Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
malaria

কোভিড আবহে হতে পারে ম্যালেরিয়াও, কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

জ্বর যে শুধুই করোনার কারণে হয় তা নয়। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম আর প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স জীবাণুর সংক্রমণেও জ্বর হয়।

করোনা আবহে ম্যালেরিয়া। সতর্ক থাকুন।

করোনা আবহে ম্যালেরিয়া। সতর্ক থাকুন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:৩৭
Share: Save:

মাস্ক পরে বারবার হাত পরিষ্কার করেও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। ভাবছেন এত সাবধান হয়েও কোভিড-১৯ এর হাত এড়ানো গেল না। জ্বর যে শুধুই করোনার কারণে হয় তা নয়। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম আর প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স জীবাণুর সংক্রমণেও জ্বর হয়। অর্থাৎ ম্যালেরিয়া। এ রোগের জীবাণুকে আটকে দেওয়া খুব কঠিন নয়। স্রেফ মশারিকে সঙ্গী করে আর মশার বংশ ধ্বংস করতে পারলে ম্যালেরিয়া জ্বরের হাত এড়ানো যেতে পারে, মত চিকিৎসকদের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হিসেব অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতি বছর ১.৫ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের (আইসিএইচ) সংক্রামক রোগ চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি জানালেন যে ইতিমধ্যে আইসিএইচ-এ বেশ কিছু শিশুর শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। এঁদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। আইসিইউতে ভর্তি রেখে তাদের সুস্থ করে তোলা হয়।

প্রভাস প্রসূনবাবুর পরামর্শ, টানা জ্বর চলতে থাকলে কোভিড-১৯ এর পাশাপাশি ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গির পরীক্ষাও করিয়ে নেওয়া উচিত। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক উদয়ন মজুমদার জানালেন, উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ খুব বেশি। তবে অন্য বারের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগীরা অনেক কমই হাসপাতালে আসছেন। তার মানে এই নয় যে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। আসলে নভেল করোনা ভাইরাসের ভয়ে জ্বর হলেও রোগীরা আর হাসপাতালে আসছেন না। একই সঙ্গে দুই চিকিৎসক এ ব্যাপারে একমত যে বছর দশেক আগে যে হারে ম্যালেরিয়া হত সেই তুলনায় ম্যালেরিয়ার দাপট কিছুটা কমেছে।

আরও পড়ুন: নিউ নর্মালে নানা রোগ বাড়াচ্ছে দূষণ​

অন্য বছর এই সময় ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ খুব বেড়ে যায়। এবছরে নভেল করোনা ভাইরাসের ভয়ে অন্য অসুখ বিসুখকে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না। তবে করোনা আর ম্যালেরিয়া একসঙ্গে হয়েছে এমন রোগীও বিরল নয়। এক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা জরুরি।

যে সব উপসর্গ দেখলে সাবধান হতে হবে

আর পাঁচটা জ্বরের সঙ্গে ম্যালেরিয়া জ্বরের যে খুব একটা পার্থক্য আছে তা নয়। ঋতু পরিবর্তনের সময়টায় জ্বর হলে সাবধান হতে হবে সকলকেই। কোভিড ১৯ এর সঙ্গে সঙ্গে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গি জ্বরের ঝুঁকিও এই সময়ে অনেক বেশি। এই তিন সংক্রমণের কারণে জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গের যথেষ্ট মিল আছে। প্রধান উপসর্গ জ্বর, তাই জ্বর হলে এবং দুই থেকে তিন দিন জ্বর চলতে থাকলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ডাক্তার দেখান উচিত, বললেন উদয়ন মজুমদার।

আরও পড়ুন: সব সময় শাসন নয়, ‘স্পেস’ দিন শিশুদেরও

ম্যালেরিয়া হলে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে

• নির্দিষ্ট সময় পর পর জ্বর আসে, এবং চলতেই থাকে

• শীত শীত ভাব থাকে

• জ্বর হলে মাথা ব্যথা থাকবেই, সঙ্গে গা হাত পা ব্যথা ও শরীর ম্যাজম্যাজ করে

• গা বমি ভাব থাকে ও বমি হতে পারে

• খাবারে অরুচি

• বুকে ও পেটে ব্যথা হতে পারে

• কাশি হয় এবং সামগ্রিক ভাবে দুর্বল লাগে

অতি সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত স্টিফেন জে রজারসন, টিমোথি উইলিয়ম ও তাঁদের সহযোগীদের লেখা এক গবেষণা পত্রে জানা গিয়েছে, ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করে গত ৫ বছরে এই জীবাণু ঘটিত জ্বরের প্রকোপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বের চিকিৎসা পরিস্থিতি টলমল হয়ে পড়ায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ আবার বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে শিশু বয়স্ক ও হবু মায়েদের কোভিড-১৯ ও ম্যালেরিয়া এক সঙ্গে হলে জীবন সংশয়ের ঝুঁকি বাড়ে।

শিশুদের ক্ষেত্রে মশারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। ফাইল ছবি।

উদয়ন বাবুর মত, করোনা আবহে রোগ প্রতিরোধে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নেওয়ায় এবং উত্তরবঙ্গের মানুষ ম্যালেরিয়া জ্বরের সঙ্গে কিছুটা পরিচিত থাকায় ওই অঞ্চলে ম্যালেরিয়া কোভিড এর সাঁড়াশি আক্রমণ খুব একটা কাবু করতে পারেনি সাধারণ মানুষকে। তবে কোনও অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাওয়া ঠিক নয়, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হৃদযন্ত্রের সমস্যার ঝুঁকি থাকে। হৃদরোগীদের এই ওষুধ দেওয়া হয় না। প্রভাস প্রসূন গিরির মতে করোনাই হোক বা ম্যালেরিয়া এখনকার অতিমারি পরিস্থিতিতে জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?​

কোনও পরিস্থিতিতেই নিজেরা ওষুধ খাবেন না বলে পরামর্শ দুই চিকিৎসকের। কারণ প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম জীবাণুর সংক্রমণ হলে অনেক সময় জ্বর মাথা ব্যথার মত উপসর্গের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম), লিভার, কিডনি সহ নানা অঙ্গের কাজকর্ম ব্যাহত হয়ে রোগীর অবস্থা গুরুতর হতে পারে।

বাচ্চা ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে বয়স্কদের কো-মর্বিডিটি অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস বা হৃদরোগ থাকলে ম্যালেরিয়া বা কোনও জ্বরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ম্যালেরিয়া ডেঙ্গি-সহ যে কোনও মশাবাহিত অসুখ আটকে দেওয়ার একমাত্র উপায় মশা বিনাশ করা আর মশারিকে সঙ্গী করা। বাড়ি বা পাড়ায় কোথাও জল জমতে দেওয়া চলবে না। পাড়ার নর্দমা ও জলাশয় জাতীয় জায়গার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জনসচেতনতাই পারে জীবাণুবাহী অসুখ আটকে দিতে। দেবী পক্ষে সচেতনতাই হোক প্রত্যেকের অঙ্গীকার।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

অন্য বিষয়গুলি:

Malaria Mosquito Coronavirus COVID-19 Corona
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE