Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

মামুলি উপসর্গকে উপেক্ষা নয়, সাবধান করছেন ডাক্তারেরা

চেনা উপসর্গের পিছনেও লুকিয়ে থাকতে পারে করোনা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২১ ০৭:০৭
Share: Save:

শুধু জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যাথা কিংবা স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়া নয়। বিভিন্ন চেনা উপসর্গের পিছনেও লুকিয়ে থাকতে পারে করোনা। আর সেই সব উপসর্গের চিকিৎসা না করে রোগীদের একাংশ কিছু দিন ঘরে বসে অপেক্ষা করেই বড় বিপদ ডেকে আনছেন।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ বার এটাই বড় সমস্যা তৈরি করছে বলে দাবি চিকিৎসকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, মাথা, গা-হাত-পা কিংবা কোমরে ব্যথা, গাঁটে যন্ত্রণা অথবা পেটের সমস্যা হলে অনেকেই উপেক্ষা করছেন। কিন্তু ভেবে দেখা প্রয়োজন, সেই উপসর্গ আচমকা শুরু হয়েছে কি না। যদি তা হয়, সে ক্ষেত্রে অহেতুক অপেক্ষা করে সময় নষ্ট না করে বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রথমেই প্যারাসিটামল বা অন্য ওষুধ শুরু করা প্রয়োজন। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘অনেকেই উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৭-১০ দিন পরে চিকিৎসকের কাছে আসছেন। ততক্ষণে শরীরে ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে। তার মোকাবিলা করতে গিয়ে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, প্রথম উপসর্গ দেখা দেওয়ার গড়ে সাত দিন পর থেকে ‘ঝড়’ শুরু হচ্ছে। আর তাতেই গুরুতর উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। অরুণাশুবাবু বলেন, ‘‘তাই উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্র চিকিৎসকের কাছে গেলে, তাঁরা কিছু পরীক্ষা করে অন্তত বুঝে নিতে পারবেন, ঝড় আসার সম্ভাবনা আছে কি না এবং এলেও তার গতিবেগ কতটা।’’

চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলা হচ্ছে ‘সাইটোকাইন ঝড়’। মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, সাইটোকাইন একটি রাসায়নিক। শরীরের কোষ সেটি তৈরি করে। দেহে যখন কোনও জীবাণু বা ভাইরাস প্রবেশ করে, তখন শরীর সেটাকে বহিরাগত বলে চিহ্নিত করে, ধ্বংস করার চেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টায় শরীরে প্রদাহ তৈরি হয়। এই প্রদাহে প্রথমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। পরে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। এই সময়েই শরীরে কিছু সঙ্কেত তৈরি হয়, যা ওই রাসায়নিকের মাধ্যমে কাজ করে। সেই রাসায়নিকের একটি, সাইটোকাইনের মাত্রা এতই বেশি হয় যে সেটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে শরীরের ভাল করতে গিয়ে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়ে যায়। অরিন্দমবাবু বলছেন, ‘‘ন্যূনতম উপসর্গ দেখা দিলেও চিকিৎসা শুরু করতে যত দেরি হবে, শরীরে জীবাণু বা ভাইরাস তত বংশবৃদ্ধি করবে। আর তার পরিমাণ যত বেশি হবে, তত বাড়বে ক্ষতির তীব্রতা।’’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘জ্বর বা গা-হাত-পা ব্যথা— কোনও একটি উপসর্গ দেখা দেওয়ার এক-দু’দিনের মধ্যে সিবিসি, সিআরপি, ডি-ডাইমার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। তাতে ঝড়ের ইঙ্গিত মিলবে, তেমনই চিকিৎসকও প্রস্তুত হতে পারবেন।’’ তিনি জানাচ্ছেন, প্রথম ৫-৮ দিন দেহে ভাইরাসটি থাকে। সেই সময়টিকে বলা হয় ‘ভাইরেমিয়া পর্ব’। তখনও জ্বর, কাশি-সহ অন্য উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পরে যখন ভাইরাসটি বেরিয়ে যায়, তখন সাইটোকাইন ঝড়ের কারণে জ্বর বেশি হতে পারে। কাশি বাড়তে পারে। দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সর্বোপরি, রোগী অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যেতে পারেন। অনির্বাণবাবু জানাচ্ছেন, আসল ভয় এই সাইটোকাইন ঝড়-পর্ব। ওই সময়টা চিকিৎসার ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জের। কারণ, সেটার কারণেই রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হচ্ছে। প্রত্যেক চিকিৎসকই তাই বলছেন, ‘‘শরীরে ঝড় ওঠার আগেই সতর্ক হতে হবে। না হলে কিন্তু আরও বড় বিপদ আসতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus COVID 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE