মডেল: নয়নিকা সরকার ছবি: জয়দীপ মণ্ডল
মুখ হবে দাগহীন, ত্বক হবে মাখনের মতো, তবেই না মেয়ে সুন্দরী! রূপকথা থেকে বাস্তব জীবন, সবেতেই নারীর সৌন্দর্যকে বিচার করা হয় এই মাপকাঠিতে। আজও ফেয়ারনেস ক্রিমের রমরমা বুঝিয়ে দেয় সৌন্দর্যের প্রাচীন সংজ্ঞাকে মুছে ফেলা যায়নি। তবে ধীরে হলেও বদলাচ্ছে চিন্তাধারা, সুন্দরকে দেখার চোখ। তাই শারীরিক খুঁত নিয়ে হীনম্মন্যতা নয় বরং সেটাই হয়ে উঠুক স্টাইল স্টেটমেন্ট!
নাকের পাশে, গালে, কপালে কালো ছোপ ছোপ মেচেতা বা মেলাসমার দাগ অনেকের মুখেই দেখা যায়। ‘‘যাঁরা নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ বা ইনফার্টিলিটির চিকিৎসার জন্য ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদের মেচেতা বেশি হয়। এ ছাড়া হরমোনের সমস্যা, অনিয়ন্ত্রিত থাইরয়েডও মেচেতার কারণ। যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে রোদে কাজ করেন, সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার না করে, তাঁরাও এই সমস্যায় পড়েন,’’ বললেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর। মেচেতা অনেকটা পাতলা চাদরের মতো। আর নাকের দু’পাশে, গালে, কপালে অনেক সময়ে বিন্দু বিন্দু কালো দাগ হয়, তাদের বলে ফ্রেকলস। ‘‘ফ্রেকলস বড়দের মতো ছোটদেরও হয়। ছোটদের ফ্রেকলস হওয়া মানে ওদের শরীরে কোনও সমস্যা হয়েছে। তাই ছোটদের ক্ষেত্রে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে,’’ বললেন ডা. ধর। যে কারণেই মুখে কালো দাগ হোক না কেন বহু মহিলা দাগ লুকোতে ব্যবহার করেন কনসিলার, ফাউনডেশন, কভার ক্রিমের মতো প্রসাধনী। অনেকে ব্যবহার করেন স্টেরয়েডজাত ক্রিম। কিন্তু দীর্ঘ দিন এ সব ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি আটকানো মুশকিল।
তবে সময় বদলাচ্ছে। শরীরের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরাই এখন লক্ষ্য। ফ্ললেস মেকআপের পথে হাঁটছেন না বিশ্বের বহু সেলেব্রিটি। মেচেতা এবং ফ্রেকলসের দাগ মেকআপে আড়াল না করে, হাইলাইট করা হচ্ছে। এমনকি দাগহীন মুখেও মেকআপের মাধ্যমে সানট্যান বা ব্রাউন স্পট তৈরি করে নিচ্ছেন! ফো ফ্রেকলস ট্রেন্ড এখন ভীষণ ইন। এর জন্য মেকআপ আর্টিস্টরা বিভিন্ন স্কিনটোনের জন্য ব্যবহার করেন ওক, মেহগনি, ব্ল্যাক, রেড শেডের পেনসিল। সেলেব্রিটি মেকআপ আর্টিস্ট ড্যানিয়েল মার্টিন মনে করেন, ফ্রেকলস তারুণ্যের প্রতীক। এতে ‘কিউট’ এবং ‘সেক্সি’ দুটো লুকই তৈরি করা যায় দারুণ ভাবে। বিখ্যাত এক পত্রিকার কভারে মেগান মার্কলের দাগ ভর্তি মেকআপহীন মুখের সাহসী ফোটোশুট সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছিল। মেগান সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর বাবা বলতেন মুখে দাগ না থাকলে সেটা অনেকটা তারাহীন রাতের আকাশের মতো!
এ ব্যাপারে আমাদের দেশের সেলেব্রিটিরাও পিছিয়ে নেই। আর খুঁত ঢাকা নয়, বরং তাকে নিজের অংশ বলে স্বীকার করে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, করিনা কপূর থেকে শুরু করে টলিউডের স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও। ‘‘সেলেব থেকে মডেল অনেকেই এখন এই পথে হাঁটছেন। ‘দাগ’ লুকিয়ে রাখার দিন শেষ। মুখে দাগ থাকলেও তা না ঢেকে সেই জায়গা হাইলাইট করা হয়। এমনকি যাঁদের মুখে দাগ নেই তাঁরাও মেকআপ করার সময় হালকা করে ফাউনডেশন দিয়ে তার পরে রেড ও ব্রাউন দিয়ে স্পট তৈরি করা হয়। ফ্ললেস না করে, ব্রাশ করা হয় আন-ইভন ভাবে। যাঁদের রং ফরসা তাঁদের জন্য ব্রাউনের সঙ্গে রেড শেড মেশাতে হয়। এই ট্রেন্ড এখন সর্বত্র,’’ বললেন মেকআপ আর্টিস্ট নবীন দাস।
এই ধরনের মেকআপ করতে হলে বিবি ক্রিম, শিয়ার ফাউনডেশন এড়িয়ে যাওয়া ভাল, এতে দাগ চাপা পড়ে যাবে। তার বদলে টি-জ়োনে একটু ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার হালকা করে মেখে নিন। চিকবোনে হালকা করে ক্রিম ব্লাশ ব্যবহার করতে পারেন এতে ফ্রেকলস হাইলাইট করা যায়।
এই ট্রেন্ডকে সমর্থন করে ডা. সন্দীপন ধর বললেন, ‘‘মেচেতা বা ফ্রেকলস ছোঁয়াচে নয়। এমনকি, একে ‘রোগ’-এর তকমাও দেওয়া যায় না। কেউ যদি এই দাগ নিজের অংশ বলে গ্রহণ করে এগিয়ে যান, তা হলে তো খুব ভাল। এটা অবশ্যই নির্ভর করে ব্যক্তিত্বের উপর।’’
মেচেতা হোক বা ফ্রেকলস, না চাইলে এর থেকে রেহাই পাওয়ার পথ আছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে ডিমেলামাইজিং ক্রিম। এ ছাড়া রয়েছে লেজ়ার ট্রিটমেন্টও। তবে প্রত্যেকেরই উচিত ত্বকের উপযোগী ভাল সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। যাঁরা বাইরে অনেকটা সময় কাজ করছেন তাঁরা দিনে চার থেকে ছ’বার, আর যাঁরা বাড়িতে রয়েছেন তাঁরাও অন্তত বার দুয়েক সানস্ক্রিন লাগাবেন। ঘরের মধ্যে থাকলেও সূর্যের ইউভি রশ্মি আমাদের শরীরে লাগে। বিশেষ করে শীতকালে, রোদ বসে থাকলে। খরচসাপেক্ষ চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যাঁরা যেতে চান না, তাঁরা রূপটানের এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো মেনে চললে দাগ হালকা হবে, পাশাপাশি ত্বকও ভাল থাকে।
তিন-চার চামচ টক দইয়ে একচামচ মধু মিশিয়ে মুখে মাখুন পনেরো থেকে কুড়ি মিনিটের জন্য। তার পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দইয়ের বদলে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী গাছের শাঁস ব্যবহার করতে পারেন।
পাতিলেবুর রসে চিনি মিশিয়ে মেচেতার দাগের উপর হালকা করে ঘষতে হবে যতক্ষণ না চিনির দানাগুলো গলে যায়।
দু’ চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারের সঙ্গে দু’চামচ জল মিশিয়ে তুলো দিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে নিন। ২০-৩০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy