সরস্বতী পুজোর পরের দিনই শীতলষষ্ঠী। সেই দিন ঠান্ডা খাবার চল রয়েছে এ পার বাংলায়। যাঁরা শীতলষষ্ঠী পালন করেন, তাঁদের অনেকেই গোটা রান্না খান। গোটা রান্না মানে আক্ষরিক অর্থেই গোটা সব্জি রান্না। পাঁচ কিংবা সাত কিংবা ন’রকমের সব্জি ন’টি করে গোটা গোটাই দিয়ে দেওয়া হয় হাঁড়ি কিংবা কড়াইয়ে। সেই ভাবেই হয় রান্না।
গোটা রান্না করা হয় সরস্বতী পুজোর রাতে। এমন ঐতিহ্যের কারণ একটাই। যে হেতু পরের দিন ঠান্ডা খাওয়া, উনুন জ্বলবে না, তাই রান্নার পর্ব সেরে রাখা হয় আগের রাতেই।
রান্নায় নিজেদের দর বলে দাবি করেন পূর্ববঙ্গের মানুষজন। সেই তাঁরাও এ পার বাংলার ওই ঐতিহ্যকে কিছুটা হিংসার চোখে দেখেন। কারণ সরস্বতী পুজোয় পূর্ববঙ্গে গোটা রান্নার চল নেই। তাই ওই একটি দিন এ পার বাংলার বন্ধুরা যখন তাঁদের বাড়িতে ডেকে গোটা রান্না খাওয়ান বা কৌটো ভরে গোটা রান্না হাতে তুলে দেন, তাঁরা খুশিই হন। অনেকে গোটা খাওয়ার জন্য সরস্বতী পুজোর পরের দিনটির জন্য অপেক্ষা করেও থাকেন।
চাইলে অবশ্য গোটা রান্না বাড়িতেও করে নেওয়া যায়। এ পার বাংলায় অবশ্য গোটা রান্নার রকমফের আছে। কেউ গোটা রান্নায় মশলা দেন। কেউ শুধু সেদ্ধ করে খান। গোটা সেদ্ধও মশলা দিয়ে এবং মশলা ছাড়া দু’রকমের রান্নার চল আছে। তবে তার পাশাপাশি অনেকে গোটা চচ্চড়িও রাঁধেন। সেই রান্নায় ফোড়ন পড়ে। থাকে নুন-মিষ্টি, মশলার স্বাদও। শুকনো ঝরঝরে সেই গোটা চচ্চড়ি এক বার খেলে সেই স্বাদ ভোলার নয়। তাই সরস্বতী পুজো উপলক্ষে রইল সেই গোটা চচ্চড়ির রেসিপি।
কী ভাবে বানাবেন?

ছবি: সংগৃহীত।
উপকরণ:
১০০ গ্রাম সবুজ মুগ (আগের রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে সেদ্ধ করে নেওয়া)
৯টি ছোট নতুন আলু
৯টি ছোট বেগুন
৯টি শিম
৯টি কড়াইশুঁটি
৯টি কাঁচালঙ্কা
৯টি ছোট রাঙা আলু
৯টি গাজর
৯টি বিন
এক আঁটি শীষপালং
২০০ গ্রাম লাউশাক
৫-৬ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
২ চা-চামচ পাঁচফোড়ন
দেড় চা-চামচ জিরে
১ চা-চামচ গোটা ধনে
৪-৫টি শুকনো লঙ্কা
২টি তেজপাতা
এক চা-চামচ চিনি
এক চা-চামচ হলুদ
আধ চা-চামচ লঙ্কাগুঁড়ো
২ চা-চামচ নুন (স্বাদমতো বাড়িয়ে বা কমিয়ে নেবেন)

ছবি: ইজ়ি রেসিপিজ়।
প্রণালী:
প্রথমে শুকনো কড়াই আঁচে বসিয়ে ১ চা-চামচ পাঁচফোড়ন, ১ চা-চামচ জিরে, ১ চা-চামচ ধনে, একটি তেজপাতা কুচোনো, দু’টি শুকনো লঙ্কা ভাল করে নেড়ে নিয়ে একটি পাত্রে নামিয়ে রাখুন। ঠান্ডা হলে মিক্সিতে বা শিলে গুঁড়িয়ে নিন।
সমস্ত সব্জি গোটা রান্না করতে হবে। তাই ভাল করে ধুয়ে রাখুন। শীষপালং শিকড় বাদ দিয়ে গোটাও রাখতে পারেন, আবার কেটেও নিতে পারেন। লাউশাকের গোটা গোটা পাতা আলাদা করে ডাঁটাগুলো কেটে নিন।
এ বার কড়াইয়ে তেল দিয়ে তাতে একটি তেজপাতা, দু’-তিনটি শুকনো লঙ্কা, এক চা-চামচ পাঁচ ফোড়ন, আধ চা-চামচ জিরে দিয়ে ফোড়ন দিন। সুগন্ধ বেরোলে তাতে গোটা গোটা সব্জিগুলো দিয়ে ভাজুন। যে হেতু কোনও সব্জিই কাটা হবে না, তাই সেদ্ধ হতে সময় লাগবে। খুন্তি দিয়ে উল্টেপাল্টে ভাজার মাঝেমাঝে ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। কিছু ক্ষণ পরে ঢাকা খুলে সিদ্ধ শীষপালং এবং লাউশাক দিয়ে তাতে নুন, হলুদ, লঙ্কা দিয়ে নেড়েচেড়ে আবার ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিন।
রান্নায় আলাদা করে জল লাগার কথা নয় সব্জি এবং শাক থেকে বেরোনো জলেই ভাল সিদ্ধ হবে সব্জি। তবে জল যদি শুকিয়ে গেলে অল্প জল দিতে পারেন। বিশেষ করে নতুন আলু এবং গাজর সিদ্ধ হতে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। সেই বুঝে সামান্য জল দিন। কারণ গোটা চচ্চড়ি হবে মাখা মাখা। ঝোল থাকবে না। শেষে চিনি দিয়ে নাড়াচাড়া করে আবার ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। আলু এবং গাজর সেদ্ধ হয়ে গেলে উপরে আগে থেকে গুঁড়িয়ে রাখা ভাজা মশলা দু’চামচ দিয়ে সামান্য সর্ষের তেল ছড়িয়ে নাড়াচাড়া করে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন।