুলপড়ুয়া ট্রাক্টরের কিস্তির টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। কলকাতা পুলিশ এবং বাঁকুড়া পুলিশের সাহায্যে তারা ঘরে ফেরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২ ০৫:২৮
Share: Save:

কখনও বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কিছু দিন থেকে আসতে বলা হচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছে, বাড়ি থেকেই টাকা চুরি করে পছন্দের কোনও জিনিস কিনতে হবে। কখনও আবার নিজের রক্ত দিয়ে কিছু লিখতে বা নিজের হাতে-পায়ে পিন ফুটিয়ে কিছু আঁকতে বলা হচ্ছে। উঁচু থেকে ঝাঁপ দিয়ে বা অন্য কোনও ভাবে আত্মহত্যা করার নির্দেশও আসছে বহু ক্ষেত্রেই!

মোবাইল গেম খেলার নামে এমন ভয়ঙ্কর ‘টাস্ক’ পূরণ করতে গিয়েই বিপদে পড়েছেন অনেকে। অভিযোগ, অতীতে ব্লু-হোয়েলের মতো গেম নিয়ে চর্চা হলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এই ধরনের নির্দেশ পূরণ করতে পারলে কখনও মিলছে টাকা, কখনওপাওয়া যাচ্ছে আরও কঠিন টাস্ক। সেটিও পূরণ করলে থাকছে আরও বড় কিছু ‘উপহার’ পাওয়ার আশ্বাস। সমস্তটাই রেকর্ড করা থাকছে গেমের স্ক্রিনে। কোথাও টাস্ক পূরণের ভিডিয়ো লাইভ দেখানো হচ্ছে গেম কমিউনিটিতে, কখনও আবার স্রেফ বিনোদন হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে ‘ডার্ক ওয়েব’-এ!

গত কয়েক বছরে দেশের প্রায় সমস্ত তদন্তকারী সংস্থার অন্যতম মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে এই ধরনের গেম। মূলত স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারাই সব চেয়ে বেশি এই ফাঁদে পা দিচ্ছে বলে খবর। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাকি দেশের মতো এই শহরের ক্ষেত্রেও এমন গেম খেলার প্রবণতা বেড়েছে করোনার সময়ে। লকডাউনে অনেকেই মজেছেন মোবাইল গেমে। এর সঙ্গেই অনলাইনে পড়াশোনার জন্য স্কুলপড়ুয়াদের হাতে পৌঁছেছে মোবাইল। এর পরেই দেখা গিয়েছে, গত দু’বছরে নিখোঁজদের মধ্যে দ্রুত বেড়েছে স্কুল বা কলেজপড়ুয়াদের সংখ্যা। লালবাজার এবং ভবানী ভবনের মিসিং পার্সনস স্কোয়াড সূত্রের খবর, গত দু’বছরে গড়ে প্রতি পাঁচ দিনে এক জন করে পড়ুয়া নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে খোঁজ মেলেনি। কিছু ক্ষেত্রে খোঁজ মিলেছে মাসখানেক পরে। অনেকেই ফিরে এসে গেমের খপ্পরে পড়ার কথা জানিয়েছে।

দিনকয়েক আগেই বাঁকুড়ার বাসিন্দা দুই স্কুলপড়ুয়া ট্রাক্টরের কিস্তির টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। পরে কলকাতা পুলিশ এবং বাঁকুড়া পুলিশের সাহায্যে তারা ঘরে ফেরে। জানা যায়, গেম খেলতে গিয়েতাদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল এক ব্যক্তির। পরে গেমে একটি টাস্ক আসে, বাড়ি থেকে পালিয়ে দূরে কোথাও কাজ করে দিন কাটাতে হবে। সেই মতো বাড়ি ছাড়ে তারা। ওই ব্যক্তি আশ্বাস দেন কাজ পাইয়ে দেওয়ার। কিন্তু ধানবাদ পর্যন্ত পৌঁছেও কাজ না পেয়ে তারা ফিরে আসে। পুলিশের সন্দেহ, গেমের আড়ালে পাচার-চক্রেরও যোগ থাকতে পারে। দিন কয়েক নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে বাগুইআটির এক স্কুল পড়ুয়া। তার সন্ধান মেলেনি এখনও। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরের একটি মোবাইল ফোন রয়েছে। সেটি থেকেই বাবা-মায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কাজকর্ম করা হয়। সে নিখোঁজ হওয়ার আগে সেই মোবাইল ব্যবহার করেই অসম, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের বেশ কিছু জায়গার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত ই-ওয়ালেটে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছিল। নিখোঁজ ছাত্রের বাবার দাবি, ‘‘লকডাউনের সময় থেকেই ছেলে মোবাইল গেমে ডুবে থাকত। টাকা দিয়েও খেলত। সেই কারণেই বেরিয়ে গিয়েছে কি না, জানি না।’’

সাইবার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে টাকা দিয়ে খেলার মতো গেমের ছড়াছড়ি বাজারে। ঝুঁকি রয়েছে, নিজের দায়িত্বে খেলুন, এইটুকু সর্তকতার বার্তা দেওয়ার দায়িত্বপালন করেই বহু সংস্থা যেমন খুশি গেম সাইট চালু করে দিচ্ছে। কমবয়সীরা এই গেম খেলতে কখনও বড়দের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছে। কখনও হাতিয়ে নিচ্ছে বাড়িতে রাখা টাকা।’’ তা হলে উপায়? সাইবার গবেষক তথা ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘এমন গেমের বিরুদ্ধে তেমন কোনও আইন নেই। সরকার এখনও এ নিয়ে অতটা মাথা ঘামায়নি। কিন্তু দ্রুত আইন করে একটা বিধি বলবৎ না-করা পর্যন্ত বিপদ রয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mobile Games Effect
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy