Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

মনের চিকিৎসায় ৬১ শতাংশ ক্ষেত্রে ধাক্কা কোভিডে

চিকিৎসাকেন্দ্র বন্ধ না-থাকা সত্ত্বেও কাউন্সেলিং রুম, ফ্যামিলি-থেরাপি, ওপিডি-সহ বিভিন্ন জায়গায় রোগীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:১৮
Share: Save:

কোভিড ১৯-এর কারণে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ তৈরি হয়েছে গত কয়েক মাসে। পাশাপাশি, এই অতিমারির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানসিক রোগের চিকিৎসাও। স্বাস্থ্য পরিষেবায় কী প্রভাব ফেলেছে বর্তমান অতিমারি, সেই সম্পর্কে বিশ্বের ১০৫টি দেশকে নিয়ে করা এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য। শুক্রবারই সেই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চ থেকে জুন— এই সময়ের মধ্যে বিশ্বের ৯০ শতাংশ দেশে নন-কোভিড চিকিৎসা পুরোপুরি ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর প্রভাব সব চেয়ে বেশি পড়েছে মধ্য এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলির চিকিৎসা পরিষেবায়।

সমীক্ষা জানাচ্ছে, মানসিক রোগের চিকিৎসা ব্যাহত হয়েছে ৬১ শতাংশ ক্ষেত্রে। এক দিকে কোভিড-১৯ যেমন জার্মোফোবিয়া (সব কিছুতেই প্যাথোজেন আছে মনে করা), ডক্টর শপিং (ঘনঘন চিকিৎসককে দেখানো)-এর প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে, অন্য দিকে যাঁদের ইতিমধ্যেই মানসিক রোগের চিকিৎসা চলছে, তাঁরা সেই চিকিৎসা করাতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে পারেননি। এই পরিপ্রেক্ষিতে মানসিক রোগের উৎকর্ষকেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব সায়কায়াট্রি’-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা জানাচ্ছেন, চিকিৎসাকেন্দ্র বন্ধ না-থাকা সত্ত্বেও কাউন্সেলিং রুম, ফ্যামিলি-থেরাপি, ওপিডি-সহ বিভিন্ন জায়গায় রোগীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘রোগীরাই আমাদের কাছে এসে পৌঁছতে পারেননি। ফলে লকডাউন-পর্বে মানসিক রোগের চিকিৎসা যে ব্যাহত হয়েছে, তা নিয়ে দ্বিমত নেই।’’

‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি’-র ফেলো তিলোত্তমা মুখোপাধ্যায় এ বিষয়ে বলেন, ‘‘টেলি কাউন্সেলিং করা হচ্ছিল বটে, কিন্তু থেরাপি বলতে যা বোঝায়, তা ভীষণ অসুবিধাজনক হয়ে উঠেছিল। ফলে যাঁরা ইতিমধ্যেই অসুস্থ ছিলেন, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।’’

মানসিক রোগের পাশাপাশি লকডাউন চলাকালীন ক্যানসার রোগীদের সমস্যার প্রসঙ্গটিও বার বার সামনে এসেছিল। সমীক্ষাতেও তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ক্যানসারের ডায়াগনসিস এবং চিকিৎসা ব্যাহত হয়েছে ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রে। ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব অঙ্কোলজি’-র প্রেসিডেন্ট সঞ্জীব মিশ্র এ বিষয়ে বলেন, ‘‘সব রোগের মতো ক্যানসারের ক্ষেত্রেও কোভিডের প্রভাব পড়েছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু তার মধ্যেই চিকিৎসাকেন্দ্রগুলি যথাসাধ্য কাজ করার চেষ্টা করেছে।’’ কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ভবিষ্যতে এমন জরুরি পরিস্থিতি এলে ক্যানসার পরিকাঠামো কী ভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন, কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে চিকিৎসা চালু রাখা যাবে— কোভিড সেই প্রয়োজন বুঝিয়েছে।’’

সমীক্ষা এ-ও জানাচ্ছে, বিপর্যস্ত হওয়া চিকিৎসার মধ্যে রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা (৭০ শতাংশ), ফেসিলিটি বেস্ড সার্ভিস (৬১ শতাংশ), নন-কমিউনিকেব্ল রোগের চিকিৎসা (৬৮ শতাংশ) ও পরিবার পরিকল্পনাও (৬১ শতাংশ) রয়েছে। অনেক দেশে আবার ম্যালেরিয়া (৪৬ শতাংশ) এবং যক্ষ্ণার চিকিৎসা (৪২ শতাংশ)

ব্যাহত হয়েছে। জীবনদায়ী জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়েছে প্রায় সব দেশে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২২ শতাংশ দেশে ২৪ ঘণ্টার জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে, রক্ত সঞ্চালন চিকিৎসা প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে ২৩ শতাংশ দেশে। আবার ১৯ শতাংশ দেশে জরুরি অস্ত্রোপচার করা যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘নন-কোভিড চিকিৎসা যে ব্যাহত হয়েছে, তা বোঝাই যাচ্ছিল। এই সমীক্ষা সেই চিত্রকেই তথ্যের মাধ্যমে সামনে তুলে ধরল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 Mental Health Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy