সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, অর্থাৎ বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে বেশির ভাগ সময়টা বসে কাটাতে গিয়ে বাইরে খাওয়ার প্রবণতায় খানিকটা হলেও যেমন রাশ টানা গিয়েছে, তেমনই ভাত খাওয়ার পরিমাণও বেড়েছে। সেই সঙ্গে কারও ক্ষেত্রে যোগ হয়েছে খেয়ে উঠেই খানিক গড়িয়ে নেওয়ার অভ্যেস। কাজের ফাঁকে বিস্কিটের কৌটো পাশে নিয়ে মুখ চালানোর অভ্যেসও বেড়েছে কারও কারও। সেখানেও কার্বস। কার্বোহাইড্রেটকে এড়িয়ে নয়, বরং নিয়ন্ত্রণে এনেই সমাধান করা যায় সমস্যার।
বাঙালি বাড়িতে লাঞ্চ করার পরিচিত টার্ম ‘ভাত খাওয়া’। দুপুরের খাবার হিসেবে ভাত ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না বেশির ভাগ বাঙালি। কারও কারও ক্ষেত্রে সেটা পাল্টে যায় রুটিতে। ‘রাতে ক’টা রুটি খেলে?’ ডিনার করার সমার্থক। ভাত বা রুটির সঙ্গে খাওয়া পদগুলি তখন গৌণ। যদি আপনি বলেন, শুধু মাংস কিংবা ডাল-তরকারি খেয়েছেন, তা হলে বাড়ির বড়দের মনে হতে পারে, তা হলে তো খাওয়াই হয়নি!
অর্থাৎ বেশির ভাগ বাড়িতেই ডায়েটে প্রধান মিলগুলির সমার্থক হিসেবে গণ্য করা হয় ভাত কিংবা রুটিকে। তাতেও ক্ষতি নেই, যদি তা হয় পরিমাণ মতো। ভাত বা রুটি ও তার পাশে পঞ্চব্যঞ্জনেই ব্যালান্স করা দরকার পুষ্টিগত চাহিদা।
শর্করা দরকার, তবে পরিমিত
কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ডায়েট অনুসরণ করতে না হলে ডায়াটিশিয়ানরা বলেন, প্রত্যেক দিনের ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট আবশ্যিক। কারণ তা শরীরে এনার্জি জোগানের জন্য অপরিহার্য। ভাতই হোক বা রুটি, কতটা খাবেন, সেটাই আসল। কার্বস-ফ্রি ডায়েট অনুসরণ করতে গিয়ে অনেকেই নিজেদের বিপদ ডেকে আনেন অজান্তে। শরীরে গ্লাইকোজেন স্টোরেজের অভাব হলে অল্পেই হাঁপিয়ে পড়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা ডেকে আনতে পারে অন্য অসুখও। ডায়াটিশিয়ান হিনা নাফিস জানালেন, এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ যেহেতু মাছ-মাংসের তুলনায় ভাত-রুটি বেশি পরিমাণে খান, তাই কার্বোহাইড্রেটের অভাব না হলেও অনেক সময়েই প্রোটিনের অভাব দেখা যায়। আবার যাঁরা কায়িক পরিশ্রম বেশি করেন, তাঁরা নিয়মিত মাছ-মাংস-ডিম না খেলেও এক থালা ভাত কিংবা অনেকগুলো রুটিতে এনার্জি পেয়ে থাকেন। সেই ডায়েটও আবার ব্যালান্সড নয়। হিনার কথায়, ‘‘এ দেশের মানুষের কাছে কার্বোহাইড্রেট ইজ় ফুড। প্রতিটা মিলে বেশি পরিমাণে কার্ব এবং প্রোটিন কম পরিমাণে খাওয়ার ফলে বহু মানুষ প্রোটিন ডেফিশিয়েন্সিতে ভোগেন।’’
কার্ব-ফ্রি বনাম কার্ব-কন্ট্রোল
অফিস হোক বা ওয়র্ক ফ্রম হোম, বসে কাজ করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া ও ব্যায়ামের অপশন কমে যাওয়ার ফলে এই সময়ে ডায়েটে কার্ব কন্ট্রোল করা জরুরি। একেবারে কার্ব-ফ্রি ডায়েটের পরিবর্তে প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় শর্করার কন্ট্রোলড অ্যামাউন্ট বেছে নিন। যদি ৫০ গ্রাম কার্ব এবং ৫০ গ্রাম ফ্যাট শরীরে যায়, ফ্যাট বার্ন হতে বেশি এনার্জি খরচ হবে, কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে।
কিটো কিংবা কার্ব-ফ্রি ডায়েট ফলো করতে করতে অনেকে একটা সময়ে এক জায়গায় আটকে পড়েন। যার পরে শত চেষ্টাতেও ওজন আর কমতে চায় না। এর প্রধান কারণ হল, পরিমাণে অল্প খাওয়ার ফলে সেই অনুযায়ী শরীরের বিপাক হার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ক্যালরি ইনটেক কম হওয়ায় এবং মেটাবলিজ়ম রেট কমে যাওয়ায় বার্নিং প্রসেসও মন্থর হয়ে পড়ে। সেই সময়ে ডায়াটিশিয়ানরা অনেক ক্ষেত্রে সাময়িক ভাবে কঠোর ডায়েট ছেড়ে খাওয়াদাওয়ায় স্বাধীনতা দেন। এর ফলে ক্যালরি ইনটেক ও এনার্জি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেটাবলিজ়ম রেটও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন আবার ডায়েটে ফেরত যাওয়ার দাওয়াই দেওয়া হয়। এই ‘রিভার্স ডায়েট’ কখনও কখনও ফলো করেন খেলোয়াড়রাও। যে সব অ্যাথলিট এনডিয়োরেন্স স্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরাও ফলো করে কার্ব-লোডিং।
পোর্শন কন্ট্রোলই শেষ কথা
হাই-কার্ব ডায়েট, অর্থাৎ একগাদা ভাত, ডিনারে অনেক রুটি, মুখ চালানোর অপশন হিসেবে বিস্কিট... এর কোনওটিই সুঅভ্যেস নয়। যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি শর্করা শরীরে গেলে অতিরিক্ত শর্করা লিভারে সঞ্চিত হয়। তা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের অন্যতম প্রধান কারণ বলে জানালেন ডায়াটিশিয়ান হিনা। ‘‘হাই-প্রোটিন ডায়েট বা মদ্যপানের অভ্যেস না থাকা সত্ত্বেও ইদানীং ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন বহু মানুষ। এর সমাধানে পোর্শন কন্ট্রোল মাস্ট। অল্প করে বারে বারে খাওয়ার বিকল্প নেই।’’ মাঝে খিদে পেলে বাদাম, খেজুর জাতীয় ড্রাই ফ্রুটস বা স্যালাড রাখতে পারেন।
কার্বসের পরিমাণ নির্ভর করে একজনের উচ্চতা, বিএমআর ও নানা বিষয়ের উপরে। তাই কতটা খাবেন, তা আগে বিশেষজ্ঞের কাছে জেনে নিন। ভাতের সঙ্গে শত্রুতা নয়, বরং তার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এনে শুরু করতে পারেন আপনার রোজকার ডায়েট। তার সঙ্গে যদি যোগ হয় শারীরচর্চা, তা হলে তো সোনায় সোহাগা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy